ছবি - সংগৃহীত
গত ১১ই ফেব্রুয়ারি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দুর্নীতির ধারণা সূচকের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ দুর্নীতির সূচক স্কেলে ১০০-এর মধ্যে ২৪ পেয়ে দশম স্থানে ছিল। এবার ২৩ পেয়ে অবস্থান হয়েছে ১৪তম। তার মানে, দুর্নীতির সূচকে চার ধাপ এগিয়েছে। যদিও টিআইবির বক্তব্য অনুযায়ী বাংলাদেশে দুর্নীতি কমেনি, বরং বেড়েছে। কিন্তু অন্য দেশগুলোর অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার কারণে এবার অবস্থানের উন্নতি হয়েছে। অর্থাৎ অবস্থানের উন্নতি হলেও দুর্নীতি বেড়েই চলেছে।
১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছর এই প্রতিবেদন বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনে ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। শুরুতে একটানা দুর্নীতিতে প্রথম স্থানে ছিল বাংলাদেশ। তখন সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশকে লজ্জাজনক অবস্থায় পড়তে হয়েছিল। পরবর্তীতে একটু একটু করে উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ এখন আর শীর্ষ দশের মধ্যে নেই।
দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে দুর্নীতি কিছুটা হলেও কমবে। কিন্তু বাস্তবে সেটি দেখা যাচ্ছে না। টিআইবিও সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও দখলদারি-চাঁদাবাজি বহাল রয়েছে। শুধু লোক বদল হয়েছে।’ টিআইবির বক্তব্য বাস্তবতার নিরিখে যথার্থ।
বর্তমানে বিশ্বের ১৮০টি দেশ নিয়ে দুর্নীতির সূচকের ভিত্তিতে তালিকা প্রণয়ন করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। দুর্নীতির ধারণা সূচক গবেষণায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারি খাতে দুর্নীতির ধারণার আন্তর্জাতিক তুলনা করা হয়। এই গবেষণায় শুধু সেই তথ্যই ব্যবহার করা হয়, যেগুলো আন্তর্জাতিকভাবে তুলনামূলক মূল্যায়ন করা সম্ভব। আরেকটি বিষয় হলো, এই সূচক তৈরিতে টিআইবি কোনো ভূমিকা পালন করে না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত সুবিধা বা লাভের জন্য সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার। ফলে জরিপভিত্তিক এই অনুসন্ধান কার্যক্রমে রাজনীতি ও প্রশাসনে ঘুষ দেয়া-নেয়া, সরকারি ক্রয়-বিক্রয়ে প্রভাব খাটানোর বিষয়ে ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও অন্যদের ধারণা জেনে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়।
দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান সবসময় দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার উপরের সারিতেই থাকে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তারা তখন টিআইবির সূচক প্রত্যাখ্যান করে। অন্যদিকে যখন যে দল ক্ষমতার বাইরে অর্থাৎ বিরোধী দলে থাকে তখন তারা এই গবেষণার ফলকে স্বাগত জানায়। সরকারের বিরুদ্ধে এই প্রতিবেদন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হওয়ায় এই গবেষণা পদ্ধতি নিয়ে খুব বেশি প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। এই গবেষণা শুধুই আন্তর্জাতিকভাবে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর (বর্তমানে ১৮০টি) মধ্যে তুলনামূলক মূল্যায়নধর্মী সূচকের ভিত্তিতে করা। কিন্তু তারপরও প্রতিবেদনের দৃশ্যমান প্রভাব জনজীবনে লক্ষ করা যায় না। শুধু কয়েক দিনের জন্য মিডিয়াতে হইচই কিংবা সরকার ও বিরোধী দলগুলোর কথার বাহাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
সরকার আসে সরকার যায়। কিন্তু বাংলাদেশের দুর্নীতির কোনো পরিবর্তন হয় না। দুর্নীতি বাংলাদেশের বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল, নতুন বাংলাদেশে দুর্নীতি, অনিয়ম কমবে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি হলো দুর্নীতি আরো এক পয়েন্ট বেড়েছে। দেশের মানুষ দুর্নীতি থেকে মুক্তি চায়।
আই.কে.জে/