শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রায় অবশ্যই যা করণীয়

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১১:৩৯ অপরাহ্ন, ৩রা এপ্রিল ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

ঈদুল ফিতরে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার পালা। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করতে ঈদযাত্রায় গণপরিবহনের বিকল্প হিসেবে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যেতে অনেকেই ব্যবহার করেন মোটরসাইকেল। তবে নিরাপদে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরতে বেশ কিছু কৌশল অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন বাইকাররা।

বাংলাদেশের মহাসড়কগুলো মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ অনেক মোটরসাইকেল চালকই দ্রুতগতিতে যাতায়াত করতে বেশি পছন্দ করেন। আর এতে বাড়ছে দুর্ঘটনার শঙ্কা।

মোটরসাইকেল আরোহীরা জানান, মোটরসাইকেল আসলে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাহন। কখনো কখনো ছোটখাটো বাধাও মোটরসাইকেল চালকদের জন্য ভয়ানক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর চালকরা যদি বেপরোয়া হন, তাহলে এই যানটি অহেতুক দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে ওঠে।

এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা এবং মহাসড়কে চলাচলরত গাড়িগুলো ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কা না করায় প্রায়ই মোটরসাইকেল চালকদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য মোটরসাইকেল চালকদের অতিরিক্ত সতর্কতার প্রয়োজন পড়ে।

বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, অতিরিক্ত গতি দুর্ঘটনার মূল কারণ। তাই গতি নিয়ন্ত্রণে রেখে ও ট্রাফিক আইন মেনে মোটরসাইকেল চালাতে হবে। অবশ্যই হেলমেট ব্যবহার করতে হবে ও কোনোভাবেই এক মোটরসাইকেলে দুজনের বেশি চলাচল করা যাবে না।

কিছু বিষয়ে সতর্ক হলে এই দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল চালানোর সময় সতর্কতামূলক পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন মোটসাইকেল আরোহীরা।

ঈদে মোটরসাইকেল করে বাড়তি ফেরার সময় যেসব জিনিস খেয়াল রাখবেন-

বাইকের প্রয়োজনীয় সার্ভিসিং করতে হবে

দীর্ঘ রাইডে যাওয়ার আগে অবশ্যই অভিজ্ঞ মেকানিক দিয়ে বাইক সার্ভিসিং করিয়ে নিতে হবে। নিরাপত্তা নির্ভর করবে বাইক সার্ভিসিং করার ওপরে। দীর্ঘ একটি বাইক জার্নিতে হঠাৎ আপনার বাইকের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তেল শেষ হয়ে যেতে পারে, স্পার্ক প্লাগ কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে কিংবা টায়ার পাংচার হতে পারে।

এ রকম নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন রাস্তার মধ্যে। বাইকে আগে থেকে সমস্যা থাকলে লং রাইডে যাওয়ার সময় এ রকম বিপদে পড়তে হয়। বাইকের প্রতিটি অটো পার্টস সচল আছে কি না তা লং রাইডে যাবার আগে পরীক্ষা করা উচিত। এতে আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

প্রয়োজনীয় কাগজ

ঈদ যাত্রায় মোটরসাইকেল ও নিজের সব জরুরি নথি সঙ্গে রাখুন। টোল প্লাজাতে অযাচিত সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে সব কাগজ সঙ্গে রেখে দিন।

ভালো মানের হেলমেট 

এবার ঈদের আগে ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসময় বাইক স্লিপ কাটার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। তাই চালক এবং পিলিওন উভয়কেই ভালো মানের হেলমেট পরিধান করতে হবে। 

গতি নিয়ন্ত্রণ

অতিরিক্ত গতির জন্য অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, অতিরিক্ত গতি জীবনহানি করে দিতে পারে। তাই বাইকের গতি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখুন। পাশাপাশি গতিসীমা মেনে চলুন।

পর্যাপ্ত তেল নিন

ট্রিপ শুরু করার আগে বাইকের ট্যাংকি ভর্তি করে নিন। ফলে নিয়মিত পেট্রোল পাম্প খোঁজার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবেন। এছাড়াও যাত্রা শুরুর আগে ট্রিপ মিটার রিসেট করে নিন। এর মাধ্যমে আপনি ঠিক কত কিলোমিটার চললেন তা জানতে পারবেন।

বিরতি নিতে হবে

দীর্ঘ যাত্রায় অবশ্যই যাত্রাপথে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর বিরতি নিতে হবে। কারণ বাইক এবং শরীর দুটোরই বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে। তাই নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর ভালো জায়গা থেকে বিরতি নেয়ার চেষ্টা করুন। বিরতির সময় মোটরসাইকেলের চাকা ও ইঞ্জিন অয়েলসহ অটো পার্টস চেক করে নিন। 

খারাপ আবহাওয়ায় বা রাতে যাত্রা নয়

অনেকেই রাতে মোটরসাইকেলে যাত্রা পছন্দ করেন। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, রাতে মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস ও ট্রাকগুলো দ্রুত গতিতে চলাচল করে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। বৈরী আবাহাওয়ার মাঝেও অনেকে বাইক টুর দিয়ে থাকেন। এটি পরিহার করতে হবে। 

মনোযোগ ধরে রাখতে হবে

ঈদ যাত্রায় অবশ্যই মনোযোগ ধরে রাখতে হবে। উদাসীন বা বেখেয়ালি হলে চলবে না। মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে অনেক চিন্তা মনে খেলা করতে পারে। যেমন: সামনে কোথায় থামবেন, বাড়িতে গিয়ে কী করবেন, ঈদের পর কী করবেন, কোথায় বেড়াতে যাবেন ইত্যাদি।

তবে এটা আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যে, মহাসড়কে মনোযোগ ধরে রাখাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এবং এই মনোযোগই আপনাকে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে পারে। তাই মনোযোগে বিঘ্ন ঘটলে কিছু সময় পরপর কোথাও বিরতি নিন।

আরো পড়ুন: তরমুজ-বাঙ্গির প্যাকেট যেখানে ১০ থেকে ২০ টাকায় পাওয়া যায়

ওভারটেকিং নয়

মোটরসাইকেল চালকদের অন্যতম প্রবণতা ওভারটেকিং। কিন্তু ঘনঘন ওভারটেকের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই যতটা সম্ভব একটি নির্দিষ্ট গতিতে লেন মেনে ড্রাইভ করতে হবে।

ওভারটেকিংয়ের সময় কোনো একটি গাড়ি যদি সামান্য চাপ দেয়, তবে মোটরসাইকেল চালককে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে। তাই ঘনঘন ওভারটেকিং পরিহার করতে হবে।

লুকিং গ্লাস খেয়াল করতে হবে

ঈদের সময় মহাসড়কে গাড়িগুলো খুব দ্রুত চলাচল করে। তাই মোটরসাইকেল চালানোর সময় প্রতি মিনিটে অন্তত ছয় থেকে আটবার লুকিং গ্লাসের দিকে তাকাতে হবে।

যেকোনো সিগন্যালে, গতি কমানো বা থামার সময় মোটরসাইকেল চালকদের উচিত লুকিং গ্লাসে অবশ্যই পেছনে দেখে নেয়া। প্রয়োজনে সিগন্যাল লাইট ও হর্ন ব্যবহারের মাধ্যমে পেছনের গাড়িকে সতর্ক করা। পাশাপাশি ব্রেক লাইট কয়েকবার ফ্ল্যাশ করতে হবে।

এসি/ আই.কে.জে/


মোটরসাইকেল ঈদযাত্রায়

খবরটি শেয়ার করুন