সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৯ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমারী পূজার ইতিহাস ও মাহাত্ম্য

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৬:২০ অপরাহ্ন, ১১ই অক্টোবর ২০২৪

#

ছবি- সংগৃহীত

চন্ডী শাস্ত্রতে বলা হয়েছে, ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।। যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।’ কুমারী পূজার দার্শনিক তত্ত্ব হলো- নারীতে পরমার্থ দর্শন ও অর্জন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে প্রতিনিয়ত যে ত্রিশক্তি (সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়) ক্রিয়া সাধিত হচ্ছে তা ত্রিবিধ শক্তি আকারে কুমারীতে নিহিত। কুমারী নারী শক্তির প্রতীক। তাই কুমারী নারীকে দেবীভাব মনে করে পূজা করা হয়। দুর্গাপূজার মহাষ্টমীর শেষে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তবে অনেক সময় নবমী পূজার দিনও এ পূজা অনুষ্ঠিত হতে পারে। শাস্ত্রমতে, বানাসুর বধ করার মধ্যদিয়ে কুমারী পূজা শুরু হয়।বানাসুরের অত্যাচারে একসময় দেবগণ স্বর্গ-মর্ত্যের অধিকার হারিয়ে মহাকালীর শরণাপন্ন হন। তখন দেবগণের আহবানে সাড়া দিয়ে দেবী পুনর্জন্মে কুমারী রূপে জন্ম নিয়ে বানাসুরকে বধ করেন। এরপর থেকে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়।

কুমারী হলো শুদ্ধ, পবিত্রতার প্রতীক। অনধিক ষোল বছরের কুমারী মেয়েকে পূজা করা হয়। বিশেষত দুর্গাপূজার অঙ্গরূপে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। কুমারী পূজায় কোনো জাতি, ধর্ম ও বর্ণভেদ নেই। দেবীজ্ঞানে ষোল বছরের নিচে যে কোনো কুমারীই পূজনীয়। এক্ষেত্রে এক থেকে ষোলো বছর বয়সী যে কোনো কুমারী মেয়ের পূজা করা যায়। বয়সের ক্রমানুসারে পূজাকালে এই সকল কুমারীদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়, যেমন-সন্ধ্যা, সরস্বতী, ত্রিধামূর্তি, কালিকা, সুভগা, উমা, মালিনী, কুষ্ঠিকা, কালসন্দর্ভা, অপরাজিতা, রূদ্রাণী, ভৈরবী, মহালপ্তী, পীঠনায়িকা, ক্ষেত্রজ্ঞা, অন্নদা বা অম্বিকা।

১৮৯৮ সালে কাশ্মীর ভ্ৰমণকালে স্বামী বিবেকানন্দ প্রথম কুমারী পূজা করেন। তখন তিনি এক মুসলমান মেয়েকে কুমারীপূজা করেছিলেন। শাস্ত্ররীতিতে ব্রাহ্মণ কন্যাকেই কুমারীপূজা করার কথা বলা হলেও সমস্ত রীতির উর্ধ্বে গিয়ে তিনি একজন মুসলমান কন্যাকে পূজা করেছেন। স্বামীজি ১৯০১ সালে কলকাতার বেলুড় মাঠে ৯ জন কুমারীকে পূজা করেন।তিনি জাতপাতের উর্ধ্বে দেবী দর্শন করেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, দেবীত্ব কেবল ব্রাহ্মণত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় সকলের মধ্যেই আছে।স্বামীজির দিব্যদৃষ্টিতে সকল কুমারীই দেবীর একই রূপ।স্বামীজি পূজার মাধ্যমে সমাজকে বার্তা দিয়েছেন

স্বামীজি এই পূজার দ্বারা যেন একটা নূতন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। সমস্ত নীতির উর্ধ্বে গিয়ে তিনি সৃষ্টি করেছিলেন এক নতুন নীতি। তিনি কুমারী পূজার মধ্য দিয়ে নারী জাতির প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা নিদর্শন করেছেন।শুধু তাই নয়, বর্তমান কালে দুর্গাপূজার সময় যে জীবন্ত কন্যাকে কুমারীপূজা করা হয়, স্বামীজি বিবেকানন্দই তার আবিষ্কারক।

আই.কে.জে/

কুমারী পূজা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন