ছবি: সংগৃহীত
দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের ইমেরিটাস সম্পাদক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খানের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘাতকদের সঙ্গে হাত মেলানো খন্দকার মোশতাকের ‘ছায়া’ দেখছেন সাংবাদিক ও কলামিস্ট আনিসুল হক। তিনি দৈনিক প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও নামকরা সাহিত্যিক।
নাঈমুল ইসলামকে খানকে যেদিন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, সেদিনই আনিসুল হক ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ করেছিলেন যে, হাসিনার পতন আসন্ন। এ ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ সত্যও হয়েছিল বলেও তার দাবি।
তিনি বলেন, ‘ওই নিয়োগের (নাঈমুল ইসলামকে প্রেস সচিব) দুই মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই জনতার বিক্ষোভের প্রবল তরঙ্গ-অভিঘাতে শেখ হাসিনা ও তার ১৫ বছরের শাসনের লৌহদুর্গ খড়কুটোর মতো ভেসে যায় এবং তার উপলক্ষটা হয়, ওই প্রেস সচিব সঞ্চালিত একটা সাংবাদিক সম্মেলনে দুই সাংবাদিকের (একাত্তর টিভির সাবেক সাংবাদিক ফারজানা রূপা ও এটিএন নিউজের সাবেক সাংবাদিক প্রভাষ আমিন) মোসাহেবি মার্কা দুটো প্রশ্ন।’
আনিসুল হক বলেন, ‘জুন মাসের ৭ তারিখ, ২০২৪। প্রজ্ঞাপন জারি হলো, তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব হিসেবে একজন সম্পাদককে (নাঈমুল ইসলাম খান) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষুদ্র কলাম লেখক (আনিসুল হক) তা দেখে তার পত্রিকার বার্তাকক্ষে সহকর্মীদের উদ্দেশে একটা ভবিষ্যদ্বাণী উচ্চারণ করেন, হাসিনা সরকারের পতনের আর দেরি নেই। সাংবাদিক সহকর্মীরা বললেন, এটা কেন বলছেন?’
তখন আনিসুল হক বলেন, ‘বলছি, তার কারণ আছে। বঙ্গবন্ধু তার পরিবারকে বলেছিলেন, যদি কোনো বিপদ আসে, প্রথম ফোনটা করবে তোমাদের মোশতাক চাচাকে। খন্দকার মোশতাক বিদূষক হিসেবে ছিলেন সবচেয়ে এগিয়ে। এমন নয় যে, এ নতুন প্রেস সচিব খন্দকার মোশতাকের মতো ষড়যন্ত্র করবেন। কিন্তু তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একটিমাত্র যোগ্যতায়।’
আসিনুল হকের মতে, ওই যোগ্যতা হলো- ‘তিনি (নাঈমুল ইসলাম) তোষামোদি করতে পারেন সবচেয়ে বেশি। তার মানে প্রধানমন্ত্রী তোষামোদি ছাড়া অন্য কোনো কিছু গ্রহণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি শুধু তা-ই শোনেন, যা তিনি শুনতে চান। তিনি শুধু তা-ই দেখেন, যা তিনি দেখতে চান। এ অন্ধত্ব ও বধিরতা পতন ডেকে আনে।’
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন নিয়েও কথা বলেন আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘একেকটা বিদেশ সফর শেষে গণভবনে তখনকার প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) সংবাদ সম্মেলনের নামে যা হতো, তা চরম লজ্জাজনক প্রহসনে পরিণত হয়েছিল। এসব দেখা মানে ছিল নির্মল বিনোদন আর চরম উষ্মার উদ্রেক করা।’
দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি কলামে এসব কথা বলেছেন সাহিত্যিক আনিসুল হক। তার ওই লেখা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ‘ভাইরাল’ (আলোচিত) হয়েছে। নেটিজেনরা লেখাটি নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন।
অবশ্য অনেকে এটাও বলছেন, আনিসুল হক নিজেও আওয়ামী লীগের পুরো শাসনামলে দলটি ও এর নেতৃত্বে গঠিত সরকারের ‘গুণমুগ্ধ’ ছিলেন। সরকারের বিভিন্ন অন্যায়কেও তিনি বিভিন্ন সময় সমর্থন করে কলাম লিখেছেন। সরকারকে ব্রিবত করে, এমন লেখা আওয়ামী লীগের টানা দেড় দশকের শাসনামলে আনিসুল একবারও লেখেননি। ভিন্ন রাজনৈতিক পরিবেশ পেয়ে নাঈমুল ইসলাম খানের উপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন তিনি।
নাঈমুল ইসলাম খান আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার মাত্র দুই মাসেরও কম সময়ের আগে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হিসেবে নিয়োগ পান। সরকারের পতনের কারণে এ পদে তিনি থাকতে পারেননি। ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসনের পতনের পর থেকে তিনি আছেন ‘নিরাপদ দুরত্বে’, বা ‘আত্মগোপনে’।
আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ ও আমাদের সময়ের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা নাঈমুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হওয়ার আগে ছিলেন আমাদের নতুন সময় পত্রিকার ইমেরিটাস সম্পাদক।
গণঅভ্যুত্থানের পর ‘নিরাপদ দুরত্বে’ থাকা অবস্থায় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নাঈমুল ইসলাম কুমিল্লার কান্দিরপাড় মৌজার বাগিচাগাঁও এলাকায় জমি বিক্রি করেন। একটি অংশের পরিমাণ এক দশমিক ৭৫ শতাংশ ও অন্যটির পরিমাণ দুই শতাংশ বলে সূত্র নিশ্চিত করে সুখবর ডটকমকে। নাঈমুলের বিরুদ্ধেও আওয়ামী লীগের অন্যায় ও অপশাসনের পক্ষে 'ব্যাপক চাটুকারিতার' অভিযোগ আছে।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন