ছবি: সংগৃহীত
নড়াইল জেলার ৩টি উপজেলায় জনপ্রিয়তা পাচ্ছে রিলে পদ্ধতিতে সরিষা চাষ। বিদ্যমান শস্য বিন্যাসের এ পদ্ধতিতে সরিষা চাষ যুক্ত করার ফলে দুই ফসলী জমিতে তিন ফসলী আবাদে রুপান্তরিত হয়েছে।
জেলা সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে চলতি মওসুমে ২ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে রিলে পদ্ধতিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ১ হাজার হেক্টর বেশি। সদর উপজেলার বীড়গ্রাম, দেভোগ, চাঁচড়া, আফরা, বাঁশগ্রাম, শাহাবাদ এলাকাসহ প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে রিলে পদ্ধতিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। বারি সরিষা-১৪, ১৭ জাত এবং বিনা সরিষা ৪ ও ৯ জাতের চাষ বেশি হচ্ছে রিলে পদ্ধতিতে। রিলে পদ্ধতি হলো রোপা আমন ধান কাটার ১০-১৫ দিন পূর্বে পাকা ধানের জমিতে সরিষার বীজ ছিটিয়ে সরিষার চাষ শুরু করা। এক্ষেত্রে পাকা ধান কাটার পর ওই ক্ষেত্রে সরিষার বীজ গজিয়ে কিছুটা বড় হয়ে যায় এবং সরিষার পরিচর্যা শুরু হয়। ৮০ থেকে ৮৪ দিনের মধ্যে রিলে পদ্ধতির সরিষা কাটার উপযোগী হয় বলে তিনি জানান।
সদর উপজেলার বীড়গ্রামের কৃষক রেবন্ত বিশ্বাস জানান, তিনি চলতি মওসুমে ৩ একর জমিতে রিলে পদ্ধতিতে সরিষার চাষ করেছেন। তার জমিতে সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। ফলনও ভালো হবে বলে তিনি আশাবাদী।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে বাতাসে দোল খাচ্ছে রিলে পদ্ধতিতে চাষ হওয়া হলুদ সরিষা ফুল। হলুদের আভায় ছড়িয়ে থাকা সরিষার ক্ষেতগুলো দেখতে প্রকৃতিপ্রেমীরা সকাল-বিকাল ভিড় করছেন। কৃষি প্রণোদনা পাওয়ায় এবং এ বছর বীজ বপনের সময় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। তাই কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি মওসুমে সরিষার চাষ বেড়েছে। জেলার ৩টি উপজেলায় ১৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৩৪৮ হেক্টর জমিতে। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবার ৪৬২ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ বেড়েছে। গত বছর সরিষার আবাদ হয়েছিল ১২ হাজার ৮৮৮ হেক্টর জমিতে।
মৌচাষীরা সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হলুদ আবরণে ঢাকা সরিষার ক্ষেত প্রকৃতির মাঝে অপরূপ সৌন্দর্যে শোভা ছড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন: মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলনের আশা কৃষকের
একাধিক সরিষা চাষী জানান, গত বছর আশানুরূপ দাম পাওয়ায় এবং কৃষি বিভাগ সরিষা চাষে প্রণোদনা দেওয়ায় চলতি মওসুমে কৃষকেরা সরিষা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। এ বছর জেলায় গত বছরের তুলনায় বেশি জমিতে সরিষার চাষ করেছেন তারা। প্রতি মণ সরিষার বাজার দর ৩ হাজার ২শ টাকা থেকে ৩হাজার ৩শ টাকা।
বর্তমানে সরিষা চাষ কৃষকের কাছে লাভজনক ফসলে পরিণত হয়েছে। সরিষা চাষে শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধি পায়।এখানকার উৎপাদিত সরিষার তেল দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণেও বড় ভূমিকা রাখবে বলে তিনি জানান।
এসি/ আই.কে.জে