মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৯ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকার বাতাস দূষণমুক্ত করতে পদক্ষেপ জরুরি

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০২:৪৮ অপরাহ্ন, ২রা ডিসেম্বর ২০২৪

#

ছবি - সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকার বাতাস ধুলার আস্তরণ আর ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে বিষাক্ত হয়ে উঠছে। ভোরে হালকা শিশির জমছে, সন্ধ্যায় কুয়াশামাখা অন্ধকার। ডিসেম্বর মাস শুরু হলেও এখন শীতের দেখা নেই। ধোঁয়াশাময় তিলোত্তমা এই নগরে এখন বুকভরে শ্বাস নেওয়াই কঠিন। ঢাকা এখন প্রতিদিনই বায়ুদূষণে বিশ্ব সেরাদের কাতারে আছে।

দুই কোটির বেশি জনসংখ্যার মেগাসিটিতে বায়ুদূষণ মানুষের জন্য এক মহাবিপদ! অথচ  এমন একটি  পরিবেশগত উদ্বেগজনক ইস্যু কারোর কাছেই গুরুত্ব পাচ্ছে না।

ঢাকার বাতাসের এই অবস্থা কেন–এমন প্রশ্নের উত্তরে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নভেম্বর প্রায় বৃষ্টিশূন্য ছিল। বৃষ্টি না হওয়ায় বাতাসের আর্দ্রতা কমেছে। গাছের পাতা ঝরাও এই সময়ে শুরু হয়েছে। ফলে গাছের যে পাতা ধুলা ধরে রাখত তার হার কমে যাওয়ায় বাতাসে ধুলার মাত্রা বেড়েছে। অন্যদিকে, শীত শুরু হওয়ায় নির্মাণ কাজের গতি বাড়ছে। সাথে সাথে বাতাসে ধূলিকণাও বাড়ছে।

ঢাকার আশপাশের এলাকায় প্রায় ২০ হাজার ট্রাক বালু, ইট, সিমেন্ট, নির্মাণ এলাকার মাটি, পাইলিংয়ের কাদামাটি, রেডিমিক্স কংক্রিট পরিবহন করে। এসব ট্রাক গাবতলী, আমিনবাজার, মোহাম্মদপুর, বছিলা, আবদুল্লাহপুর, শ্যামপুর, পোস্তগোলা, পাগলা, ডেমরা, সারুলিয়া, কাঁচপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বালু ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চলাচল করে।

পরিসংখ্যান বলছে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৮০ হাজারের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। বায়ু দূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি বিষণ্নতায় ভুগছেন ৬৫ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সীরা। বায়ুদূষণ ছিল বাংলাদেশে মৃত্যু ও অক্ষমতার দ্বিতীয় বড় কারণ। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, বাংলাদেশে ২০১৯ সালে বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় ৭৮ থেকে ৮৮ হাজার মানুষ মারা গেছে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ঢাকার বায়ু শীতের শুরুতেই অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে সামনে শীত বাড়লে দূষণের তীব্রতা আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।

দৈনিক ভিত্তিতে বিশ্বজুড়ে বায়ুদূষণ পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরা সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের প্রতিবেদন বলছে, নভেম্বরজুড়ে দূষণে ঢাকা শীর্ষ দুই-তিনের মধ্যেই ছিল। সুবাতাস হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম ২.৫) যে সর্বাধিক সহনসীমা স্থির করেছে, ঢাকার বাসিন্দারা তা থেকে স্পষ্টতই বঞ্চিত। ওই মানদণ্ড অনুযায়ী, ঢাকাবাসী মাত্রাতিরিক্ত দূষণের মুখোমুখি। রাজধানীতে গড়ে পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি ডব্লিউএইচওর মানমাত্রার চেয়ে ৪০-৫০ শতাংশ বেশি আছে। নভেম্বরের শেষ দিকে বিশ্বের ১২০ শহরের মধ্যে বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। বায়ুদূষণ স্কেলে ঢাকার স্কোর ছিল ২৯১।

২০২১-২২ সালে বিশ্বব্যাংক পরিচালিত এক গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বাতাসে আন্তঃমহাদেশীয় বায়ুদূষণ (ট্রান্সবাউন্ডারি এয়ার পলিউশন) ৩০ শতাংশ, রান্নার চুলা ২৮ শতাংশ, বিদ্যুৎকেন্দ্র ২৪ শতাংশ, ইটভাটা ১৩-১৫ শতাংশ, নির্মাণকাজ ১১ শতাংশ, বর্জ্য পোড়ানো ১১ শতাংশ এবং যানবাহন ৫ শতাংশ দূষিত করছে।

দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতিতে দূষণ রোধে কেউ মাঠে নেই। আগের মতো আর রাস্তায় পানি ছিটানো হচ্ছে না। দূষণে দায়ী যানবাহন কিংবা ইটভাটা দেদারছে চলছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা অবিরামভাবে বললেও, তাদের  কথা কেউ কানে তুলছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত নেই। বায়ুদূষণ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়ের বড়ই অভাব। সবাই সমস্যার কারণ জানলেও সমাধানের পথ কারো জানা নেই। বায়ুদূষণের সংকট যে মাত্রায় সংক্রমিত হয়েছে, এখনই রাশ না টানলে বিপর্যয় অনিবার্য।

হাইকোর্ট ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তার মধ্যে নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, পানি ছিটানো এবং খোঁড়াখুঁড়ির ক্ষেত্রে দরপত্রের শর্ত মানার বিষয়গুলো ছিল। তবে সেগুলো আইনে থাকলেও বাস্তবে মানা হচ্ছে না। তাদেরকে আইন মানাতে তেমন কোনো পদক্ষেপও দেখা যাচ্ছে না। চার বছর পেরিয়ে গেলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।
 
শীত শুরু  হওয়ার আগেই বাতাসে দূষণের ঘনঘটা। এরই মধ্যে বায়ুতে দূষিত বস্তুকণার পরিমাণ এতটাই বেড়েছে, যা অস্বাস্থ্যকর, উদ্বেগজনক। দ্রুতই পরিস্থিতির দিকে নজর না দিলে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে।

আই.কে.জে/

ঢাকার বাতাস

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন