শনিবার, ১১ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৫শে আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** সব উপদেষ্টাই তো বিদেশি নাগরিক: রুমিন ফারহানা *** ইরানের ওপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কবলে বাংলাদেশমুখী এলপিজির জাহাজ *** চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে গুজব, যা বললেন ছেলে জয় *** ফ্যাসিস্ট বুদ্ধিজীবীরা সব সময় ধর্ম পালনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করেন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা *** বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি প্রদর্শনসংক্রান্ত অনুচ্ছেদ সংবিধান থেকে বিলুপ্তি চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন *** ‘কারা লুঙ্গি তুলে চেক করে মানুষ মেরেছে, তা সবারই জানা’ *** শান্তিতে নোবেলজয়ী মারিয়া মাচাদোকে অভিনন্দন জানালেন ড. ইউনূস *** শনিবার ভোরে দেশে ফিরছেন শহিদুল আলম *** ইসরায়েল থেকে মুক্ত শহিদুল আলম এখন তুরস্কে *** স্বামী নিখোঁজের পর দেবরের সঙ্গে বিয়ে, পরের দিনই হাজির স্বামী!

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য : প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৪:৫১ অপরাহ্ন, ১৫ই জুলাই ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। এখানে দুটো পক্ষ মুক্তিযোদ্ধা আর রাজাকার। ভাবতে অবাক লাগে রোকেয়া হলের মেয়েরাও বলে তারা রাজাকার। তারা কী শিক্ষা পেলো! তারা কী জানে ২৫শে মার্চ কী হয়েছিলো! এসব তারা দেখেনি। তাই তারা রাজাকার পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে। 

সোমবার (১৫ই জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সমূহের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর’ এবং ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেওয়া স্লোগান নিয়ে মনোক্ষুণ্ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এটিকে দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার বাহিনী যেভাবে এদেশে অত্যাচার করেছে। তাদের সেই অত্যাচার, রাস্তায় লাশ পড়ে থাকা এরা দেখেনি; তাই নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা হয় না।’

শেখ হাসিনা বলেন, লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে গেছে, লাখো মা-বোন নির্যাতিতা। তাদের এ অবদান ভুললে চলবে না। তা মনে রাখতে হবে। পাকিস্তানি হানাদার-রাজাকার এ দেশে এত অত্যাচার করেছে। আমার খুব দুঃখ লাগছে, কালকে যখন শুনি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও বলে তারা রাজাকার। তারা কী জানে ৭১ সালের ২৫শে মার্চ সেখানে কী ঘটেছিল। তিনশ মেয়েকে হত্যা করেছিল। ৪০ জনকে ধর্ষণ করেছিল, এদের ধরে নিয়ে পাকিস্তানি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিল। অনেক মেয়ে শাড়ি-ওড়না দিয়ে ফাঁসি দিয়েছিল বলে তাদের কাপড় পরতে দেওয়া হতো না। ওই একটা পেটিকোট পরিয়ে বসিয়ে রাখতো। দিনের পর দিন তাদের পাশবিক অত্যাচার হতো। যখন তাদের উদ্ধার করা হয়, আমাদের মিত্রশক্তি ভারতের এক শিখ সৈন্য তারা মাথার পাগড়ি খুলে ওই মেয়ের গায়ে পেঁচিয়ে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এটা একটা ঘটনা না, বহু ঘটনা এরকম।

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে গেছেন, লাখো মা-বোন নির্যাতিতা, তাদের এই অবদান ভুললে চলবে না। এটা মনে রাখতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে, এখানে শান্তি কমিটিতে, কেউ রাজাকার কমিটিতে ছিল, কিন্তু অনেকে মানুষের ক্ষতি করেনি। কিন্তু যে বাহিনীগুলো তারা তৈরি করেছিল, তাদের হাতে অস্ত্র দিয়েছিল এবং তাদের দিয়ে মানুষের ক্ষতি করতো, অত্যাচার করতো, লুটপাট করতো, গণহত্যা চালাতো। তাদের বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি, তাদের বিচার করে, অনেকের ফাঁসিও দিয়েছি। তাদের বিচারে যারা নির্যাতিত তারা ন্যায় বিচার পেয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য এখন যখন শুনি মেয়েরাও স্লোগান দেয়, কোন দেশে আমরা আছি, এরা কী চেতনায় বিশ্বাস করে? কী শিক্ষা তারা নিলো? কী তারা শিখলো?’

তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্বের, জাতির পিতার একটি ডাকে এই দেশের মানুষ, ঘর-বাড়ি, পরিবার সব কিছু ছেড়ে দিয়ে যুদ্ধে গেছে, জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করে বিজয় এনে দিয়েছে। আর এই যারা বাহিনীতে (রাজাকার-আল বদর-আল শামস) ছিল তারা এদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে। সেটা ভুলে গেলে চলবে না।’

আরও পড়ুন: কোটা আন্দোলনে রাজনৈতিক অপশক্তি ঢুকেছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সেই শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে; তাহলেই এদেশ এগিয়ে যাবে। সেটা যে বাস্তবতা ৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় ছিল ২১ বছর, তারপর ৯ বছর দেশকে কী দিতে পেরেছে? কিচ্ছু দিতে পারেনি। কিন্তু আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করি। যখন ক্ষমতায় এসেছি মাত্র ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ আজকে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। বিশ্বের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত বাংলাদেশ। সেই দলটাতো থাকতে হবে।’

দেশকে এগিয়ে নিতে সবাইকে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাই, এই বাংলাদেশ কারো কাছে হাত পেতে চলবে না। মাথা নত করে চলবে না। বিশ্ব দরবারে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে চলবো। সেই বিশ্বাস নিয়ে আপনারা আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।’

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা ২০১৫ সাল থেকে বৃদ্ধি করে দিয়েছি। তার কারণ, আমি চাই যারা কাজ করবেন তাদের যদি অনবরত নিজের সংসার নিয়ে চিন্তা থাকতে হয়, তাহলে দেশের কাজে মনোনিবেশ করতে পারেন না। সেটা বিবেচনা করেই আপনার জীবনটা যাতে সুন্দর হয়, সেই বাসস্থান থেকে শুরু করে শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ, বিদেশে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ সব দিকে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছি। আমরা দুর্নীতিমুক্ত সমাজ যেমন গড়তে চাই। সেই সঙ্গে সঙ্গে যারা কাজ করে তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা যাতে হয়, অর্জন করতে পারেন সেদিকেও দৃষ্টি দিয়েছি।

সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যেখানে কোনো অনিয়ম দেখা দেবে আপনারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। অবশ্যই এখন আমরা দুর্নীতির জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি। দুর্নীতি ধরতে গেলে পরে সরকারের ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়া হয়, আমরা এটা বিশ্বাস করি না। দুর্নীতি খুব কম লোকেই করে কিন্তু তার বদনামটা হয় বেশি। এ কারণে যারাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হবে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের বদনাম হবে কিনা, সেটা কেয়ার করি না। আমি সমাজকে আরও শুদ্ধ করে, দেশের মানুষ কল্যাণে কাজ করে সেই ব্যবস্থা নিতে চাই। সেই পদক্ষেপটা নিয়েছি যে, কোনো মতে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবো না। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা আনার নির্দেশনা দেন তিনি।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সরকার প্রধান বলেন, আমার অনুরোধ পত্র-পত্রিকায় কি লিখলো সেটা দেখে নার্ভাস হওয়ারও কিছু নেই, ঘাবড়াবারও কিছু নেই। বরং দেখবেন এর কোনো সত্যতা আছে কিনা? যদি না থাকে ওইটাকে সোজা ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন। ওইটা পড়ারও দরকার নেই। এটা হলো আমার পরামর্শ। আমি নিজেও অনেক পত্রিকা পড়ি না। কেন? দেশটা আমার। দেশকে ভালোভাবে চিনি, জানি। সেই ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। জন্ম নিয়েছি জাতির পিতার ঘরে। এ দেশের কীভাবে ভালো হয়, মন্দ হয় আমাদের জানার কথা বেশি, আর কারও না। আর কেউ জানতে পারে না। 

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আপনারাও দেশের পরিচালক। আমরা পাঁচবছরের জন্য আসি। আপনারা স্থায়ী সময় নিয়ে আসেন। আমরা দেশের মাটি ও মানুষের কথা চিন্তা করে রাজনীতি করে এতদূর এসেছি। হঠাৎ করে অস্ত্র হাতে ক্ষমতা দখল করে, টেলিভিশনে ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় আসি নাই। তাই দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি-মানুষ আমার চেনা। দেশের উন্নয়ন করা আমাদের লক্ষ্য। সেটা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কে কী লিখলো, সেটাতে ঘাবড়ে যাওয়া, সেটা নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করা উচিত না। নিজের আত্মবিশ্বাস, বিবেক-বিবেচনা নিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করবেন। এ আত্মবিশ্বাস, মর্যাদা নিয়ে কাজ করলে সফলতা অর্জন করতে পারবেন।

এবারের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এবারে বন্যা আসার আশঙ্কা আরও বেশি। একটা সময় প্রচণ্ড খরা ছিল। হিমালয়ের বরফ অনেক গলেছে। যে পানিটা চলে গেছে নদী ও সাগরে। যদি সাগরে পানি আরও উচ্চস্তরে পৌঁছে যায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সামনে শ্রাবণ-ভাদ্র। এ মাসে বন্যাটা বেশি দেখা দেয়। প্রথমে উত্তর দিকে, ভাদ্র মাসে যায় দক্ষিণ দিকে। সেইদিকে মাথায় রেখে এখন থেকে প্রস্তুত নিতে হবে।

এসি/কেবি


প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250