পাকিস্তানের জাফর এক্সপ্রেস ট্রেন। ছবি: দ্য ইনডিপেনডেন্ট
পাকিস্তানের জাফর এক্সপ্রেসে আবারও ভয়াবহ বোমা হামলা হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ই অক্টোবর) দেশটির সিন্ধ প্রদেশের সুলতান কোট রেলস্টেশনের কাছে ওই বিস্ফোরণে ট্রেনটির চারটি বগি লাইনচ্যুত হয় এবং অন্তত সাতজন আহত হন।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় পাঁচ পাউন্ড ওজনের ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস রেললাইনে পেতে রাখা হয়েছিল। কোয়েটাগামী ট্রেনটি তখন পেশোয়ার থেকে যাত্রা করেছিল।
সর্বশেষ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় সিন্ধের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জিয়া-উল-হাসান লানজার দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘রেললাইন ধ্বংসে জড়িত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
অল্প সময় পরই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বেলুচ রিপাবলিকান গার্ডস (বিআরজি) এই হামলার দায় স্বীকার করে। তারা দাবি করে, ওই ট্রেনে পাকিস্তানি সেনারা ভ্রমণ করছিলেন। সংগঠনটি একটি হুঁশিয়ারি বার্তায় বলেছে, ‘বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা অর্জন না হওয়া পর্যন্ত এই ধরনের অভিযান চলবে।’
যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, শুধু ২০২৫ সালেই এখন পর্যন্ত অন্তত সাতটি হামলা হয়েছে জাফর এক্সপ্রেসে। এসব হামলায় কখনো হয়েছে বোমা বিস্ফোরণ, কখনো অপহরণ, কখনো গুলিবর্ষণ। ট্রেনটি এখন পাকিস্তানের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রীবাহী সেবা হিসেবে পরিচিত।
গত মার্চে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) বলান পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ৪০০ যাত্রীসহ ট্রেনটি দখলে নিয়ে নেয়। পরে টানা ৩০ ঘণ্টার অচলাবস্থার পর সেনারা অভিযান চালিয়ে ৩৩ জন বিদ্রোহীকে হত্যা করে ট্রেনটিকে উদ্ধার করে। তবে ওই অভিযানে ২৩ সেনা, তিন রেলকর্মী ও পাঁচ যাত্রীও নিহত হন।
গত আগস্টে মাস্তুং জেলায় আইইডি বিস্ফোরণে এই ট্রেনের ছয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছিল। এতে চারজন আহত হন। একই মাসে কোলপুরের কাছে ট্রেনের ইঞ্জিনে গুলি চালানো হয় এবং সিবি রেলস্টেশনের কাছেও বোমা বিস্ফোরণ ঘটে।
গত জুনে সিন্ধের জ্যাকোবাবাদে রিমোট কন্ট্রোল চালিত বোমায় ট্রেনটির চারটি বগি উল্টে যায়। এত ঘনঘন হামলার কারণে গত জুলাই মাসে ট্রেনটির একটি দুর্ঘটনাকেও প্রথমে হামলা মনে করা হয়েছিল।
বেলুচিস্তানকে পাকিস্তানের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত করে রাখে জাফর এক্সপ্রেস। সৈন্য ও সরকারি কর্মচারীরা নিয়মিত এই ট্রেন ব্যবহার করায় এটি সন্ত্রাসীদের প্রধান টার্গেট।
পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী হানিফ আব্বাসি সম্প্রতি এক অভিযোগে বলেছেন, ‘এসব হামলার পেছনে ভারতের মদদ আছে।’ তবে ভারত এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আব্বাসি বলেন, ‘আমাদের চালক ও যাত্রীদের সাহসিকতা সন্ত্রাসীদের ব্যর্থ করে দিচ্ছে। পাকিস্তান কখনো ভয় পাবে না।’
বেলুচিস্তান প্রদেশ দীর্ঘদিন ধরে বিদ্রোহে জর্জরিত। প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এই অঞ্চল চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর ও গওয়াদার সমুদ্রবন্দরের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বেলুচ জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলো অভিযোগ করে আসছে, ইসলামাবাদ তাদের সম্পদ লুট করছে, অথচ স্থানীয় জনগণ দারিদ্র্যে ভুগছে।
এই বিদ্রোহের প্রধান গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আছে বিএলএ, বিআরজি ও বেলুচ লিবারেশন ফ্রন্ট। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি বিএলএ-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেই বেলুচিস্তানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের অভিযোগ তুলেছে।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের পর থেকেই বেলুচিস্তানে পর্যায়ক্রমে বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিয়েছে। বর্তমানে স্বাধীনতার দাবিতে পরিণত হওয়া এসব আন্দোলনের প্রধান টার্গেট হলো জাফর এক্সপ্রেস।
তারপরও পাকিস্তান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই ট্রেন বন্ধ করা হবে না। রেলমন্ত্রী আব্বাসি বলেন, ‘যত হামলাই হোক, ট্রেনটি সময় মেনে প্রতিদিনই চলবে।’
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন