ছবি: সংগৃহীত
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর প্রায়ই পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। রাজধানীর চারপাশের নদীগুলোসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার নদীগুলোতে বালু উত্তোলনের এক প্রকার মহোৎসব চলছে। কিন্তু এসব বন্ধে কার্যত কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয় না। সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে যখন নদীতে পানি কমে যায় তখনই বালু উত্তোলনের বাণিজ্য জোরদার হয়ে ওঠে। বালু ব্যবসা অনেকটাই বিনা পুঁজির বা স্বল্প পুঁজির ব্যবসা হওয়ার কারণে একশ্রেণির মানুষের কুনজর বেশি থাকে। ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রথমে বালু তোলা হয়, তারপর বিক্রীত বালু ট্রাক কিংবা ট্রলারে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। বালু যেহেতু নদী থেকে তোলার আগে কিনতে হয় না, তাই এই ব্যবসায় প্রচুর লাভ। বালু উত্তোলনে একটি প্রভাবশালী চক্র কাজ করে। রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের যোগসাজশে একটি চক্র গড়ে ওঠে।অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কমেনি, বরং বেড়েছে। রাজনৈতিক পালাবদলের পর শুধু হাতবদল হয়েছে। কিন্তু সিস্টেমের বদল হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি লাভবান হলেও মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটে। নদীর তলদেশ ভেঙে যায়। এতে নদীর নাব্যতা কমে তীর ধসে পড়ে। এতে করে বন্যা, জলাবদ্ধতা ও ভূমিক্ষয় বেড়ে যায়। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিনদিন বেড়েই চলছে।
নির্মাণ উপকরণ হিসাবে বালুর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। যার কারণে বালুর ব্যবহার ক্রমাগতই বাড়ছে। অন্যদিকে পলিমাটি পড়ে নদীর বুক দিনকে দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নদীগুলো নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে।এমতাবস্থায়, পরিকল্পিতভাবে নদী খনন ও ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু তুলে নদীগুলোর নাব্যতা রক্ষা করা জরুরি। এক্ষেত্রে সরকারের একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, নীতিমালা ও ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। এতে করে ক্রমবর্ধমান বালুর চাহিদাও পূরণ হবে, নদীও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
আরো পড়ুন : সকল অবৈধ গ্যাস সংযোগ অবিলম্বে বিচ্ছিন্ন করতে হবে
অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে শুধু নদীর ক্ষতি হয় তেমন নয়, নদীর কূল ভেঙ্গে মানুষের সহায়-সম্পদ, হাটবাজার, ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, রাস্তা, ব্রিজ হুমকির মুখে পড়ছে কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু প্রকাশ্য দিবালোকে এসব কাজ করলেও কেউ দেখার নেই। প্রভাবশালীরা জড়িত থাকার কারণে সাধারণ মানুষের মেনে নেয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করে। প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকার কারণেই বালু উত্তোলনকারীরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
বালু উত্তোলনের বিষয়ে আইন থাকলেও কর্তৃপক্ষকে তা প্রয়োগে খুব একটা সক্রিয় দেখা যায় না। আইনে বলা হয়েছে, 'কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কোনো বিধান লংঘন করে বালু ও মাটি উত্তোলন করলে সেই ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ব্যক্তিবর্গ বা তাদের সহায়তাকারীরা অনূর্ধ্ব দুই বছর কারাদন্ড বা সর্বনিম্ন পঞ্চাশ হাজার টাকা হতে দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। এছাড়া উক্ত অপরাধে ব্যবহৃত ড্রেজার, বালু বা মাটিবাহী যানবাহন বা সংশ্লিষ্ট সামগ্রী সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে।’ বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনকে মাঝে মাঝে অভিযান করতে দেখা যায়, তবে সেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের জেল-জরিমানা দেয়া হয়। মূল হোতারা ধরা পড়ে না। প্রশাসন যদি আইনের সঠিক প্রয়োগ করে তাহলে অবশ্যই অবৈধ বালু উত্তোলন ও ব্যবসা বন্ধ হবে।
এস/ আই.কে.জে