ছবি - সংগৃহীত
৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত গেজেটে ২২৭ জনকে বাদ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির পর দেশজুড়ে আড়োলন সৃষ্টি হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সুপারিশকৃত ২ হাজার ১৬৩ প্রার্থীর মধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জন এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বিবেচনায় সাময়িকভাবে অনুপযুক্ত ২২৭ জনসহ মোট ২৬৭ জনকে বাদ দিয়ে ৩০শে ডিসেম্বর ১ হাজার ৮৯৬ প্রার্থীর অনুকূলে নিয়োগ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর আগে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) এবং সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রার্থীদের প্রাক্-চরিত্র যাচাই-বাছাই করে সুপারিশ করা ২ হাজার ১৬৩ প্রার্থীর মধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ এবং এজেন্সি রিপোর্ট বিবেচনায় সাময়িকভাবে ৫৯ জনসহ মোট ৯৯ জনকে বাদ দিয়ে ১৫ই অক্টোবর ২ হাজার ৬৪ জনকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
পিএসসি ৪৩ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি ২০২০ সালের ৩০শে নভেম্বর প্রকাশ করেছিল। তিন বছরের বেশি সময় পর ২০২৩ সালের ২৬শে ডিসেম্বর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে। প্রায় সাড়ে ৪ লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রিলিমিনারি, লিখিত, মৌখিক সব পরীক্ষা শেষে পিএসসি কর্তৃক চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত হন মাত্র ২ হাজার ১৬৩ জন। এরপর তারা জনপ্রশাসনের গেজেটের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু জুলাই থেকে আন্দোলন, এরপর ৫ই আগস্টের পটপরিবর্তনে, বারবার পুলিশি যাচাইয়ে গেজেট প্রকাশে বিলম্বের পর ১৫ই অক্টোবর যোগদানের প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। তাতে ৯৯ জন বাদে পড়েন। এর মধ্যে ৪৫ জন স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অংশ নেননি, বাকি ৫৪ জন নেতিবাচক প্রতিবেদনের কারণে বাদ পড়েন।
ওই প্রজ্ঞাপনে বাকি ২ হাজার ৬৪ জন প্রার্থীকে ২০২৪ সালের ১৭ই নভেম্বর চাকরিতে যোগদান করতে বলা হয়। দীর্ঘ চার বছরের অপেক্ষার পর এই প্রজ্ঞাপন পেয়ে যে যেখানে চাকরি করতেন তা ছেড়ে যোগদানের প্রস্তুতি নেন। কিন্তু ২৮শে অক্টোবর রাতে হঠাৎ করেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যোগদানের তারিখ পিছিয়ে ১লা জানুয়ারি নির্ধারণ করে। তবে এর কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। এর মধ্যে আবার পুলিশ-গোয়েন্দাদের দিয়ে যাচাই শুরু হয়। এরপর আগের গেজেট বাতিল করে ৩০শে ডিসেম্বর নতুন গেজেট প্রকাশ করা হয়। এভাবে কোনো বিসিএসে একই সরকারের আমলে প্রজ্ঞাপন বাতিল করে আরেকবার প্রজ্ঞাপন প্রকাশের নজির দ্বিতীয়টি আর নেই।
তবে দ্বিতীয়বার প্রকাশিত এই ফলাফলে নতুন করে আরও ১৬৮ জনকে বাদ দেয়া হয়। ফলে এক বিসিএসেই যাচাইয়ের নামে অন্তত ২২২ জনকে বাদ দেওয়া হলো, যেটি নজিরবিহীন ঘটনা।
যারা বাদ পড়েছেন, তাদের প্রায় সবার অভিযোগ, তারা কখনো কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ছিলেন না। কিন্তু তাদের অভিযোগ গোয়েন্দা প্রতিবেদনে রাজনৈতিক বিবেচনা, বিশেষ জেলায় বাড়ি কিংবা ধর্মের বিষয়টি সামনে এসেছে। দীর্ঘ চার বছরের অপেক্ষা আর অক্লান্ত পরিশ্রমে বিসিএসে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়ে এভাবে বাদ পড়া কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। অস্বীকার করার উপায় নেই, এতো প্রতিযোগিতা করে এ পর্যন্ত আসা প্রতিটি পরীক্ষার্থীই চরম মেধাবী।
জানা গেছে, গোয়েন্দা প্রতিবেদন নেগেটিভ হওয়ায় তাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দারা গ্রাম কিংবা ইউনিয়ন পর্যায়ের বিশেষ কোনো দলের নেতা থেকে তথ্য নেয়। দেশের এসব মেধাবী সন্তানদের গ্রাম পলিটিক্সের শিকার হয়ে বাদ পড়া মোটেও কাম্য নয়। তারা যদি ফৌজদারি কিংবা রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধে অপরাধী না হয়ে থাকে তাহলে শুধু পারিবারিক পরিচয়ে বাদ দেয়া মোটেও শুভ লক্ষণ নয়। বিসিএসের চূড়ান্ত ফল হওয়ার পর আইনগতভাবে কাউকে আটকে রাখার সুযোগ নেই। কিন্তু তারপরেও দেখা যায় রাজনৈতিক ভিন্নমত খোঁজার নামে তুচ্ছ সব কারণে সব আমলে কেউ না কেউ বাদ পড়েন। পরবর্তীতে দেখা যায়, সরকার পতনের পর তারা আদালতের রায়ে চাকরি পান। কিন্তু ততদিনে জীবনের অমূল্য সময় হারিয়ে যায়।
প্রবল সমালোচনার পর সরকার ঘোষণা দিয়েছে, সাময়িকভাবে নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত ২২৭ জনের মধ্যে যে কেউ পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারবে এবং নির্দিষ্ট সময়ে প্রায় সকলেই আবেদন করেছেন। বাদ পড়াদের তথ্য পুনরায় যাচাই করে কোনো ফৌজদারি কিংবা রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ না পাওয়া গেলে দ্রুত তাদেরকে যোগদানের সুযোগ দেয়া হোক।
আই.কে.জে/