সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৯ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃত্রিম আলোর দিকে পোকারা ছুটে যায়, কিন্তু কেন?

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৫:৩৮ অপরাহ্ন, ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪

#

ছবি : সংগৃহীত

ফসলের মৌসুমের আগে–পরে বিশেষত গ্রামাঞ্চলে নানা ধরনের পতঙ্গের ওড়াউড়ির দেখা মেলে। বিশেষত, সন্ধ্যার পর আলো জ্বালবার জো থাকে না। বৈদ্যুতিক হোক বা কুপিবাতি তাকে ঘিরে নানা ধরনের পোকার ওড়াউড়ি এত বেশি হয় যে, মাঝেমধ্যে তা বিরক্তিও তৈরি করে। এমনকি শহরাঞ্চলও এর বাইরে নয়। কিন্তু কেন আসে পোকারা? সাধারণ ধারণা হলো—কৃত্রিম বাতি বিভিন্ন ধরনের পোকা বা পতঙ্গকে আকৃষ্ট করে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, আকর্ষণ নয়, বরং বিভ্রান্ত হয়ে কৃত্রিম আলোর দিকে ছুটে যায়।

আলোক উৎসের দিকে পোকাদের ছুটে যাওয়া ও তাদের ওড়াউড়ির কারণ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ‘আকর্ষণ’–কেই মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন ও ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক জানিয়েছেন—বিষয়টি আকর্ষণ নয়, বিভ্রান্তি। এই গবেষণায় তাঁরা সেন্সর ক্যামেরা, সংবেদনশীল আলোক উৎসসহ নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। এ জন্য তাঁরা কোস্টারিকার পার্বত্য অঞ্চলে কয়েক সপ্তাহ সময় কাটিয়েছেন, শত বছর পুরোনো সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যে, রাতে আলোর চারপাশে পোকারা জড়ো হয় কেন?

এই প্রশ্নের কত ধরনের উত্তর যে এসেছে আজ অবধি। কেউ বলেছেন—আলোর আকর্ষণ পোকারা জড়ো হয়। কেউ আরেকটু এগিয়ে বলেছেন, আলো নয়, আলো থেকে উৎপন্ন তাপের কারণেই আলোক উৎস ঘিরে পোকাদের এমন সমাবেশ হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক এই গবেষণায় আলোর দিকে ধাবিত পোকাদের গতির ধরন বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা বলছেন, এটা বিভ্রান্তি ছাড়া কিছু নয়। একটু স্থিতির আশায় পোকারা রাতের বেলা কৃত্রিম আলোক উৎসের দিকে ছুটতে থাকে। এটি তাদের স্থিতিশীল হতে সহায়তা করবে এমন ধারণাই তাদের সেদিকে চালিত করে।

আরো পড়ুন : গুগল প্রধান একসঙ্গে ২০টির বেশি ফোন ব্যবহার করেন!

গবেষকেরা দেখেন, আলোক উৎসটি অনেকটা কেন্দ্রের মতো কাজ করে। বিভিন্ন পতঙ্গ তাকে ঘিরে এক ধরনের কক্ষপথ অনুসরণ করে উড়তে থাকে। এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় তাদের পিঠ থাকে আলোক উৎসটির দিকে। কৃত্রিম আলো আবিষ্কারের আগে এই একই পন্থায় পতঙ্গরা ঘোরাঘুরি করত। তবে তখন তাদের কেন্দ্রটি থাকত চাঁদ–তারা ইত্যাদি।

এ বিষয়ে ইম্পেরিয়াল কলেজের বায়োপ্রকৌশল বিভাগের পোস্টডক্টরাল পর্যায়ের সহযোগী গবেষক ও আলোচ্য গবেষণা নিবন্ধের সহলেখক স্যামুয়েল ফ্যাবিয়ান ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম জানান, ‘যেকোনো পতঙ্গই আলোক উৎসকে কেন্দ্র করে তার চলাফেরার গতিপথ নির্ধারণ করে। দিনের বেলা সূর্যের বদৌলতে পুরো আকাশই আলোক উৎস হিসেবে কাজ করে। এ সময় তাদের পিঠ বা মাথা ওপরের দিকেই থাকে, যেমনটা থাকে অন্যসব প্রাণীর। কিন্তু কৃত্রিম আলোর ক্ষেত্রে বিষয়টি এমন নয়। ফলে তাকে ঘিরে আলাদাভাবে ওড়াউড়ির প্রয়োজনীয়তাটি চলে আসে।’

ফ্যাবিয়ান জানান, তাঁদের গবেষণার পরবর্তী ধাপে তাঁরা আলোক উৎসের প্রভাব বলয়টি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবেন। আলোক উৎসের টানে ছুটে আসা পতঙ্গেরা আসলে কত দূর থেকে আসে—কয়েক মিটার, নাকি কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে এই প্রভাব বলয়? এই প্রশ্নের উত্তর আজ পর্যন্ত কেউ দেয়নি। দেখা যাক, ফ্যাবিয়ানসহ এই গবেষক দলটি এর উত্তর দিতে পারে কিনা।

সূত্র : বিবিসি

এস/ আই.কে.জে




কৃত্রিম আলো বিজ্ঞানীরা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন