প্রতীকী ছবি
রবিউল হক
বাংলা ভাষার মান রক্ষায় এদেশের বাউল, কবিয়ালদের অসীম ভূমিকা রয়েছে একথা অনস্বীকার্য। শিক্ষিত গীতিকার- শিল্পীদের বাইরেও এদেশের গ্রাম-গঞ্জের কবি-গায়েনেরাও ভাষা বিষয়ে অসংখ্য গান রচনা করেছেন। বাউল-কবিয়ালের কাছ থেকে এর কিছু নমুনা পাওয়া যায়। শাহ আবদুল করিম, পাঞ্জু সাঁই, মহীন সাঁই, কবি জসীমউদদীন তাদের মধ্যে অন্যতম। প্রখ্যাত বাউল শাহ আবদুল করিম ভাষা শহীদদের স্মরণে রচনা করেছেন-
ফেব্রুয়ারি একুশ তারিখে
সালাম বরকতের বুকে গুলি চালায় বেঈমানে।।
বাঙালির বাংলা ভাষা
এই যে তাদের মূল ভরসা
এই আশায় বঞ্চিত হ’লে কি চলে
ভারত যখন স্বাধীন হল
পাকিস্তান চলে এল
দেশ বিভক্ত করা হয় কৌশলে।
উর্দুভাষী শোষক যারা
ধর্মের ভাওতা দিয়ে তারা
বন্দী করিল পাকিস্তানে।।
আরো পড়ুন : বইমেলায় সরোজ মেহেদীর ‘মায়াজাল’
এছাড়া, বিচার গানের শিল্পী আবদুল হালিম বয়াতি ভাষার উপর ‘ভাষা-আন্দোলনের জারি’ নামে একটি দীর্ঘ জারিগান রচনা করেছেন। এতে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট থেকে শুরু করে বায়ান্নর শহীদ ও তার পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনাবলির দীর্ঘ ইতিহাস রূপায়িত হয়েছে।এ গানটিকে ভাষা-আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বললেও ভুল হবে না। কেননা রাজনৈতিক প্রসঙ্গের পাশাপাশি সামাজিক, পারিবারিক, জাতীয় ও মানবিকবোধের নানাদিক উন্মোচন করা হয়েছে এখানে। নিম্নে কিয়দংশ তুলে ধরা হলো-
‘একুশে ফেব্রুয়ারি সুপ্রভাতের কালে
জীবন মরণ খেলা আজ বাঙালির কপালে
বিশে ফেব্রুয়ারি রাত্রে থমথমে ভাব
কারো চোখে ঘুম নাই একুশের খোয়াব।।
আহম্মদ রফিক বলেন কী হবে উপায়
সরকারের চৌচল্লিশ ধারায় নিষেধাজ্ঞা রয়
আবার সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের মতে
আপোষবাদী নীতি তারা চাইয়াছেন চালাতে।।
তবে বাউল মহীন শাহ তার একটি ভাষার গানে নিজেই মার খাচ্ছেন মাতৃহারা মায়ের কাঙালের ন্যায়। তবু সপ্তরথের ব্যুহ গড়ার প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছে। গানটি নিম্নরূপ-
‘বলিহারা ধন্য ধন্য
আমার এই মাতৃবুলি সোনার তুলি
মায়ের ভরম রাখার তরে।।
যত বিপদ আসুক ওরে, গো
সপ্তরথী ব্যু গড়ে
প্রাণ বিসর্জন অভিমন্যু’।
তথ্যসূত্র
১. সাইম রানা, বাংলাদেশের গণসংগীত: বিষয় ও সুরবৈচিত্র্য, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১০০৯
১. মুসতাফা কামাল, ভাষা আন্দোলনের ডায়েরী, শতদল প্রকাশনী লিমিটেড, ঢাকা, ১৯৮৯
২. কামাল লোহানী, আমাদের সংস্কৃতি ও সংগাম, ১৫ই জানুয়ারি ১৯৯১।
এস/ আই.কে.জে