বুধবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৬ই বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ–বাণিজ্য, বন্ধে প্রয়োজন কঠোর পদক্ষেপ

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৪:৫৫ অপরাহ্ন, ২৯শে এপ্রিল ২০২৫

#

দেশের ১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে নানা অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে লাল তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভিভাবক প্রতিষ্ঠান ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন’ (ইউজিসি) সেগুলোর বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। সম্প্রতি সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে ইউজিসিকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে মন্ত্রণালয়।

দীর্ঘদিন ধরে দেশে চলছে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষার সনদ–বাণিজ্য। বলা যায়, তা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ভর্তি হওয়া, শ্রেণিকক্ষে পাঠ নেওয়া ও পরীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। টাকা দিলে এসব ছাড়াই সেগুলো থেকে মিলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সনদ। সেখানে ‘এক হাতে টাকা তো অন্য হাতে সনদ’ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এসব বিশ্ববিদ্যালয় সনদ–বাণিজ্য করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে ‘হোম ডেলিভারি’তে সনদ মিলছে, যার প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসিও। 

দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মের মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে না। আইন অনুযায়ী, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে হবে। কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার বয়স দুই-এক যুগেরও বেশি। বারবার সময় দেওয়া হলেও এখনো সেগুলো সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যায়নি। 

বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলছে ভাড়া বাড়ি, বা বিপণি বিতানের মতো ঘিঞ্জি পরিবেশে। অনেকে আবার বাড়ি ভাড়া নিয়ে একাধিক স্থানে খুলেছেন শাখা। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য জমি কেনা হলেও ভবন নির্মাণের ‘সামর্থ্য’ হচ্ছে না। 

অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে। যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব ছাড়াও ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের আর্থিক অনিয়ম, অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি, শিক্ষার্থীদের তুলনায় শিক্ষকের অপ্রতুলতা, একই ব্যক্তির ডিন হওয়া, বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন, গবেষণায় অবহেলা এবং সনদ–বাণিজ্যসহ আরো অভিযোগ রয়েছে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে।

গত ২১শে জানুয়ারি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইউজিসি সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা ও সেগুলোর ভুয়া তথ্যে প্রলুব্ধ না হতে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী, অভিভাবক, চাকরিপ্রার্থী ও চাকরিদাতাদের সতর্ক করে। গত বছরের ৩০শে নভেম্বর দেশের আটটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হতে সতর্কবার্তা দিয়েছিল ইউজিসি। 

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- ইবাইস, আমেরিকা বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, ভিক্টোরিয়া, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ঢাকা), দারুল ইহসান, সাউদার্ন ও কুইন্স ইউনিভার্সিটি। 

রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন বেহাল দশা। নানা সংকটে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় ক্ষেত্রে মানসম্মত শিক্ষার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ঢাকাসহ সারাদেশে অসংখ্য দালাল রয়েছেন। তারা নানাভাবে প্রভোলন দেখিয়ে সনদের ক্রেতা নিয়ে আসেন। বিনিময়ে বিশেষ কমিশন পান তারা। এছাড়া একশ্রেণির শিক্ষক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়-ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অসাধু কর্মকর্তা সনদ–বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ বিক্রি হয়।

তবে বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ নেই। বেশ কয়েকটি মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে। গুটিকয়েক মানহীন বিশ্ববিদ্যালয়ের কারণে ভালোগুলোর প্রতিও কখনো কখনো মানুষের একধরনের ভ্রান্ত ধারণা জন্মায়। 

শিক্ষা কোনো ব্যবসায়িক পণ্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় কখনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও নয়। এটা সনদ তৈরির কারখানা হতে পারে না। সব বিশ্ববিদ্যালয় যেন আইন মেনে পরিচালিত হয়, সে বিষয়ে সরকারের আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

এইচ.এস/


বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন