মিসরের সেনাবাহিনীর একটি প্যারেডে স্যালুট গ্রহণ করছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট সিসি। ছবি: সংগৃহীত
পশ্চিমা বিশ্বের আলোচিত সামরিক জোট ন্যাটোর মতো কাঠামোয় একটি যৌথ কমান্ড গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে মিসর। এই ধারণা অনেক পুরোনো। তবে কাতারে ইসরায়েলি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই যৌথ আরব সামরিক বাহিনীকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে কায়রো।
স্থানীয় সময় গতকাল রোববার (১৪ই সেপ্টেম্বর) একাধিক আরবি গণমাধ্যম এ খবর দিয়েছে। সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এবং আজ সোমবার (১৫ই সেপ্টেম্বর) কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠেয় আরব-ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনকে ঘিরে এই আলোচনার সূত্রপাত। লেবাননের হিজবুল্লাহপন্থী দৈনিক আল-আখবার এক সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই উদ্যোগের নেপথ্যে আছে কায়রো।
লন্ডনভিত্তিক দৈনিক আল-কুদস আল-আরাবি জানিয়েছে, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এমন একটি দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল বাহিনী পুনর্গঠনের চেষ্টা করছেন, যা কোনো আরব রাষ্ট্র আক্রমণের শিকার হলে সেখানে মোতায়েন করা যাবে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সম্মেলনের আগেই কূটনৈতিক আলোচনায় বিষয়টি তোলা হয়েছে। এটিকে মিসর প্রতিরক্ষামূলক ছাতার মতো উদ্যোগ হিসেবে বর্ণনা করেছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো উসকানি হিসেবে নয়।
ফিলিস্তিনি গণমাধ্যম মা’আনও একই ধরনের তথ্য জানিয়েছে। তাদের মতে, মিসরপ্রায় ২০ হাজার সেনা দেওয়ার বিষয়টি ভাবছে। পাশাপাশি বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডারের পদে একজন মিসরীয় চার তারকা জেনারেলকেও বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সৌদি আরব এতে প্রধান অংশীদার হতে পারে। মা’আনের ভাষায়, আলোচনা এখনো চলছে।
কোন নীতিতে বাহিনী পরিচালিত হবে তা নিয়েও আলাপ হচ্ছে। কায়রোর বক্তব্য, আরব দেশগুলোর জনসংখ্যা ও সামরিক সামর্থ্য অনুযায়ী বাহিনী গড়ে তোলা হবে।
প্রায় এক দশক আগে এমন উদ্যোগ তোলা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। কিন্তু কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পর আবারও বিষয়টি সামনে এসেছে। মিসরের কর্মকর্তারা এখন অন্যান্য আরব দেশকে পাশে টানার চেষ্টা করছেন।
আল-আখবারে উদ্ধৃত সরকারি সূত্র জানায়, শুধু সামরিক নয়, আঞ্চলিক ও রাজনৈতিক বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ। এতে মরক্কো ও আলজেরিয়ার সেনা অংশগ্রহণের সম্ভাবনাও আছে। ওই সূত্রটি বলেছে, ‘বাহিনী এমনভাবে গঠিত হতে হবে, যাতে প্রয়োজনে তা দ্রুত মোতায়েন করা যায়। আরব দেশগুলোর সেনাবাহিনীর কাঠামো এতে প্রতিফলিত হবে এবং আঞ্চলিক রাজনীতির ভারসাম্যও বজায় থাকবে।’
আরেকটি আলোচনার বিষয় হলো কমান্ড ভাগাভাগি। সূত্র জানায়, বাহিনীর শীর্ষ কমান্ড মিসরের হাতে থাকবে। দ্বিতীয় অবস্থান পাবে সৌদি আরব বা অন্য কোনো উপসাগরীয় দেশ। এর মাধ্যমে মিসর নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে চাইছে, পাশাপাশি উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলোও গুরুত্ব পাবে।
যদিও সবকিছু এখনো আলোচনার পর্যায়ে, তবে এ উদ্যোগে স্পষ্ট হয়েছে যে, আরব বিশ্বের নিরাপত্তা কাঠামোর কেন্দ্রে নিজেদের স্থাপন করতে চাইছে মিসর। বিশেষত দোহায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পর নতুনভাবে গতি পেয়েছে এই আলোচনা।
তবে কায়রোর পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। অন্যদিকে ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ায়ির লাপিদ আরবি গণমাধ্যমে আসা প্রস্তাবের সমালোচনা করেছেন। তিনি এক্সে লিখেছেন, ‘ইসরায়েলের হামলার প্রতিক্রিয়ায় যৌথ আরব বাহিনী গঠনের এ উদ্যোগ শান্তি চুক্তিগুলোর জন্য বড় আঘাত।’
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন