ছবি: সংগৃহীত
মুন্সীগঞ্জে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রোববার (৬ই অক্টোবর) সকাল ১০টায় শ্রীনগর উপজেলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় তার তৃতীয় জানাজা। এতে হাজারো মানুষের ঢল নামে। জানাজা শেষে স্থানীয় পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর স্টেডিয়ামে, দীর্ঘ পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য বি. চৌধুরীর মরদেহ নিয়ে এলে উপস্থিত হন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
এ সময় বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বি. চৌধুরীর রুহের মাগফিরাত কামনায় জানাজায় অংশ নিতে সাধারণ মানুষের ঢল নামে। পরে অশ্রুসিক্ত চোখে বিদায় জানানো হয় সাবেক এই রাষ্ট্রপতিকে।
এর আগে, শুক্রবার ভোর রাতে উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৯৪ বছর বয়সী সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
পরে ওই দিন সকালে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে তার প্রথম ও দুপুরে বারিধারা কূটনৈতিক এলাকায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
২০০১ সালের নভেম্বর থেকে পরের বছরের জুন পর্যন্ত দেশের ১২তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
১৯৩০ সালের ১১ই অক্টোবর কুমিল্লা শহরে জন্মগ্রহণ করেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ১৯৪৭ সালে ঢাকার বিখ্যাত স্কুল সেন্ট গ্রেগরি থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৫৪-৫৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। যুক্তরাজ্যের তিনটি রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস লন্ডন, এডিনবার্গ ও গ্লাসগো থেকে নির্বাচিত ফেলো-এফ.আর.সি.পি এবং বাংলাদেশের (সম্মানিত) এফ.সি.পি.এস ডিগ্রিও অর্জন করেন তিনি।
রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নিলেও সত্তরের দশকের শেষ দিকের আগে তাকে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে দেখা যায়নি। তার বাবা অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টির সহ-সভাপতি, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অনুরোধে তিনি রাজনীতিতে আসেন। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান সরকারে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ১৯৭৯ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং কেবিনেট মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। জিয়াউর রহমানের সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদেও ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্রথমে শিক্ষামন্ত্রী ও পরে সংসদ উপনেতা হন। সপ্তম জাতীয় সংসদে তিনি বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের পর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে একই বছরের ১৪ই নভেম্বর বিএনপির মনোনয়নে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
২০০২ সালের ২১শে জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন। বিএনপি থেকেও পদত্যাগ করেন। ২০০৪ সালের ৮ই মে বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দলটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
১৯৯৩ সালে তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান ‘আপনার ডাক্তার’-এর উপস্থাপক ছিলেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। শ্রেষ্ঠ টিভি উপস্থাপক হিসেবে তিনি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশন পুরস্কারও লাভ করেন।
ওআ/ আই.কে.জে/