রবিবার, ২২শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৮ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০১:২০ অপরাহ্ন, ২২শে ডিসেম্বর ২০২৪

#

ছবি : সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকায় নারীদের প্রতিদিন সকালে অফিসে যাওয়া, বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, এমনকি গৃহস্থালির নানা কাজে নগরীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যাতায়াত করতে হয়। এক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষকে গণপরিবহনে যাতায়াত করতে হয়। গণপরিবহন মানেই হচ্ছে পুরুষ, নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের চলাচলের পরিবহন। অথচ এই গণপরিবহনে নারীদের নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কিন্তু তাদের যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত বাস কিংবা অন্য কোনো পরিবহনের ব্যবস্থা নেই। যথারীতি  নারীদের গণপরিবহনের জন্য রাস্তায়-সড়কে-বাস স্টপেজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আবার সকাল-সন্ধ্যা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নারী যাত্রীদের বাসে তুলতে চান না অনেক পরিবহন কর্মচারীরা। বাসে ‘মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষিত’ কথাটি লেখা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা মানা হয় না।

বাস্তবতা হলো নারীরাও  অফিস-আদালতে চাকরি করেন, তাদেরও সময়মতো অফিসে যেতে যেতে হয়। কিন্তু এসব বিষয় গণপরিবহনের স্টাফরা মানতে চায় না। তারা সিট নাই, এমন অজুহাতে নারীদের বাসে উঠতে দিচ্ছে না।আর কোনো রকমে ভিড় ঠেলে বাসে উঠতে পারলেও নারীদের জন্য বরাদ্দ থাকে ইঞ্জিনের পাশের আসনটি, যেখানে ইঞ্জিনের তাপে বসে থাকা অনেক কষ্টসাধ্য। বাসের হেলপারদের ইচ্ছে হলে নারীদের যাত্রী হিসেবে তুললেও বাসে ওঠানোর সময় কৌশল করে নারী যাত্রীটির সঙ্গে অশোভন আচরণ করে বসে। তবু নারীরা তাৎক্ষণিক কোনোরূপ প্রতিবাদমুখর হয় না। তা ছাড়া প্রতিবাদ করলেও কেউ ভ্রুক্ষেপ করে না। এমন অসহনীয় ভোগান্তির ভেতর নারীরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কর্মস্থলসহ বিভিন্ন কর্মে যাতায়াত করছে।

যাত্রাপথে গণপরিবহনে নারীদের হয়রানির অভিযোগ নতুন নয়, এই সংস্কৃতি বছরের পর বছর চলে আসছে। বাংলাদেশে বিশেষ করে নারীরা বাস ও ট্রেনের মতো গণপরিবহনে ভ্রমণকালে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক হয়রানির সম্মুখীন হন, যার মধ্যে শ্লীলতাহানি, অশালীন মন্তব্য এবং শারীরিক আক্রমণ অন্যতম। এই সমস্যা শুধু নারী সুরক্ষা নয়, সমগ্র সমাজের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু পরিবহনব্যবস্থার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গণপরিবহনে রয়েছে নারীদের জন্য আলাদা আসনের ঘাটতি। পাশাপাশি অনেক পরিবহন রয়েছে যেখানে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন নেই। ফলে দুষ্ট লোকেরা পরিবহন খাতের এইসব দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে নারীদের স্পর্শ করার চেষ্টা করে।

আরো পড়ুন : শিক্ষার গোড়ার গলদ দূর করতে হবে

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির জরিপ অনুযায়ী, মোট ৩৬ শতাংশ কর্মজীবী নারীর ৮০ ভাগই গণপরিবহনে যাতায়াত করেন এবং তারা অধিকাংশ সময়ে হয়রানির মুখোমুখি হন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক পরিচালিত 'নারীর জন্য যৌন হয়রানি ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, 'দেশের গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় ৯৪ শতাংশ নারী মৌখিক, শারীরিক বা অন্য কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন এইডের এক গবেষণা রিপোর্টে জানা যায়, গণপরিবহনে শতকরা ৪১ ভাগ নারী যৌন হয়রানির শিকার। যৌন হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে শতকরা ৩১ ভাগ নারী গণপরিবহনে যাতায়াত বন্ধ করে দেন, যা নারীদের কর্ম, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।ঢাকা শহরের পরিবহন নিয়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সি পুরুষের দ্বারা এসব হয়রানি বেশি ঘটে। জাতিসংঘের নারী বিষয়ক একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সি মেয়েরা সবচেয়ে বেশি তাদের লক্ষ্যবস্তু হয়।

পরিবহন কর্তৃপক্ষ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে নারীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। নারীদের গণপরিবহনে নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং হয়রানি এড়াতে আইন প্রয়োগে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া দরকার। ২০১০ সালে প্রণীত 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন' এবং ২০১৯ সালের 'ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট' যৌন হয়রানিসংক্রান্ত আইন থাকলেও এর প্রয়োগ অনেক ক্ষেত্রে অকার্যকর। নারীদের এসব হয়রানির জন্য দায়ী আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব। যার ফলে অপরাধীরা প্রায়ই শাস্তি থেকে রেহাই পায়, যা তাদের একই অপরাধে জড়াতে বারবার উৎসাহিত করে।

সব ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ অতীতের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

পাশাপাশি সমান তালে তার নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা বা বাহন বাড়েনি। তাই সরকারি ব্যবস্থার পাশাপাশি বেসরকারি কোম্পানিগুলোকেও এ সমস্যা নিরসনে এগিয়ে আসতে হবে। 

এস/ আই.কে.জে


নারীর নিরাপত্তা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন