সোমবার, ৩১শে মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকারি হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৪:২৩ অপরাহ্ন, ১৮ই মার্চ ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

স্বাস্থ্যই সব সুখের মূল। মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম হলো চিকিৎসা। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা একজন মানুষের একান্ত  অপরিহার্য। সুস্থতার জন্য যেমন প্রয়োজন সুষম খাবার, ঠিক তেমনি অসুস্থ হলে প্রয়োজন যথাযথ সুচিকিৎসা। চিকিৎসার জন্য অধিকাংশ মানুষই হাসপাতাল-ক্লিনিকের ওপর নির্ভরশীল।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সরকারি হাসপাতাল। প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে শুরু করে যে কোনো জটিল ও কঠিন চিকিৎসাসেবা সরকারি হাসপাতালগুলো দেয়।

সাধারণত দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী সরকারি হাসপাতালগুলোর ওপর বেশি নির্ভরশীল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের সরকারি হাসপাতালে দৈনিক অন্তত দশ লাখ মানুষ বিনামূল্যে, বা নামমাত্র মূল্যের বিনিময়ে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন।

কিন্তু এত মানুষের চাহিদা পূরণে সরকারি হাসপাতালগুলো কতটা প্রস্তুত বা কার্যকর? সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিদ্যমান নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, নৈরাজ্য ও দুর্নীতি। বিশেষ করে, ওষুধ সংকট যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেগুলোতে। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে প্রয়োজনের মাত্র ১ দশমিক ৬২ শতাংশ রোগী ওষুধ পান। অধিকাংশ ও দামি ওষুধ হাসপাতালের বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনতে হয়। ফলে রোগীদের চিকিৎসার খরচ বেড়ে যায়। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ এমনিতেই অতি কষ্টে জীবনযাপন করছেন, সেখানে বাড়তি দামে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে আরো কষ্ট হচ্ছে। 

ওষুধ সংকট  ছাড়া হাসপাতালগুলোতে অধিকাংশ যন্ত্রপাতি প্রায়ই অচল থাকে। এক্স-রে মেশিন, এমআরআই, ইসিজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রের অপ্রতুলতা রয়েছে, কোথাও কোথাও থাকলেও নানা অজুহাতে বন্ধ থাকে। অনেক সময় হাসপাতালে কিছু কিছু চিকিৎসার যন্ত্র থাকলেও দক্ষ লোকের অভাবে সেগুলো অব্যবহৃত  অবস্থায় থাকতে থাকতে বিকল হয়ে যায়। 

ফলে সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করতে না পেরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হন রোগীরা। এ সুযোগে ক্লিনিকগুলো সাধারণ রোগীদের পকেট কাটে। দেশের অধিকাংশ মানুষই বেসরকারি হাসপাতালের  চিকিৎসার খরচ বহন করতে সক্ষম নন। চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেকেই সহায়-সম্বল বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হয়ে যান। যা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই উন্নত চিকিৎসার জন্য অহরহ অন্যত্র রেফার্ড করার ঘটনা ঘটছে সেগুলোতে। এতে অনেক সময় সাধারণ রোগীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

আবার অনেক রোগী ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসায় অবহেলার কারণে মারা যান, এমন অভিযোগও কম নয়। এ ছাড়া ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও টেকনিশিয়ানসহ নানা পদে লোকবল সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে রোগীদের বঞ্চিত হতে হয়।

অনেক সময় ডাক্তারদের অসহযোগিতা, নার্সদের সেবা প্রদানে গড়িমসি, ওয়ার্ড-বয়দের ঠিকমতো কাজ না করা ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করাসহ সরকারি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে দালালের দৌরাত্ম্য। হাসপাতালের মূল ফটক থেকে শুরু করে কেবিন বা ওয়ার্ড পর্যন্ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে একশ্রেণির দালাল। 

তারা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে রোগীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের আনাগোনা এবং ডাক্তারদের বিভিন্ন উপহার-উপঢৌকন দেওয়ার মাধ্যমে নিজ কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশনে (ব্যবস্থাপত্র) লেখানোর মতো অনিয়ম হাসপাতালে অহরহ ঘটছে।

সরকারি হাসপাতালগুলোর প্রতিনিয়ত অব্যবস্থার কারণে রোগীরা প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দেশে উন্নতমানের চিকিৎসা নিশ্চিত করা ও সেবার মান বাড়ানোর জন্য বিদ্যমান সমস্যা এবং সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

এইচ.এস/


সরকারি হাসপাতাল

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন