শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুরবানীর গরু বিক্রি করে হজে যাওয়ার স্বপ্ন দম্পতির

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৩:৩৯ অপরাহ্ন, ১৫ই জুন ২০২৪

#

ছবি : সংগৃহীত

অনেক যত্নে সন্তানের মতো লালনপালনে বড় হয়েছে বাহাদুর। শান্ত প্রকৃতির বাহাদুর ভাষা বোঝে গৃহকর্তা সহিদার রহমানের। তিনবেলা গোখাদ্যের পাশাপাশি বাহাদুর কলা, কমলা, আপেলসহ নানারকম ফলও খায়। এবার ঈদুল আজহায় বাহাদুরকে বিক্রি করে আগামীতে হজে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন সহিদার রহমান দম্পতি। কোরবানির হাটের জন্য প্রস্তুত করা বাহাদুরকে বিক্রি করতে দেওয়া হয়েছে আকর্ষণীয় অফার।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কল্যাণী ইউনিয়নের হরগোবিন্দ এলাকার কৃষক সহিদার রহমান। তিন বছর ধরে পরম যত্নে তার বাড়িতে বেড়ে উঠেছে বাহাদুর। প্রায় ২৮ মন ওজনের বিশাল আকৃতির বাহাদুরের দাম হাঁকানো হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। বাহাদুরকে কিনলে সঙ্গে একটি ফ্রিজ উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কোরবানির আগের দিন পর্যন্ত বাহাদুরের খাওয়া-দাওয়া ফ্রিতে করানোর ব্যবস্থাসহ ক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি সহিদার রহমানের।

সহিদার জানান, তার শখের বাহাদুরকে লালনপালনে কোনো কমতি রাখেননি। কোনোরকম মোটাতাজাকরণ খাবার ছাড়াই বাহাদুরকে সম্পূর্ণ দেশি খাবার খাইয়ে লালনপালন করা হয়েছে। ভুট্টার আটা, গমের ভুসি, ভাতসহ নিজের জমির খড় আর নেপিয়ার ঘাস রয়েছে বাহাদুরের খাদ্যতালিকায়। দৈনিক এই তালিকায় ব্যয় হয় প্রায় ৭০০ টাকা। এ ছাড়া বাহাদুর দৈনিক কলা, কমলা, আপেল খায় নাস্তার মতো। শীতকালে একবেলা আর গরমকালে তিনবেলা শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করানো হয় বাহাদুরকে।

আরো পড়ুন : ‘গরিবরা এখন তিনবেলা ভাত খায়, ধনীরা আটা খায়’

সহিদার আরও জানান, জীবনের অন্যতম বড় স্বপ্ন হজ করা। স্বামী-স্ত্রী দুজন একসঙ্গে হজে যাওয়ার নিয়ত করেছেন। তবে তার আর্থিক অবস্থা সেই স্বপ্ন পূরণ করতে যথেষ্ট নয়। এ কারণে হজে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণে প্রিয় বাহাদুরকে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। তার শখের বাহাদুর সন্তানের মতোই। তিনি নাতি-নাতনিদের জন্য বাজার থেকে ফলমূল কিনলে বাহাদুরের জন্যেও আনেন। মানুষের মতো বাহাদুর এখন ফলমূল খেয়ে অভ্যস্ত।

পরিবারের সদস্যদের কাছেও বাহাদুর অনেক প্রিয়। বাইরে থেকে এসে এক নজর না দেখে নিজ ঘরে প্রবেশ করে না কেউ। বিভিন্ন সমস্যার কারণে ১১টি গরুর মধ্যে ১০টি বিক্রি করে দিলেও বাহাদুরকে রেখে দেন সহিদার। শুধু পরিবারের গৃহকর্তাদের কাছেই বাহাদুর প্রিয় নয়। প্রতিবেশীদের কাছেও অনেক প্রিয় বাহাদুর। তাই দিনের প্রায় সব সময়ই বাহাদুরকে দেখতে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসে সহিদারের বাড়িতে।

সহিদার রহমান বলেন, আমার ছোট্ট একটি খামার ছিল। সেখানে বাহাদুরের মাসহ ১১টি গরু ছিল। বাহাদুরের মা প্রতিদিন ৩০ লিটার দুধ দিত। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে নানামুখী সমস্যায় পড়ে একে একে ১০টি গরু বিক্রি করে দিয়েছি। এখন শুধু বাহাদুরই আছে। শখের বাহাদুরকে বিক্রির মাধ্যমে স্ত্রীসহ হজে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলে শান্তি পাবেন বলেও জানান তিনি।

সহিদার রহমানের প্রতিবেশী ও তরুণ উদ্যোক্তা আমিরুল ইসলাম প্রায়ই বাহাদুরকে দেখতে সহিদারের বাড়িতে যান। কথা হলে তিনি বলেন, আদর্শ খামারি হতে হলে সহিদার রহমানের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার ও জানার রয়েছে। তিনি গরু পালনে বেশ সফল এবং যত্নবান মানুষ। আমি তাকে দেখে অনুপ্রাণিত। আমার ভালো লাগে গরুর প্রতি উনার ভালোবাসা দেখে। বিশেষ করে যখন বাজারে দেখি উনি (সহিদার) নিজের পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি তার শখের বাহাদুরের জন্যও দামি ফলমূল কিনেন, এটা সত্যিই অন্যরকম ভালোলাগা। আমি চাই গরুটি বিক্রি করে হজে যাওয়ার ইচ্ছে পূরণে তিনি সামর্থ্যবান হোন।

এস/ আই.কে.জে/


দম্পতি কুরবানী

খবরটি শেয়ার করুন