শুক্রবার, ২৭শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৩ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেন বারবার সিন্ডিকেটের কাছে হার মানছে সরকার?

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০১:৩০ অপরাহ্ন, ১৫ই ডিসেম্বর ২০২৪

#

খুচরা দোকানে সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন এক বিক্রেতা : ছবি - সংগৃহীত

বেশ কিছু দিন ধরে সয়াবিন তেলের বাজার নিয়ে তেলেসমাতি চলছে। বিশেষ করে দাম নিয়ে একপ্রকার লুকোচুরি খেলা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে বোতলজাত সয়াবিন তেল বাজার থেকে উধাও হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে গত ৯ই ডিসেম্বর সরকার তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দর নির্ধারণ করে। সে অনুযায়ী, বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেল কিনতে লাগবে ১৬৮ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতলে খরচ হবে ৭৯৫ টাকা। এতদিন এক লিটার বোতল ১৬০ টাকায় এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৭৬০ টাকায় পাওয়া যেত। এছাড়া পাম তেলের প্রতি লিটারের দাম ছিল ১১৮ টাকা। এখন পাম তেলের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৩ টাকা। সরকার দাম বাড়িয়ে যুক্তি হিসেবে বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের বাজারে তেলের দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। ফলে সরবরাহে আর কোনো ঘাটতি হবে না। পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও সরবরাহ সংকটের কথা বলে বাণিজ্য উপদেষ্টা পরোক্ষভাবে ব্যবসায়ীদেরই উস্কে দিয়েছেন।

কিন্তু তারপরও দেশের অনেক জায়গায় বেশি দামে খোলা সয়াবিন বিক্রি হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা বিপাকে পড়েন। প্রথম আলোর ১৩ই ডিসেম্বরের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রংপুর জেলার কয়েকটি উপজেলায় খুচরা দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এই সুযোগে  খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ৩৮ টাকা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

ভোজ্যতেল ধনী-গরিব সকলে অর্থাৎ দেশের প্রায় শতভাগ মানুষ রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহার করে থাকেন। সরকার আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিলেও আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম যেভাবে বেড়েছে দেশে তার চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম ছিল প্রতি টন ৮২৫ ডলার। পাঁচ বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩২২ ডলারে। অর্থাৎ এ সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশ।

অপরদিকে টিসিবির তথ্যমতে, এই সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশে পাম তেলের দাম বেড়েছে ৮৭ শতাংশ। পাঁচ বছর আগে খোলা পাম তেলের লিটার বিক্রি হয়েছে ৭৩ টাকায়। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৩৬ টাকায়। অর্থাৎ বাংলাদেশে পাম তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে ২৭ শতাংশ বেশি বাড়ানো হয়েছে। একই সময়ে সয়াবিন তেলের দাম প্রতি টন ৫৬৪ ডলার থেকে বেড়ে ১৪৪০ ডলার হয়েছে। অর্থাৎ দাম বেড়েছে ৬৪ শতাংশ। অপরদিকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৯৭ শতাংশ। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে এ তেল বিক্রি হয়েছিল লিটার ৮৫ টাকায়। যা এখন দাম বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬৮ টাকা। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে বাংলাদেশে সয়াবিন তেলের দাম প্রায় ৩৪ শতাংশ বেশি বাড়ানো হয়েছে।

সরকারের দাম বাড়ানোর ঘোষণার পরই  আচমকা বাজার থেকে হারিয়ে যাওয়া  তেলের বোতল দোকানে দোকানে ফিরে এসেছে। বাজারে এখন বোতলজাত সয়াবিন তেলের অভাব নেই। দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সয়াবিন কাণ্ড ঘটিয়ে নিজেরাই প্রমাণ করে দিলেন এই কারসাজিতে সরকারের থেকে সিন্ডিকেট অনেক বেশি শক্তিশালী। সংকট দেখিয়ে সরকারকে চাপে ফেলে একদিকে সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছেন, অন্যদিকে এই ক'দিন নানা অপকৌশলে ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি মূল্য নিয়েছেন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা রীতিমতো দিনদুপুরে ডাকাতি ছাড়া আর কিছু নয়। প্রকৃতপক্ষে তেলের কোনো সংকটই ছিল না। প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সরকারকে জিম্মি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে। যদিও এ দেশে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। অতীতেও এমন ঘটনা বারবার ঘটেছে।

বাংলাদেশে মূলতঃ কয়েকটি বড় কোম্পানি ভোজ্যতেল আমদানি ও বাজারজাত করে। তাদের হাতেই পুরো বাজার ব্যবস্থা জিম্মি। সিন্ডিকেট চক্র ভোক্তাদের জিম্মি করে দাম বাড়ানোর যে সংস্কৃতি চালু রেখেছে, এবারও তারা সফল হয়েছে। বারবার সরকার সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় হয়ে পড়লে জনগণের তো কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে না।

আই.কে.জে/  

সয়াবিন তেল

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন