সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একটি ধানগাছ একবার রোপণ করলে টানা পাঁচবার ফলন দেবে

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০১:৪৯ অপরাহ্ন, ১লা মে ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

প্রথমবারের মতো ড. আবেদ চৌধুরী উদ্ভাবিত ‘পঞ্চব্রীহি’র একটি ধানগাছ একবার রোপণ করে তা থেকে বছরে পাঁচবার ফলন পাওয়া গেছে।

দীর্ঘদিন ধরে ধান নিয়ে কাজ করছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি জিনবিজ্ঞানী ও ধান গবেষক ড. আবেদ চৌধুরী। গবেষণার ফল হিসেবে বোরো জাতের এই নতুন ধানগাছ উদ্ভাবন করে চমক সৃষ্টি করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, বছরের যে কোনো সময়ে এ ধান রোপণ করা যায়। এখন পরের ধাপগুলোতে কিছুটা কম উৎপাদন হচ্ছে। আমার চেষ্টা থাকবে, আরও বেশি ফলন বের করার। এ ধানের বীজ সংগ্রহ সহজ। কৃষকরা নিজেরাই তা করতে পারবেন। অন্য ধানের মতো বীজতলায় রোপণের পর চারা তুলে চাষ করতে হয়।

এ ধান চাষে খরচ কম হয়, কারণ জমি একবার চাষ করতে হয়। বীজতলাও একবার তৈরি করতে হয়। বোরো মৌসুমে জমি প্রস্তুতির সময় সার জমিতে দিতে হয়। পরে প্রয়োজনমতে প্রতি ফলনের আগে-পরে সার দিতে হয় বলেও জানান এ বিজ্ঞানী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেস (সিএআরএস) এর উদ্যোগে ও বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (বিএফএফ) -এর সহযোগিতায় এক সেমিনারে মূল বক্তা হিসেবে তিনি এ সকল কথা বলেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (একাডেমিক) প্রফেসর ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, অতিরিক্ত জনসংখ্যা বাংলাদেশের খাদ্যঘাটতির একটি প্রধান কারণ। অতিরিক্ত জনসংখ্যার ফলে কৃষিপ্রধান দেশ হয়েও বাংলাদেশে খাদ্য-সংকট দেখা যায়। অন্যদিকে জমির তুলনায় আমাদের জনসংখ্যা অনেক বেশি। তাই আমাদের প্রতিবছর বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করতে হয়। এ পরিস্থিতিতে খাদ্য চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে ধানের ফলন আরো বাড়ানো ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই। বর্তমান সময়ে পাঁচবার ফলন দেওয়া ধান পঞ্চব্রীহি আমাদেরকে এক নতুন পথের সন্ধান দিবে বলে আশা করা যায়।

সেমিনারের বিশেষ অতিথি এবং কুলাউড়ার (মৌলভীবাজার-২ আসন) সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের কৃষি খাতে খুবই মারাত্মক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তবে পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর কৌশল অবলম্বন করতে উচ্চফলনশীল ফসলের নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবন ও ব্যবহার এবং এগুলোর চাষাবাদ বাড়াতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ড. আবেদ চৌধুরী উদ্ভাবিত ধান পঞ্চব্রীহির বহুল চাষাবাদের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ খাদ্য পুষ্টির ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেস (সিএআরএস) এর পরিচালক অধ্যাপক ড. ইসতিয়াক এম সৈয়দ এর সভাপতিত্বে আয়োজিত এই সেমিনারে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) এর সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (বিএফএফ) এর নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোশতাক ইবনে আইয়ুব সহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

গত বছরের জানুয়ারি থেকে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন, বাংলাদেশের অর্থায়নে বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (বিএফএফ) এর বাস্তবায়নে ও বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) এর সহযোগিতায় এক বছর মেয়াদি এক প্রকল্পের মাধ্যমে উচ্চফলনশীল এ জাতের ধান মাঠ পর্যায়ে চাষ করা হয়। পরে ধানের এ বীজ বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

২০১০ সালে প্রথম কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের কানিহটি গ্রামে ২৫ বর্গমিটার জমিতে ২০টি ধানের জাত নিয়ে গবেষণা শুরু করেন আবেদ চৌধুরী। পরে তিন বছরে ২০টি ধানের জাত নিয়ে গবেষণা করলে দেখা যায় নির্দিষ্ট ধরনের এ জাত একই গাছে পাঁচবার ফলন দিতে সক্ষম।

স্থানীয় জাতের ধানের সঙ্গে উন্নত মানের ধানের বীজ সংকরায়ন করে এই উচ্চফলনশীল ধানের জাত পাওয়া যায়। পঞ্চব্রীহি ধান চাষে প্রথমবার ১১০ দিন পর ফলন আসে। পরের ফলন আসে ৪৫ দিন অন্তর। একবার বোরো, দুইবার আউশ ও দুইবার আমন ধানের ফলন পাওয়া যাবে। পঞ্চব্রীহি ধান প্রথমবার হেক্টরপ্রতি উৎপাদন হয় চার টন। ধানের চারা প্রতি ২৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে রোপণ করতে হয়। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কৃষি উর্বর জেলা মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় হাজীপুর ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রামের দিগন্ত জোড়া আমন ফসলির মাঠের একাংশে প্রায় দুই বিঘা জমিতে উৎপাদন হয়েছে পাঁচ ফসলি ধান। এই গ্রামের সন্তান জীনবিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী এই পাঁচ ফসলি ধানের উদ্ভাবক। অবিশ্বাস্যভাবেই এই ধান একবার রোপণের পর পাঁচবার কাটা যায়। বছরে এই ধান গাছ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচবার ফসল পাওয়া যায়। একই সঙ্গে নতুন জাতের এ ধান যাতে সারা দেশে চাষাবাদ করা যায় সেই চেষ্টা চালাচ্ছেন।

আরো পড়ুন: মিষ্টি আলু চাষে খরচ ২৫ হাজার, বিক্রি লাখ টাকা

এসি/ আই.কে.জে/


ফলন ধানগাছ

খবরটি শেয়ার করুন