শনিবার, ১লা ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৯শে মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্মাণসামগ্রী ব্যবসায় ধস, দ্রুত শুরু করতে হবে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১১:২৬ অপরাহ্ন, ৩১শে জানুয়ারী ২০২৫

#

ছবি- সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এক প্রকার থমকে গেছে। চালু প্রকল্পগুলোও ধীর গতিতে চলছে। এ কারণে দেশের রড-সিমেন্ট খাতে মন্দা দেখা দিয়েছে। রড-সিমেন্টসহ নির্মাণ খাতের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। চাহিদা হ্রাস, উৎপাদন খরচ ও কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিসহ বহু সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে নির্মাণ খাত।

নির্মাণসামগ্রী ব্যবসার ধসের প্রধান কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হওয়াকে দায়ী  করছেন।কারণ, দেশের মোট ১ লাখ ২০ হাজার টন উৎপাদিত ইস্পাতের প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যবহৃত হয় সরকারি প্রকল্পে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে যা ব্যবহৃত হয়, সেগুলোও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় থমকে আছে।অবকাঠামো উন্নয়ন থেমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে, স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বাদ দেয়া হয়েছে।যার কারণে সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের উন্নয়ন কাজে চরম স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করা না হলেও বেশিরভাগ চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা আত্মগোপনে রয়েছেন।

নির্মাণ শিল্পের এ খাতের ভরা মৌসুমেও ক্রেতাদের কাছ থেকে আসছে না কাঙ্ক্ষিত সাড়া।ফলে চাহিদা ও উৎপাদনের গ্রাফ দুটিই এখন নিম্নমুখী।ব্যবসায়ীদের দাবি সরকারি-বেসরকারি বড় এবং মাঝারি নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ থাকায় এবং নতুন কোনো প্রকল্প শুরু না করার প্রভাব পড়েছে এ খাতে।এ অবস্থা চলতে থাকলে এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা চরম সংকটে পড়বেন।

উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যমতে, বর্তমানে রড বিক্রির অবস্থা খুবই করুণ। রড তৈরি কারখানা মালিকদের কারোরই অবস্থা ভালো নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হবে না; ততদিন এ অবস্থা চলতেই থাকবে। একই অবস্থা সিমেন্ট খাতেও। যার প্রভাব পড়েছে উৎপাদন ও বিক্রিতে। বর্তমানে বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। 

বছরের প্রথম তিন মাসকে নির্মাণশিল্পের ভরা মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এ সময়ে পুরো বছরের রড ও সিমেন্টের মোট চাহিদার ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ বিক্রি হয়। মৌসুমকে মাথায় রেখেই উৎপাদন ও বিপণন পরিকল্পনা তৈরি করে রড-সিমেন্ট তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু এবার নির্মাণ মৌসুম শুরু হওয়ার আগে চাহিদা পতনের কারণে শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে কমেছে উৎপাদনও। সরকারি-বেসরকারি উভয় ধরনের নির্মাণকাজে স্থবিরতার কারণে পণ্যটির দাম গত পাঁচ বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছে।

উৎপাদিত পণ্য বিক্রি না করে দীর্ঘদিন রেখে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, এতে রড়ের গায়ে দাগ পড়ে যাওয়ার ফলে পণ্যের দামও কমে যায়। একই সাথে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি না করে রেখে দিলে ব্যাংকের সুদ যোগ হবে। তাই লোকসান হচ্ছে দেখেও ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য  হন।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, যদি সরকার নির্মাণ খাতে পুনরায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে ও মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু হয় তবে রড ও সিমেন্টের বাজার স্থিতিশীল হবে।

সরকার পরিবর্তনের পর নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত বেশিরভাগ ঠিকাদার গা-ঢাকা দিয়েছেন। অপরদিকে ব্যাংকের ঋণের বিপরীতে সুদের হার বেড়েছে, বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়ও। কিন্তু চাহিদা কমে যাওয়ায় বাড়তি ব্যয় সমন্বয় করা যাচ্ছে না। ফলে এই শিল্পকে এখন টিকিয়ে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আই.কে.জে/         


নির্মান সামগ্রী

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন