মঙ্গলবার, ১৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাত কলেজ নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৫:৩০ অপরাহ্ন, ১লা ফেব্রুয়ারি ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা রাজধানীর সাতটি বড় সরকারি কলেজকে (ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। তখন ভালো মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বরং শুরু থেকেই নতুন নতুন সমস্যা সামনে এসেছে। শিক্ষা বিষয়ক নানাবিধ সমস্যার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কিছু কিছু অবহেলার কারণে একটা সময় ইগো প্রবলেম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এমন অবস্থায় এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থেকে বের হয়ে তাদের জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি করে এসেছিল। কিন্তু তারা স্পষ্ট করে বলেছে, কোনোভাবেই আগের মতো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যাবেন না। এসব নিয়ে বেশ কয়েক দিন আন্দোলন চলছিল, যা এক পর্যায়ে সংঘাতে রূপ নেয়।

শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত কলেজকে পৃথক করার সিন্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি করা হবে না। পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে ২০২-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম পরিচালনার সুপারিশ করা হয়েছে। 

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা সরকারি কলেজগুলোকে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় রাজধানীর সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এসব কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। এক হাজারের বেশি শিক্ষক রয়েছেন।

আরো পড়ুন : নির্মাণসামগ্রী ব্যবসায় ধস, দ্রুত শুরু করতে হবে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো

একসময় কলেজগুলো মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই চলতো। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর চাপ কমাতে ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে কলেজগুলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠার সময়ে দেশে কলেজের সংখ্যা কম ছিল। পরে কলেজের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর পড়াশোনার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বাস্তবতা ও চাহিদার মধ্যে সমন্বয় না করেই দীর্ঘদিন ধরে ঢালাওভাবে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কলেজে স্নাতক (সম্মান) চালু করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ কলেজেই উচ্চশিক্ষায় পড়ানোর মতো পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। সেজন্যই কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথকের দাবি অনেক দিনের। তাদের দাবি পৃথক স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার এক মাসের আল্টিমেটাম দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা রাতারাতি সম্ভব নয়, শিক্ষার্থীদের এই বাস্তবতা মানতে হবে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধি ও আইন তৈরি করতে হবে। স্থান নির্ধারণ, শিক্ষক নিয়োগসহ আরো অনেক বিষয় আছে। এছাড়া আর্থিক বিষয় তো রয়েছেই। আর এই সাত কলেজে প্রায় দু’লক্ষের মতো শিক্ষার্থী আছে। এতো শিক্ষার্থীদের বিষয় একটি ঘোষণা দিলেই বাস্তবায় সম্ভব নয়। এখন একটি জটিল সমস্যা তৈরি হয়েছে। একটি টেকসই সমাধান করতে সময়ের প্রয়োজন হবে।

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ও পরীক্ষার ক্ষেত্রে যেন কোনো সমস্যা বা জটিলতা না হয় সেটা শিক্ষামন্ত্রণালয়কে নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এস/ আই.কে.জে/   


সাত কলেজ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন