ছবি : সংগৃহীত
‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ চালানোর অভিযোগে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ হওয়া জামায়াতে ইসলামীকে ‘অপরাধকারী সংগঠন’ হিসাবে বর্ণনা করে রায় দিয়েছিলেন আদালতও। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের পথ ধরে পরবর্তী সময়েও সংগঠনটির ‘দেশবিরোধী একই চেতনা’ বহন করার কথাও উঠে এসেছিল যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন রায়ের পর্যবেক্ষণে।
জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের মামলার রায়ে ট্রাইব্যুনাল একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে ‘ক্রিমিনাল দল’ আখ্যায়িত করে স্পষ্ট করে বলেছিলেন, দেশের কোনো সংস্থার শীর্ষ পদে স্বাধীনতাবিরোধীদের থাকা উচিত নয়।
২০১৩ সালের ১৫ই জুলাই বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল ওই রায় দেন। যুদ্ধকালীন বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের পরিকল্পনা, উসকানি ও সহযোগিতার দায়ে গোলাম আযমকে টানা ৯০ বছর অথবা আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আদালত।
একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হয়ে বাঙালি হত্যাকাণ্ডে রাজাকার, আল বদর, আল শামসের মতো যে সব বাহিনী জড়িত ছিল, সে সব বাহিনীর ওপর গোলাম আযমের নিয়ন্ত্রণ প্রমাণিত হয় ওই মামলার বিচারে।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, সাধারণ জ্ঞান ও দালিলিক প্রমাণাদি থেকে এটা স্পষ্ট যে, জামায়াত ও এর অধীনস্ত সংগঠনের প্রায় সবাই সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছেন।
“গোলাম আযমের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী একটি ক্রিমিনাল দল হিসাবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাজ করেছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালে।”
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও স্বাধীনতাবিরোধী কিছু মানুষ জামায়াতের হাল ধরে আছেন। যার ফলে জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতাবিরোধী চেতনা ও সাম্প্রদায়িক অনুভূতির মানসিকতায় বেড়ে উঠছে, যা দেশের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয়।”
গোলাম আযমের আগে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আব্দুল কাদের মোল্লা ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানের মামলার রায়েও একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উঠে আসে।
‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য’ জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালের অভিমতই বাস্তবায়িত হলো বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। বৃহস্পতিবার তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “ট্রাইব্যুনালের যে রায়গুলো হয়েছিল, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির এবং নানান দণ্ডাদেশ, সেগুলো কার্যকর হয়েছিল ঠিক। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের অভিমতগুলো বাস্তবায়িত হয়নি দীর্ঘকাল। অন্তত আজকের দিনে এসে যে ট্রাইব্যুনালের অভিমতগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং বাস্তবায়িত হলো, আমি মনে করি, এর ফলে দেশকে প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক ধারায় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে নেওয়ার পথ প্রশস্ত হলো।”
আই.কে.জে/
জামায়াত
সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
খবরটি শেয়ার করুন