ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে প্যানেল ঘোষণা করেছে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ই সেপ্টেম্বর) দিনভর সামনে আসে সাতটি প্যানেল।
এর আগে ঘোষণা করা হয়েছিল দুটি। প্যানেলের ভিপি-জিএসসহ প্রার্থীদের নাম প্রকাশিত হওয়ার পর ক্যাম্পাস এখন নির্বাচনী আলোচনায় সরগরম। তবে ভোটাররা বলছেন, শীর্ষ পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরসহ চার প্যানেলের মধ্যে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর গত ৫৯ বছরে চাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র ৬ বার। সপ্তমবারের এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ই অক্টোবর। গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল।
নির্বাচন কমিশন জানায়, ৯৩১ শিক্ষার্থী নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ৪২৯, হল সংসদে ৩৫৬ জন।
নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব অধ্যাপক এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী বলেন, আগামী রোববার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে। তারপর সোমবার খসড়া প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় রয়েছে। এ ছাড়া আগামী বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর দুপুরে প্যানেল ঘোষণা করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে প্যানেল ঘোষণা করে ইসলামী ছাত্রশিবির। তাদের প্যানেলের নাম ‘সম্প্রীতি শিক্ষার্থী জোট’। বিকেল চারটায় ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ১০ সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্যানেল ঘোষণা করে—‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’।
বিকেল সাড়ে চারটায় ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে প্যানেল ঘোষণা করে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন। বিকেল পাঁচটায় গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ নামে প্যানেল ঘোষণা করা হয়। চাকসু নির্বাচনে সংগঠন হিসেবে অংশ নিচ্ছে না গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। মাহফুজুর রহমান স্বতন্ত্রভাবেই নির্বাচন করছেন। জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের প্যানেলের নাম ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’।
প্যানেল ঘোষণার পর বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানালেন, অনেক প্যানেল থাকলেও চাকসুর শীর্ষ তিন পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে চারটি প্যানেলের মধ্যে। এগুলো হলো ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরের ‘সম্প্রীতি শিক্ষার্থী জোট’, দুই বাম সংগঠনের ‘দ্রোহ পর্ষদ’ ও ১০ সংগঠনের ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’।
কারণ, এই চার প্যানেলের শীর্ষ সম্ভাব্য প্রার্থীরা ক্যাম্পাসে পরিচিত। বিভিন্ন আন্দোলনে তারা সামনের সারিতেই ছিলেন। এমনকি ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) হাতেও বিভিন্ন সময়ে মারধরের শিকার হয়েছেন।
অবশ্য বাকি প্যানেলের শীর্ষ প্রার্থীদের বিষয়েও আগ্রহ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রার্থীর ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়ার পর ভোট দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। এ ক্ষেত্রে হয়তো দল নয়, প্রার্থীর কার্যক্রম দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তারা।
ছাত্রদলের প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন। তিনি সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রার্থী হয়েছেন ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের মো. শাফায়াত হোসেন।
ছাত্রশিবিরের প্যানেল থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সংগঠনটির চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের এমফিলের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম হোসেন। জিএস পদে লড়বেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক ও ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী সাঈদ বিন হাবিব। তাদের প্যানেল থেকে কার্যনির্বাহী সদস্যপদে লড়বেন সমাজতত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের আকাশ দাশ। তিনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী।
দুই বাম সংগঠনের ‘দ্রোহ পর্ষদ’ থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করছেন নাট্যকলা বিভাগের ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ। তিনি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক। এই প্যানেল থেকে জিএস পদে লড়বেন ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের ইফাজ উদ্দিন। তিনি ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক।
‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেল থেকে ভিপি পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বাংলা বিভাগের ধ্রুব বড়ুয়া। তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক। সম্প্রতি প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগসহ সাত দাবিতে তিনি অনশন করেছিলেন। এ ছাড়া এই প্যানেল থেকে জিএস পদে লড়বেন বাংলা বিভাগের সুদর্শন চাকমা। তিনি পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন