ছবি : সংগৃহীত
যানজট এড়িয়ে স্বল্প সময়ে দূরে যেতে দেশের ধনী ব্যক্তিদের অনেকেই এখন হেলিকপ্টার ব্যবহার করছেন। দিন দিনই তাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই আকাশ পরিবহনটি। ঈদের সময়েও অনেকে হেলিকপ্টার ভাড়া করে বাড়ি যান। বিয়ে-শাদীতেও একটু ব্যতিক্রমী আয়োজন করতে হরহামেশা ব্যবহৃত হচ্ছে আকাশ পথের এই বাহনটি।
দেশে তৈরি পোশাক শিল্পের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী এবং ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য একে আজাদ এক বছর আগেও মাসে এক-দুবার গাড়ি করেই তার কারখানাগুলো পরিদর্শনে যেতেন। এখন হেলিকপ্টারে চলাচল করায় তিনি একদিনে পাঁচ কারখানায় যেতে পারেন।
একে আজাদ একটি গণমাধ্যমকে বলেন, 'যানজট ও রাস্তার বেহাল দশার কারণে গাড়িতে যাওয়া-আসা করলে দিনে মাত্র এক কারখানায় যেতে পারি। হেলিকপ্টারে দিনে পাঁচ কারখানা ঘুরে আসা যায়। তাই এখন হেলিকপ্টার বেশি ব্যবহার করছি।'
সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে তিনি প্রথমে গাজীপুরের কালীগঞ্জ ও মাওনা, পরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের কারখানা এবং সবশেষে আশুলিয়া ও টঙ্গীর কারখানায় যান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আসা বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের প্রায়ই যানজটে পড়তে হয় বলে অনেকে ঢাকার বাইরে যেতে হেলিকপ্টারকেই বেছে নিচ্ছেন।
ঢাকা থেকে দূরে রংপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেট এবং ঢাকার কাছে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, টঙ্গী বা ময়মনসিংহের কারখানায় যাওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের অনেকে নিয়মিত হেলিকপ্টার ব্যবহার করছেন।
ব্যবসায়ীদের অনেকে যাতায়াতের জন্য অন্য প্রতিষ্ঠানের হেলিকপ্টার ভাড়া নেন। অনেক প্রবাসী হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে দেশের অন্যান্য এলাকায় তাদের বাড়িতে যাওয়া-আসা করেন। কেউ বিয়ের জন্য, আবার কেউবা নিছক ভ্রমণের জন্য হেলিকপ্টারে চড়েন। নিজ নিজ এলাকা পরিদর্শনের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কেউ হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন। এসব কারণে দেশে হেলিকপ্টারে যাতায়াতের চাহিদা বাড়ছে।
১৯৯৯ সালে সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স দেশে প্রথম বাণিজ্যিক হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু করে। বাড়তি চাহিদার কারণে ১০টির বেশি প্রতিষ্ঠান এখন ৩৬টি হেলিকপ্টার পরিবহনের কাজে ব্যবহার করছে। ভাড়ায় হেলিকপ্টার পরিষেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোয় কাজ করছেন প্রায় ৪০০ জন।
হেলিকপ্টার পরিষেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনস, মেঘনা এভিয়েশন, বেক্সিমকো এভিয়েশন, ইমপ্রেস এভিয়েশন, স্কয়ার এয়ার, আরএন্ডআর এভিয়েশন, বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস, বিসিএল এভিয়েশন, বসুন্ধরা এয়ারওয়েজ ও বিআরবি এয়ার।
সাধারণত বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অনেকে পাইলট হিসেবে কাজ করেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
হেলিকপ্টার সার্ভিস প্রোভাইডারদের তথ্য অনুসারে, অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) দিয়ে দেশের যেকোনো জায়গায় হেলিকপ্টারে যেতে প্রতি ঘণ্টায় ৭০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়।
মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মেঘনা এভিয়েশন ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পরের বছর থেকে প্রতিষ্ঠানটির কারখানাগুলোয় ব্যবসায়িক অতিথিদের আনা-নেওয়া শুরু করে। পরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জরুরি উদ্ধার কাজ ও ভাড়ায় পরিবহনের জন্য হেলিকপ্টার পরিষেবা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
এর ছয় হেলিকপ্টারের মধ্যে একটি নতুন ডাবল ইঞ্জিনের বেল-৪২৯, একটি এক ইঞ্জিনের বেল-৪০৭জিএক্স ও রবিনসন-৬৬। এই খাতে তাদের বিনিয়োগ ২০০ কোটি টাকা।
মেঘনা এভিয়েশনের ম্যানেজার (অপারেশন অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস) মঞ্জুর আলম জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান যখন চালু হয় তখন মাসে ২০ থেকে ২৪ ফ্লাইট চালানো হতো। প্রতিষ্ঠানটি এখন মাসে ৭০ থেকে ৮০টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। দেশের যেকোনো জায়গায় হেলিকপ্টারে যেতে ঘণ্টায় ৭০ হাজার থেকে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ হয় জানিয়ে রনি রেজা আরও বলেন, 'ঢাকা শহর ও পদ্মা সেতু ভ্রমণ, বিয়ের ট্রিপসহ অন্যান্য ট্রিপে আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে দারুণ সাড়া পাচ্ছি।'
তিনি বলেন, 'মালিকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিদেশি ক্রেতাদের পোশাক কারখানায় নিয়ে যেতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন। অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও যাতায়াতের জন্য হেলিকপ্টার নেন।'
নয়টি হেলিকপ্টার থাকা সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনসের হেড অব ফ্লাইট অপারেশনস হুমায়ুন নাসির জানান, বেশ কয়েকটি করপোরেট গ্রুপ তাদের কাছ থেকে হেলিকপ্টার পরিষেবা নেন। যখন তাদের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়, তখন মাসে দুয়েকটি ফ্লাইট ছিল। কয়েক মাস কোনো ফ্লাইট ছিল না। এখন দিনে গড়ে সাত থেকে আটটি ফ্লাইট চলাচল করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আই.কে.জে/
খবরটি শেয়ার করুন