রবিবার, ২৯শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৫ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে দূর করতে হবে ভিডিও গেম আসক্তি

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০২:৩২ অপরাহ্ন, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৪

#

ছবি - সংগৃহীত

বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির। ইন্টারনেট মানবসভ্যতার একটি বিস্ময়কর অবদান। ইন্টারনেট ব্যবহারের যেমন ভালো দিক আছে, তেমনি খারাপ দিকও আছে। বর্তমান প্রজন্ম নেশার মতো তথ্যপ্রযুক্তিতে আসক্ত হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও শিশু-কিশোরদের খেলার সাথী ছিল পাড়া-প্রতিবেশীর সন্তানরা। তাদের সাথে মাটির হাঁড়ি-পাতিল, পুতুল খেলাসহ নানারকম খেলাধুলা করতো। তারপর একটু বড় হলে ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, কাবাডি, গোল্লাছুট ইত্যাদি।

কিন্তু বর্তমান সময়ে শিশুদের খেলার সাথী হয়েছে কার্টুন, মিনা রাজু, গোপাল ভাঁড় ইত্যাদি। শিশু কান্না করলে এখন হাতে তুলে দেয়া হয় মোবাইল কিংবা ট্যাব। ধীরে ধীরে শিশুরা আত্মঘাতী অনলাইন জগতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। শিশু বয়স থেকে তার পড়ার মেধা এই অনলাইনের মধ্যে ব্যয় হচ্ছে। ফলে শিশু একটা সময় অনলাইনে আসক্ত হয়ে যায় আর পড়তে চায় না। পড়লেও পড়া মনে থাকে না। তার মন-মানসিকতা সব সময় অনলাইনের দিকে আসক্ত থাকে।

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুকাল হলো মানুষের জ্ঞান অর্জনের প্রথম ধাপ। এখান থেকে তার হাতেখড়ি শুরু হবে। কিন্তু অনলাইনে আসক্ত হয়ে শিশু-কিশোররা ভবিষ্যতে মেধাশূন্য জাতির পথে অগ্রসর হচ্ছে। যা দেশের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ।

ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় মাঝেমধ্যে অনেক ধরনের বাজে বিজ্ঞাপন এবং অনেক খারাপ ছবি আসে। শিশুদের ভালোমন্দ বিচার করার জ্ঞান না হওয়ায় তারা ওই সাইটগুলোতে অবাধে বিচরণ করে। এমন খারাপ সাইটগুলোতে বিচরণ করতে করতে একটা সময় এই সাইটগুলোর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। যা বাচ্চাদের চিন্তা-চেতনার জগতে মারাত্মক বিপর্যয় নিয়ে আসে।

গেমের জগতে আসক্ত হয়ে তাদের নিয়মিত খাবার খাওয়া হয় না। ফলে তারা নানা ধরনের পুষ্টিহীনতায় ভোগে। শরীর দুর্বল থাকে। অনলাইনে আসক্ত শিশু-কিশোররা কারো সঙ্গে কোনো স্বাভাবিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক করতে পারে না। কারো সঙ্গে ভালো করে কথা বলতে পারে না, মিশতে পারে না। এসব  কারণে তারা একরোখা হয়, মেজাজ খিটখিটে হয়। এক কথায় ভিডিও গেম আসক্তি মানসিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

শিশু-কিশোরদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার জ্ঞানচর্চা করা। কিন্তু তারা অনলাইনে আসক্ত হয়ে বইয়ের কথা প্রায় ভুলতে বসেছে। যেখানে শিশু-কিশোররা হবে জ্ঞানপিপাসু, জ্ঞান অন্বেষণের জন্য মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছুটে বেড়াবে, সেখানে তারা মোবাইলের টাচ স্ক্রিন আর ল্যাপটপের মনিটরে নিজেদের সীমাবদ্ধ করে রেখেছে। ইউনিসেফ বাংলাদেশের জরিপে বলা হয়- বাংলাদেশের ৮১ দশমিক ২ শতাংশ শিশু-কিশোর সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিদিন সময় কাটায়। এদের ৯০ শতাংশই মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, অনলাইন আসক্তি কমাতে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানকে শাসন করে কিংবা স্মার্টফোন, ল্যাপটপ কেড়ে নিয়ে এ অভ্যাস ঠেকানো যাবে না। বরং এতে বিপরীত হতে পারে। স্মার্টফোন, ল্যাপটপ আসক্তদের এসব ডিভাইস ব্যবহারের সময়টি ধাপে ধাপে কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সবার আগে অভিভাবককে দেখতে হবে কেন তার সন্তান অনলাইনে বা অনলাইন গেমে সময় কাটানোতে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে? শুধু অনলাইন গেম খেলতে কিংবা অনলাইনে থাকতে নিষেধ করলেই হবে না, বিকল্প কোনো খেলাধুলার ব্যবস্থা করার বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে। তা ছাড়া সন্তানের সামনে অভিভাবকদের স্মার্টফোনে মগ্ন থাকা, খাবার টেবিলে স্মার্টফোন দেখার অভ্যাসেও পরিবর্তন আনতে হবে।

ইন্টারনেটের অপব্যবহার রোধ করতে হলে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক হতে হবে। নিরাপদ ইন্টারনেটের ব্যবহারবিধি শিশুদের পাঠ্যপুস্তকে সংযোজন করা প্রয়োজন। যেকোনো মূল্যে শিশু-কিশোরদের নিরাপদ শৈশব ও কৈশোর নিশ্চিত করতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করতে হবে। তাহলেই শুধু নিশ্চিত করা যাবে শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ।

আই.কে.জে/

শিশুদের স্ক্রিন-আসক্তি

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন