ছবি - সংগৃহীত
এইচএমপিভি ভাইরাস (Hunan metapneumovirus) নিয়ে বিশ্বব্যাপী নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও আক্রান্ত একজন নারী মৃত্যুবরণ করেছেন। যদিও বলা হয়েছে, ওই নারী এইচএমপিভির পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়াজনিত অন্য একটি রোগেও আক্রান্ত ছিলেন এবং তার পরিস্থিতি কিছুটা জটিল ছিল। সরকারের রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, গত বছর এইচএমপিভিতে দুইজন আক্রান্ত হয়েছিলেন। ভাইরাসটি এদেশে ২০১৭ সালে প্রথম শনাক্ত হয়। তারপর থেকে ভাইরাসটি দেশে আছে।
চীনের বেইজিং ও তৎসংলগ্ন এলাকায় হিউম্যান মেটানিউমোনিক (এইচএমপিভি) ভাইরাস নামের একটি ভাইরাস মানবদেহের ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ার খবরে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের গণস্বাস্থ্য অধিদপ্তর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এই ভাইরাসটি বাতাসে ছড়ায় এবং আক্রান্তদের মাঝে ঠান্ডা-জ্বর বা ফ্লু-র উপসর্গ দেখা দেয়। ৫ বছরের নিচে ছোট শিশুরা ও প্রবীণরা এ ভাইরাসে আক্রান্ত বেশি হয়ে থাকে। আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নেয়া জরুরি হয়ে পড়ে। উচ্চ চাপে অক্সিজেন ও রক্তে স্টেরয়েড অনুপ্রবেশ ছাড়া শ্বাসকষ্ট কমানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আরো সমস্যা হলো, এই ভাইরাসের কোনো কার্যকর টিকা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি।
করোনা ভাইরাসের মতো এইচএমপিভি এক প্রকার আতঙ্ক চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আশার কথা হলো, চীন রোগটি এখনো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে বলে ঘোষণা দিয়েছে। হংকং, জাপান, ভারতসহ বিভিন্ন এশীয় দেশে এখন পর্যন্ত মহামারি আকারে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি।
এইচএমপিভি বার্ডফ্লু ভাইরাসের সমগোত্রীয়। এটি প্রথম ২০০১ সালে একদল ডাচ বিজ্ঞানী শনাক্ত করেছিলেন। এই ভাইরাসটি কোভিড-১৯-এর মতোই একটি এনভেলপড আরএনএ ভাইরাস। তবে এর গায়ের প্রোটিন কোভিড-১৯-এর স্পাইক প্রোটিন থেকে ভিন্ন। অন্যান্য ভাইরাসের মতো এইচএমপিভি শরীরে প্রবেশ করার পর এর গ্লাইকোপ্রোটিন একে কোষে স্থানান্তর করে। মানবদেহের কোষে আশ্রয় নিয়ে কোষের ক্রিয়াকর্মকে হাইজ্যাক করে ভাইরাস তার বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।
এ ভাইরাসটিও কোষের ভেতর তার আরএনএ অর্থাৎ জেনেটিক পদার্থ ছেড়ে দেয়, যা তার এফ-প্রোটিন কপি করে এবং ভাইরাস লোড শরীরে বাড়াতে সক্ষম হয়। কোভিড-১৯-এর মতো এ ভাইরাস শরীরে সাইটোকাইনের ঝড় তোলে না এবং শরীরের নানা অঙ্গকেও আক্রান্ত করে না। এ ভাইরাসের কারণে ফুসফুসের নিচের দিকে ইনফ্লামেটরি রেসপন্স দেখা যায় এবং শ্বাসকষ্টের উপসর্গ বাড়তে থাকে। রোগটিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে দুই বছর ও তার কম বয়সি শিশুরা পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সল্টলেক সিটিতে সংঘটিত একটি গবেষণায় চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এইচএমপিভি সংক্রমিত ২ বছর ও তার কম বয়সি শিশুদের প্রায় শতকরা ৫০ ভাগকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। অন্যদিকে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়েসের রোগীদের মধ্যে ২৫ শতাংশের বেশি এইচএমপিভি থেকে গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের কথা মনে করে এইচএমপিভি ভাইরাস নিয়ে একধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তবে বাংলাদেশে এখনো আতঙ্ক তৈরি হওয়ার মতো কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে চীন, জাপান, হংকং কিংবা ভারতে কিভাবে বিস্তার লাভ করে। যেহেতু এ ভাইরাসটি শনাক্ত করতে হলে ল্যাবরেটরিতে পিসিআর পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়, সেহেতু বিদেশ ফেরত মানুষদের পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। তবে যেহেতু শিশু ও প্রবীণদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে তাদের দিকে বেশি নজর রাখতে হবে।
যে কোনো রোগ হতে রক্ষা পাওয়ার মূল চাবিকাঠি হলো সচেতনতা। করোনা মহামারী আমাদের শিক্ষা দিয়েছে,যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে বড় দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এইচএমপিভি রোগটির যেহেতু কোনো ঔষধ ও টীকা আবিষ্কার হয়নি, সেহেতু রোগটি প্রতিরোধে আতঙ্ক নয়, বিশেষ সতর্কতা জরুরি।
আই.কে.জে/