ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় ভয়ঙ্কর চন্দ্রবোড়া বা রাসেল’স ভাইপার সাপের উপদ্রব বেড়েছে উদ্বেগজনকহারে। রাসেল ভাইপার নামক বিষধর সাপের আক্রমণে আতঙ্কে দিন পার করছেন জনসাধারণ। বিশেষ করে পদ্মা তীরবর্তী কয়েকটি জেলা ও চরাঞ্চলের মানুষ এই সাপের ছোবলে আক্রান্ত হচ্ছেন। চলতি বছরে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি এলাকা, বিশেষ করে পদ্মা তীরবর্তী কয়েকটি জেলা ও চরাঞ্চলে রাসেল’স ভাইপারের আক্রমণে একাধিক মানুষ মারা গেছেন।
রাসেল’স ভাইপারের বিচরণ এখন আর শুধু চরাঞ্চলেই সীমাবদ্ধ নেই। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে রাসেল’স ভাইপারভীতি।
বিষধর সাপ হিসেবে পৃথিবীতে রাসেল’স ভাইপারের অবস্থান পঞ্চম। কিন্তু হিংস্রতা আর আক্রমণের দিক থেকে এর অবস্থান প্রথম। আক্রমণের ক্ষেত্রে এই সাপ এত ক্ষিপ্র যে, ১ সেকেন্ডের ১৬ ভাগের ১ ভাগ সময়ের ভেতরে কামড়ের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে। এরা প্রচণ্ড জোরে হিস হিস শব্দ করতে পারে।
রাসেল’স ভাইপার কামড় দেওয়ার পর দংশিত স্থানে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয় এবং ফুলে যায়। সেই সাথে ঘন্টাখানেকের মধ্যে এর আশেপাশের কিছু জায়গাও ফুলে যায়।
এছাড়া সাপে কাটা অংশে বিষ ছড়িয়ে অঙ্গহানি, ক্রমাগত রক্তপাত, রক্ত জমাট বাঁধা, স্নায়ু বৈকল্য, চোখ ভারী হয়ে যাওয়া, পক্ষাঘাত, কিডনির ক্ষতিসহ বিভিন্ন রকম শারীরিক উপসর্গ দেখা যেতে পারে।
চিকিৎসকের মতে, গোখরো সাপের দংশনের গড় ৮ ঘণ্টা পর, কেউটে সাপের দংশনের গড় ১৮ ঘণ্টা পর ও চন্দ্রবোড়া (রাসেল’স ভাইপার) সাপের দংশনের গড় ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন পর রোগীর মৃত্যু হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সময়সীমার মধ্যে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা জরুরি। সাপের কামড় বা দংশনের পরে, দ্রুত অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দিলে, অ্যান্টিভেনমের অ্যান্টিবডিগুলি বিষকে নিষ্ক্রিয় করে। যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেঁচে যায়।
যা করবেন:
* শান্ত থাকুন এবং অতিদ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।
* শরীরের যে স্থানে সাপ কামড়েছে সেটি যতটা কম সম্ভব নড়াচড়া করুন। ঘড়ি বা অলঙ্কার পড়ে থাকলে তা খুলে ফেলুন।
* কাপড়ের বাঁধ ঢিলে করুন, তবে খুলবেন না।
যা করবেন না:
* কামড়ের স্থান থেকে চুষে বিষ বের করে আনার চেষ্টা করা।
* কামড়ের স্থান আরও কেটে বা সেখান থেকে রক্তক্ষরণ করে বিষ বের করে আনার চেষ্টা করা।
* বরফ, তাপ বা কোনও ধরনের রাসায়নিক কামড়ের স্থানে প্রয়োগ করা।
* আক্রান্ত ব্যক্তিকে একা ফেলে যাওয়া।
* কামড়ের স্থানের গিঁটের কাছে শক্ত করে বাঁধা। এর ফলে বিষ ছড়ানো বন্ধ হবে না এবং আক্রান্ত ব্যক্তি পঙ্গুও হতে পারেন।
* বিষধর সাপ ধরা থেকেও বিরত থাকা উচিত। এমনকি মৃত সাপও সাবধানতার সাথে ধরা উচিৎ, কারণ সদ্যমৃত সাপের স্নায়ু মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ পরও সতেজ থাকতে পারে এবং তখন তা দংশন করতে পারে।
ওআ/ আই.কে.জে/