ছবি: সংগৃহীত
সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ হলো সরবরাহ ও ঘাটতির বিপরীতে যে জোগান দরকার, সেটা ঠিক রাখা। যে কারণে সম্প্রতি আমরা সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছি। তবে সেটা সাধারণ ক্রেতার জন্য কষ্টসাধ্য হলেও বাস্তবতার জন্য দরকার ছিল। এটা না করলে বাজারে ব্যাপক সংকট তৈরি হতো, ঘাটতি বেড়ে যেতো। যে কারণে এখন আমরা অন্য কোনও পণ্যের দাম কমিয়ে সেটা সমন্বয়ের চিন্তা করছি।
মঙ্গলবার (১০ই ডিসেম্বর) ইআরএফ মিলনায়তনে ‘ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘এখনও বাজারে সিন্ডিকেট নিয়ে কথা হচ্ছে। তেল-চিনির বাজারে মুষ্টিমেয় কয়েকজন উৎপাদক বা আমদানিকারক রয়েছেন, তারা এটা করছেন। এর মধ্যে সর্ববৃহৎ যে সরবরাহকারী, তিনি দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। তিনি বাজারের একটা বৃহৎ অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। তারপরও পালিয়ে যাওয়ার কারণে যে সরবরাহে ঘাটতি হয়েছে, ওই তুলনায় কিন্তু বাজারে প্রভাবটা টের পায়নি ভোক্তারা। কারণ আমরা দিন-রাত পরিশ্রম করছি সরবরাহ ঠিক রাখতে।’
আগামী রমজানে পণ্যের দাম নিম্নমুখী থাকবে বলে আশা প্রকাশ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘রমজানে খাদ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল থেকেও নিম্নগামী থাকবে। খেজুর, ছোলা, ডালসহ এ সময় প্রয়োজনীয় সব পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে বলে আশা করছি। সে প্রস্তুতি আমাদের আছে।’
আলু নিয়ে কিছু ব্যর্থতা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা মেনে নিয়ে আমরা আগামী বছরের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। উৎপাদন বাড়ানো ও বিকল্প বাজার তৈরির জন্য কাজ করছি।’ ভারত থেকে আমদানি করা কিছু পণ্যে সাময়িক সমস্যা হয়েছে, সেটা সমাধানে কাজ চলছে বলেও জানান উপদেষ্টা।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দেশের প্রায় দেড় বছরের পুরো আয়ের সমান অর্থ চুরি হয়েছে মন্তব্য করে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘শ্বেতপত্রের প্রতিবেদনে বিগত ১৫ বছরে যে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচারের কথা বলা হয়েছে, এটা করেছেন ওই সরকারের গুটিকয়েক মানুষ। এই টাকাটা আমাদের দেশের সর্বস্তরের মানুষের দেড় বছরের পুরো আয়ের সমান। এতে যেসব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে, সেগুলো এখন ঠিকমতো কার্যক্রম চালাতে পারছে না। এগুলো সংস্কার দরকার।’
তিনি বলেন, ‘এ চুরির জন্য কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ধ্বংস করা হয়েছে। যে কারণে বড় একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো যে তথ্য সরবরাহ করে সেগুলো অসামঞ্জস্য। ফলে উৎপাদন বা চাহিদার ওই সব তথ্য দিয়ে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে যখন সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, তখন সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।’
টিসিবির বিপণন ব্যবস্থা নিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে টিসিবির কার্যক্রম, এর ডিলার ও সুবিধাভোগীদের তালিকা সংস্কার করা হবে। আমি নিজেই কয়েকটি জায়গায় পরিদর্শন করবো। এই প্রতিষ্ঠানকে (টিসিবি) বছরে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়, যার মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি। অথচ এই প্রতিষ্ঠানে সারা দেশে মাত্র ১৪২ জন জনবল। এত টাকা এ সামান্য জনবল কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে– এটা হাস্যকর।’
নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার পণ্যের দাম বেঁধে দিতে চায় না। আমরা এমন একটা ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে চাই, যাতে সব পণ্যের সরবরাহ ভালো পর্যায়ে যায়। বাজারে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পণ্যের সঠিক দাম নির্ধারণ হয়। সে জন্য আমরা প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে শক্তিশালী করছি।’
ওআ/কেবি
খবরটি শেয়ার করুন