প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত)
রবিউল হক
বাউল গান তত্ত্বনির্ভর। বিভিন্ন তত্ত্বে বাউলেরা তাদের বাণী প্রচার করে গেছেন। দেহতত্ত্বের প্রবক্তা ও বাউল শিরোমণি মহাত্মা ফকির লালন সাঁই তাঁর গানে পুনর্জন্মের কথা বলে গেছেন। জন্মান্তরবাদ কোনও কালসীমায় আবদ্ধ বা ধর্মতত্ত্বের সাম্প্রদায়িক বিশ্লেষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শক্তির ধ্বংস বা বিনাশ নেই, রুপান্তর বা বিকাশ আছে। মানুষের দেহ ধ্বংস হয়ে গেলেও চেতনার মৃত্যু নেই। মনের অর্জন অনুসারে পুনর্জন্ম বা জন্মান্তর সর্বজনীন ও সর্বকালীন সত্য। আল কোরানের পাতায় পাতায় রূপকার্থে জন্মান্তরবাদের রহস্য ছড়িয়ে আছে। তাই লালন শাঁইজির গানে জিজ্ঞাসা-
মরে যদি ফিরে আসে স্বর্গ নরক কে বা পায়,
দেখ নারে মন পুনর্জনম কেমন করে হয়?
পিতার বীজে পুত্রের সৃজন তাতে পিতার পুনর্জনম,
পঞ্চভূতে দেহ গঠন আলেক্বরূপে ফেরে শাঁই।
আরো পড়ুন : কবিতা : আমি প্রেমিক হতে চাই -- শুভ্রহীম
বৃক্ষবীজের মধ্যে যেমন পূর্ণবৃক্ষ বিরাজ করে তেমনি মনুষ্যবীজের মধ্যেও পূর্ণ একটি সমগুণের মানুষ বিরাজ করে। এ দুয়ের মধ্যে অনেক প্রভেদ। কিন্তু পরম করুণাময় মানুষকে ভালোমন্দ নির্বাচনের অধিকার এবং এর উপর প্রবল ইচ্ছাশক্তি দান করেছেন। এ ইচ্ছাশক্তির সাহায্যে সে তার স্বভাবের মধ্যে মৌলিক পরিবর্তন আনতে পারে ও মানুষের গড়া স্বভাবকে আল্লাহর গড়া স্বভাবে পরিণত করতে পারে।
সদ্যজাত শিশুর মধ্যে পিতামাতার স্বভাব-চরিত্র বীজরূপে অপরিস্ফূট অবস্থায় নিহিত রয়েছে- একথা সত্য। অথাৎ পিতা-মাতার মৌলিক পাপ তার মধ্যে বীজরূপে রয়েছে কিন্তু পুনর্জন্মের সকল অধ্যায় ভুলিয়ে দিয়ে সংসারক্ষেত্রে তাকে ফেরেস্তা হিসেবে পাঠানো হয়ে থাকে। সম্যক গুরুরূপে শাঁইজির প্রবর্তিত ন্যায়নীতিপূর্ণ শাসনের মধ্যে বড় হতে থাকলে সে পরিবেশে পাপ তাকে স্পর্শ করবে না এবং অন্তরে নিহিত পিতা-মাতার কাছ থেকে পাওয়া পাপের স্বভাব জেগে ওঠার সম্ভাবনাও থাকবে না। কিন্তু বৃক্ষের ব্যাপার এমন নয়। বৃক্ষ তার বংশের স্বভাব জিনোমিক্সের মধ্যে নিয়েই বড় হয়ে উঠবে। মিষ্টি ফল টক কিংবা টক ফল মিষ্টি হবে না। স্থান বা মাটির পরিবর্তনের সামান্য পরিবর্তন ঘটতে পারে। কিন্তু মানুষ তার গুণাবলিকে সম্যক গুরুরূপে আল্লাহর গুণের অনুকরণ দ্বারা সম্পূর্ণ সুন্দরভাবে গড়ে নিতে পারে।
তথ্যসূত্র
১. আবদেল মাননান, লালনভাষা অনুসন্ধান-২, রোদেলা প্রকাশনী, ঢাকা, ২০০৯
২. আবদুল ওয়াহাব, বাংলাদেশের লোকগীতি: একটি সমাজতাত্ত্বিক অধ্যয়ন, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০০৭
এস/ আই.কে.জে/