ছবি - সংগৃহীত
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার দিনদিন বেড়েই চলছে। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের সংখ্যাও বাড়ছে। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ফেসবুক। এছাড়া শক্ত অবস্থান দখল করে আছে ইউটিউব, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও টুইটার। প্রায় সব শ্রেণির মানুষ এখানে প্রতিদিনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় ব্যয় করছেন। সকাল কিংবা রাত কোনো না কোনো সময় তার চিন্তা-চেতনা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন।
প্রযুক্তি-বিপ্লবের কল্যাণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বর্তমান সময়ে যোগাযোগের অন্যতম হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। মানুষ এখন ঘরে বসে মুহূর্তেই পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে কিংবা বার্তা পাচ্ছে। পুরো দুনিয়া এখন হাতের মুঠোয়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শুধু উচ্চশিক্ষিত লোকই নয়, স্বল্পশিক্ষিতরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তথ্য আদান-প্রদান করছে।
দিনে দিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অবস্থান শক্ত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের চেয়েও প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। যার সরাসরি প্রভাবও গণমাধ্যমের ওপর পড়ছে। পেশাদার সংবাদপত্র বা টেলিভিশন চ্যানেলগুলো কোনো খবর এড়িয়ে গেলেও এখন ফেসবুকের কল্যাণে মানুষের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। কোনো ঘটনা ঘটলে কারও না কারও ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রকাশ হয়ে যায়, উঠে আসে আলোচনায়। এখন অনেক ক্ষেত্রেও গণমাধ্যমের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। শুধু তা-ই নয়, অনেক ক্ষেত্রে খবরটি গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ ও প্রচার করতে পত্রিকা ও টেলিভিশনের ওপর চাপও সৃষ্টি করে।
বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের যে কোনো আন্দোলনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিগত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনেও ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। তাৎক্ষণিক সব তথ্য আদান-প্রদান ও ছড়িয়ে দেয়ার কারণে দ্রুত আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রবাসীরাও দেশে না থেকেও আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। তারা রেমিট্যান্স না পাঠানোর ঘোষণা দেন। এতে তৎকালীন সরকারের আর্থিক খাত চরম অনিশ্চয়তায় পড়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এভাবে একে-অপরকে আন্দোলনে যুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কয়েক বছর আগে ঘটে যাওয়া নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, সিলেটের আলোচিত শিশু সামিউল হোসেন রাজন হত্যা, বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা ও গুলশানের হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হওয়ার পর মূলধারার গণমাধ্যমে উঠে আসে। যার কারণে শেষ পর্যন্ত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রামাঞ্চলের কোনো ঘটনা ঘটার মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এত দ্রুত সময়ে কোনো গণমাধ্যমের তথ্য দেয়ার সুযোগই ছিল না। দেশে এমন অনেক প্রত্যন্ত গ্রাম আছে, যেখানের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও গণমাধ্যমে স্থান পায় না। গণমাধ্যম কর্মীরাও জানেন না। অথবা জানলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরবস্থার কারণে সেখানে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহ সম্ভব হয়ে ওঠে না। সেসব সংবাদ বর্তমানে মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। নিমিষেই বিশ্বের এ প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পৌঁছে যায়। তখন এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের খবর থেকে নিয়ে অনেক সময় গণমাধ্যমও সংবাদ প্রচার করে। সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে উঠে আসা আলোচিত অনেক সংবাদ পর্যালোচনা করলেই দেখা যাবে, সংবাদের মূল সূত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এজন্যই সংবাদ দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে দেশের প্রায় সব গণমাধ্যমই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের নিজস্ব প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রচার হওয়া সংবাদটি বহুল প্রচারের জন্য ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইউটিউবে শেয়ার দেয়া হচ্ছে।
বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গণমাধ্যমের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন শুধু ব্যক্তিগত যোগাযোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটি একটি শক্তিশালী গণমাধ্যমে পরিণত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের পরিধি এখন সমাজ, গোষ্ঠী এবং রাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।
আই.কে.জে/