ছবি: সংগৃহীত
দেশের রপ্তানি খাতে বড় ধরনের হুমকি তৈরি হয়েছে। বহির্বিশ্বের নানামুখী চাপের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে রপ্তানিতে সংকট তৈরি হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত স্থলপথে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের উপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছেন, যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এর সমাধানে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চললেও এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চলছে। নানা কারণে বৈশ্বিক অস্থিরতায় ইউরোপের ক্রেতারা নতুন অর্ডার নিয়ে সংশয়ে আছেন। বহির্মুখী এসব চাপের পাশাপাশি দেশে অভ্যন্তরীণ কিছু সংকট আছে। ঘরে-বাইরের সংকটে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
ভারতের দিক থেকে স্থলপথে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে সংকট গভীরতর হচ্ছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণাটি বহাল থাকলে গার্মেন্টস শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ট্রাম্পের শুল্কনীতি, মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের কারণে সারা বিশ্বের বাণিজ্য পরিবেশে যখন চরম অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সে সময় ভারত–বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর পরস্পরের স্বার্থে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও নিবিড় করা প্রয়োজন ছিল।
অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে এর উল্টো চিত্রটাই আমরা দেখতে পাচ্ছি। এতে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষই ভুক্তভোগী হচ্ছেন। ভারতের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের মধ্যে যে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে, তা আমলে নিয়ে সরকারকে অবশ্যই উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির বিকল্প বাজার খোঁজাও জরুরি। আমরা মনে করি, আলোচনা ও কূটনৈতিক উদ্যোগই সংকট উত্তরণের সবচেয়ে সেরা পথ।
গত এপ্রিল মাসে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করলেও, তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়। হোয়াইট হাউস তখন জানায়, এ সময়ের মধ্যে দেশগুলো আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে আলোচনায় বসবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যার আন্তর্জাতিক পরিচিতি এবং নেটওয়ার্ক বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৭ই জুলাই তাকে সরাসরি একটি চিঠিও দিয়েছেন, যা তিনি নিজেই ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ প্রকাশ করেছেন। সেই চিঠিতে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, যদি বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়, তবে ১লা আগস্ট থেকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে।
এ প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে—ড. ইউনূসের মতো একজন আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব যখন সরকারের প্রধান নির্বাহী পদে রয়েছেন, তখন কেন তার সেই পরিচিতি ও প্রভাবকে ব্যবহার করে আমেরিকার সঙ্গে একটি ইতিবাচক চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি বা হচ্ছে না?
এ সংকট কেবল ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নীতির ফল নয়, এটি আমাদের কূটনৈতিক প্রস্তুতির অভাব ও বাণিজ্যিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার দুর্বলতার প্রতিফলন। বাংলাদেশ সময়মতো আমেরিকার সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি আলোচনায় বসতে পারেনি এবং আজ তার চড়া মূল্য দিতে হতে পারে আমাদের তৈরি পোশাক খাতকে, যেখানে লাখো শ্রমিকের জীবন-জীবিকা জড়িয়ে আছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্ভর করে আন্তরিকতা, স্বচ্ছতা ও কৌশলের সমন্বয়ের ওপর। দেরিতে হলেও এখন আমাদের উচিত জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত ও বাস্তবভিত্তিক আলোচনায় নামা। কারণ, একবার আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হয়ে গেলে তা পুনরুদ্ধার করা শুধু কঠিন নয়, সম্ভবত অসম্ভবও।
খবরটি শেয়ার করুন