রাজু আলাউদ্দিন
আপনি দলনিরপেক্ষ অবস্থান থেকে যদি কিছু বলেন, আর যদি তা কোনো একটি রাজনৈতিক দলের বিপক্ষে যায়, এবং তা যাবেই; তাহলে আপনি সেই বিপক্ষ দলের শক্র। তারা চায়, আপনি এমন কিছু বলুন, যা তাদের পক্ষে যাবে। আপনি যখন দেশ ও জনগণের পক্ষে লিখবেন, আপনি হয়ে উঠবেন উভয় পক্ষের শত্রু। কারণ, তারা দেশ বা জনগণের পরিবর্তে কুকুরের মতো দলের পা চাটতে বেশি ভালোবাসে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কতোবার যে ব্রিটিশদের অনুগত বলে বদনাম কুড়াতে হয়েছে! নজরুলকে হতে হয়েছে কাফের।
অক্তাবিও পাস যখন জোসেফ স্তালিন আমলের মুক্তচিন্তার লেখক ভাবুকদের উপর নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড নিয়ে লিখলেন, তখন তাকে আখ্যায়িত করা হলো কমিউনিস্ট বিরোধী হিসেবে। যখন তিনি দেশের স্বার্থবিরোধী রাজনীতির সমালোচনা করলেন, তখন তিনি হয়ে গেলেন বিদেশি গোলাম কিংবা ডানপন্থী।
আমাদের দেশেও একই অবস্থা। আমি যখন আওয়ামী লীগের আমলের সমালোচনা করতাম, তখন আমাকে ঠাহর করা হলো স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল হিসেবে। এখন যখন প্রতিক্রিয়াশীলদের সমালোচনা করি, তখন আমাকে আখ্যায়িত করা হয় ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে। অথচ, আমি আজকের এই দিনে, ২রা আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের ফ্যাসিবাদের সমালোচনা করে লিখলাম, 'দ্বিতীয় সার্চলাইট' নামে এক প্রবন্ধ, যা প্রকাশিত হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন-এ, তখন আমাকে আওয়ামী লীগবিরোধী বলে দাগিয়ে দেওয়া হলো।
গতকালকে (শুক্রবার, ২রা আগস্ট) যখন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিলাম, তখন হয়ে গেলাম আওয়ামী ফ্যাসিবাদী। আমি যদি কোনো দলের অনুগত হতাম, তাহলে আমি কেবল একটি বদনামে আখ্যায়িত হতাম। যেহেতু ওই বর্বর অন্ধগুলোর মতো আমি নই, তাই আমি উভয় দলের দ্বারা সমালোচিত।
এতে আমার একটুও ক্ষোভ নেই, কারণ আমি জানি, এই একচোখা দালালগুলোর মতো আমি নই। ফলে, তাদের কাছে আমি গ্রহণযোগ্য হবো না। এই অপদার্থগুলোর কাছে আমার গ্রহণযোগ্য হওয়ার কোনো ইচ্ছাও নেই। আমি দল নয় দেশ, (দলের নেতা) ব্যক্তি নয়, বৃহত্তর দেশবাসীর স্বার্থের পক্ষে। বরাহ শাবকগুলো আমাকে নিয়ে অস্বস্তি বোধ করবে, এ তো জানা কথা।
লেখক: ন্যানো কাব্যতত্ত্বের জনক কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক।
খবরটি শেয়ার করুন