দেশ একটি অস্থির সময় অতিক্রম করছে। জনগণের জীবন অস্বস্তি ও দুঃসময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম কোনোভাবেই টানা যাচ্ছে না। নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন। জীবনযাত্রার ব্যয়ে মানুষের জীবনে এমনিতেই নাভিশ্বাস উঠেছে। সরকারের কোনো কার্যক্রমই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সার্বিকভাবে একটি ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে দেশ। বাজার ব্যবস্থাপনার স্বাভাবিক গতি ফেরাতে না পারলে মানুষের জীবনে স্বস্তি ফেরানো সম্ভব নয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাতে যে যার মতো অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে ঔষধ শিল্পও পিছিয়ে নেই।
হঠাৎ করে বেশ কয়েকটি ঔষধের দাম আবারও বাড়ানো হয়েছে। গত তিন মাসে ৫০টির বেশি ঔষধের দাম ২৯ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১১০ শতাংশ বেড়েছে অ্যানাফ্লেক্স ম্যাক্স ট্যাবলেটের দাম। আটটি ঔষধের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে ১১টির ওষুধের দাম। ১০ থেকে ৩০ শতাংশ দাম বেড়েছে ২২টির। ৯টি ওষুধের দাম বেড়েছে ৬ থেকে ১০ শতাংশ। এর মধ্যে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, চর্ম ও প্রদাহজনিত অস্ত্রোপচার-পরবর্তী ব্যথানাশক ওষুধ, ভিটামিন ওষুধ রয়েছে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলেছে, তারা মাত্র ১০টি ওষুধের দাম বৃদ্ধির অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু সুযোগ বুঝে কোম্পানিগুলো ইচ্ছে মতো দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে ২১টি ওষুধ তৈরি করছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। এ ছাড়া এসিআই, অ্যারিস্টো ফার্মা, সার্ভিয়ার ফার্মা, ইউনিমেড ইউনিহেলথ, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল, বিকন ফার্মা ও নুভিসতা ফার্মার বিভিন্ন ঔষধের দাম বেড়েছে।
আর নিত্যপণ্যের দামের মতো লাগামহীনভাবে দাম বাড়ার ফলে জিম্মি হয়ে পড়ছেন রোগীরা। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, যাদের নিয়মিত ঔষধ খেতে হয়, তাদের অবস্থা বেশি শোচনীয় হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত একেকজন রোগীর প্রতি মাসে ঔষধ খরচ দ্বিগুণ বেড়েছে। ফলে পারিবারিক অনেক কিছু কাঁটছাট করে ঔষধ কিনতে হচ্ছে।
ঔষধের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় বিপাকে পড়ছে সাধারণ মানুষ। দেশে স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যক্তির নিজের পকেট থেকে ব্যয় হচ্ছে। তাদের চিকিৎসা ব্যয়ের মোট খরচের বড় অংশ ঔষধ কিনতে ব্যয় হচ্ছে। এ অবস্থায় ওষুধের দাম বাড়ায় নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষের ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাবে। এর সার্বিক প্রভাব জনস্বাস্থ্যের ওপর পড়বে।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প মালিক সমিতির নেতারা বলেছেন, ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়া, গ্যাস-বিদ্যুতের বাড়তি দর, জ্বালানি সরবরাহ কমে যাওয়া এবং কাঁচামাল ক্রয়ে ডলার সংকট ওষুধের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারে এমনিতেই জিনিসপত্রের দাম চড়া। এর মধ্যে ঔষধের দাম বাড়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। এভাবে ঔষধের দাম বাড়লে স্বাস্থ্যসেবা খাত কঠিন সংকটে পড়বে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে ঔষধ প্রশাসন তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ অবস্থায় কোম্পানিগুলোর অধিক মুনাফা অর্জন ও দাম নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করা জরুরি। তা না হলে দেশের চিকিৎসা খাত নিম্নবিত্ত মানুষের আওতার বাইরে চলে যেতে পারে। দাম নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মকভাবে কঠোর হওয়া, নজরদারি বাড়ানোসহ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। অস্বাভাবিকভাবে ঔষধের দাম বাড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আই.কে.জে/