বুধবার, ১৬ই এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক বসছে দেড় দশক পর *** প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইবে বিএনপি *** সংলাপ শেষে স্পষ্ট হবে সরকার কতটুকু সংস্কার বাস্তবায়ন করতে পারবে: প্রেস সচিব *** ট্রাম্প আমলে বাংলাদেশ–আমেরিকার সম্পর্ক কেমন? *** বিমান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বও পেলেন শেখ বশিরউদ্দীন *** ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে ব্রিটেনকে চাপ লেবার এমপিদের *** দেশীয় সুতার ব্যবহার বাড়াতে ভারত থেকে স্থলপথে আমদানি বন্ধ *** আইপিএলে এবার সবচেয়ে বড় ছক্কা অভিষেক শর্মার *** সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ *** এশিয়ার সেরা সুপ্ত সম্ভাবনা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত

বিএনপিকে নিয়ে ভারত কী ভাবছে, যা বলছেন ভারতীয় দুই বিশ্লেষক

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১১:৩৯ অপরাহ্ন, ১৫ই এপ্রিল ২০২৫

#

নিরাপত্তা বিশ্লেষক শান্তনু মুখার্জি ও ঢাকায় ভারতের সাবেক হাই-কমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস। ছবি: সংগৃহীত

ভারতকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটা কথা চালু আছে, তারা এ দেশে এতকাল ‘সব ডিম শুধু একটি ঝুড়িতে রেখেছে’। অর্থাৎ, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিল আর দলটি হলো- গত বছরের ৫ই আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ।

দেশের পরপর তিনটি প্রশ্নবিদ্ধ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারতের ‘চোখ বন্ধ করে’ আওয়ামী লীগের সরকারকে সমর্থন দেওয়ার ঘটনা দিল্লির প্রতি বিএনপির অবিশ্বাস বদ্ধমূল করে।

বিএনপির দাবি, দলটি ‘নতজানু পররাষ্ট্রনীতি’র বিরোধী এবং যে কোনো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সমান মর্যাদার ভিত্তিতে দেখতে চায়। তাই দলটিকে ভারত-বিরোধী বলে চিহ্নিত করার কোনো 'যুক্তি' নেই।

২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটে। সেই ঘটনাপ্রবাহ বিএনপির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে বাঁকবদলের অবকাশ তৈরি করে নিঃসন্দেহে। রাজনৈতিক পালাবদল ভারতের সঙ্গে বিএনপির নতুন সমীকরণের পথ প্রশস্ত করে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

দিল্লির রাজনীতি, নিরাপত্তা বা কূটনীতির পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ভারতের বিশেষ কয়েকটি ‘দাবি’ বা ‘প্রয়োজনে’ যদি বিএনপি ইতিবাচক সাড়া দেয়, তাহলে দলটির দিকে দেশটির দিক থেকে বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে কোনো অসুবিধা থাকার কারণ নেই।

তাছাড়া বর্তমানে কোণঠাসা আওয়ামী লীগের চট করে রাজনীতর মাঠে ফেরার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এবং পরবর্তী নির্বাচনে বিএনপির ভালো ফল করার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দলই যে ভারতের জন্য এ মুহূর্তে সেরা বাজি এবং সম্ভবত একমাত্র বাজি, সেটাও তারা স্বীকার করেন। 

ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের প্রেক্ষাপট ও আগামী দিনের সমীকরণের রূপরেখা কী হতে পারে, এ বিষয়ে ‘বিবিসি বাংলা’ কথা বলেছে ভারতীয় দুই বিশ্লেষকের সঙ্গে। 

তাদের মধ্যে একজন হলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাই-কমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস। তিনি ২০১৯-'২০ সালে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই-কমিশনে দায়িত্ব পালন করেন। তার মতে, ‘বিএনপির সঙ্গে ভারতের এতোকাল কোনো যোগাযোগ ছিল না, কথাটা মোটেও ঠিক নয়। এটা একটা ভুল ধারণা!’

তিনি বলেন, ‘ধারণাটা তৈরি হওয়ার কারণ আওয়ামী লীগ লম্বা সময় ধরে ক্ষমতায় ছিল। পুরো সময়টা আমরা (ভারত) খুব স্বাভাবিকভাবে সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই ডিল করব, তাই না?’

তিনি বলেন, ‘এর মানে এ নয় যে, অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমরা (ভারত) ডিল করতাম না, বা আমাদের কোনো এনগেজমেন্ট ছিল না! বরং ভালোই ছিল। আমি নিজে হাই-কমিশনার হিসেবে অনেকবার বিএনপির নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছি। অনেকবার তাদের বলেছি, আপনারা ক্ল্যারিফাই করুন, ভারতের প্রতি আপনাদের পলিসি ঠিক কী ... এ রকম কথাবার্তা আমাদের মধ্যে অনেকবার হয়েছে।’

রিভা গাঙ্গুলি জানান, ‘তখন বাংলাদেশের তরুণ পার্লামেন্টারিয়ানদের যে ডেলিগেশন ভারতে আসতেন, তাতে বিরোধী দল ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা সবসময় থাকতেন। এটা বলা ভুল যে, আমরা তাদের (বিএনপি) সঙ্গে কথা বলতাম না বা কোনো এনগেজমেন্ট ছিল না!’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে, এখন আমার মনে হয়, বিএনপির পক্ষ থেকে যদি খুব স্পষ্ট করে শোনা যায়, ভারতের প্রতি তাদের পলিসি কী, র‍্যাদার দ্যান বারবার এক একটা ইস্যুতে আলাদা করে রিঅ্যাক্ট করার জায়গায় ... বিএনপি তাদের নীতিটা পরিষ্কার করে বললে অবশ্যই একটা কমফোর্টের জায়গা তৈরি হতে পারে!’

তিনি বলেন, ‘ডেফিনিটলি জামায়াত আর বিএনপির মতবিরোধগুলো এখন খুব স্পষ্ট। তাদের (বিএনপি) একজন বড় নেতা এটাও বলেছেন যে, কোনো অ্যালায়েন্স (জোট) হওয়া সম্ভব না। আমি নিশ্চিত যে, এ ডেভেলপমেন্টগুলো ভারত সরকার নিজেদের তরফ থেকে খুব সতর্কতার সঙ্গে দেখছে এবং অ্যাসেস করছে।'

বিবিসি বাংলা যে দু’জনের মতামত নিয়েছে, তাদের মধ্যে আরেকজন হলেন ভারতের সাবেক আইপিএস কর্মকর্তা শান্তনু মুখার্জি। তিনি ভূরাজনৈতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করছেন অনেকদিন ধরে। মরিশাসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন তিনি, বাংলাদেশও তার আগ্রহের ক্ষেত্র।

ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ ওয়াচার শান্তনু মুখার্জি বলেন, ‘রাজনৈতিক কার্যক্রম বিএনপির এখন অনেক বেড়েছে। মনে রাখতে হবে, ভারতের বিরুদ্ধে তারেক রহমান (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন) বলেছিলেন, যা কিছু চুক্তি হয়েছিল, সেগুলো বাতিল করা যাক, আবার খতিয়ে দেখা যাক!’

তার মতে, ‘ ... তারেক রহমানের মা খালেদা জিয়া (বিএনপির চেয়ারপারসন), যার অনেক ক্যারিশমা আছে, তিনি বাংলাদেশে ফিরবেন লন্ডন থেকে চিকিৎসার পর। দেশে যখন এসে যাবেন, তিনিও ক্যানভাসিংয়ে যোগ দেবেন অবধারিতভাবে– তখন পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হবে।'

শান্তনু মুখার্জির বিশ্বাস, ‘তখন খালেদা জিয়া যে বক্তৃতাগুলো দেবেন ভারতের বিরুদ্ধে, পাবলিক সেন্টিমেন্ট দেখে …আমার ধারণা যে, ভারতের বিরুদ্ধে তারা (বিএনপি) বলবে ... কেন না তাদের ধারণা ভারতকে যত ডিসক্রেডিট করা যাবে, তত তাদের ভোটের পার্সেন্টেজ বাড়বে!'

ভোটের মাঠে বিএনপি যে রাজনীতিই করুক, নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এলে তারা প্রতিবেশী ভারতকে নিয়ে অনেক ‘বাস্তববাদী মনোভাব' দেখাবে ও সিদ্ধান্ত নেবে বলে ভারতের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অনেকে মনে করেন।

শান্তনু মুখার্জি মনে করেন, ‘নির্বাচনে জিতে বাংলাদেশের ক্ষমতায় এলে বিএনপির সেই পুরনো রেকর্ড অবশ্যই বদলাতে পারে এবং ভারতও তখন উপযুক্ত সাড়া দিতে প্রস্তুত থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘পূর্বদিকে তারা (বাংলাদেশ) আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। আমরা প্রতিবেশী দেশ। সম্পর্ক সবসময়ই ভালো ছিল ১৯৭১ সাল থেকে ... যে কেউই সেখানে নির্বাচিত হয়ে আসুক আমার মনে হয়, ভারতের দিক থেকে তাদের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক থাকবেই। থাকতেই হবে। আসলে এটা তো মিউচুয়াল কনসার্ন ... তাদেরও যেমন ভারতকে দরকার, তেমনি আমরাও চাইবো একটা সুস্থ পরিবেশে থাকি।'

'আমাদের নিরাপত্তার বিষয়গুলোকে যদি অ্যাড্রেস করে দেয়, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের (ভারত) যাওয়ার মানে হয় না … কোনো কারণ দেখছি না আমি', যোগ করেন তিনি।

এইচ.এস/










 


বিএনপি

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন