আইনের প্রয়োগ ঘটবে শুধুমাত্র সন্ত্রাসীদের ওপরে, নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের ওপর নয় বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার (১লা আগস্ট) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, সরকার দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চায় আইনের প্রয়োগ ঘটবে শুধুমাত্র সন্ত্রাসীদের ওপরে। সুনির্দিষ্ট প্রমাণসাপেক্ষে ফৌজদারি অপরাধের সাথে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের ওপরে আইনের প্রয়োগ ঘটবে, তাদের গ্রেফতার করা হবে। কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী কোনোভাবে যেনো হয়রানির শিকার না হয়, এটি আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছি। পুলিশ প্রশাসনের সাথে আলাপ হয়েছে, যে সকল শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে ছিলো, স্লোগান দিয়েছে, পানি বিতরণ করেছে তাদেরকেও যেনো কোনোভাবে হয়রানি করা না হয়, তাদের পরিবারের কোনো সদস্য যাতে কোনোভাবে নাজেহাল না হয়। কারণ সব শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের আবেগ-অনুভূতিকে আমরা শ্রদ্ধা করি। এর সাথে আমাদের পুরো সমবেদনা ও সমর্থন আছে। কিন্তু তাদের আবেগকে পুঁজি করে যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তারা সাধারণ শিক্ষার্থী নয়। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, শিক্ষার্থী যারা তাদের আবেগ নিয়ে আন্দোলনে ছিলেন, কোনোভাবে যাতে একটি শিক্ষার্থীও নাজেহাল না হয় আর সন্ত্রাসীদের আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোটা আন্দোলনকে ঘিরে বিগত দিনগুলোতে যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, এ বিষয়গুলো সরকারের জন্য, দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য, বিশেষ করে যারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সবার জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক এবং খুবই দুঃখের। সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নিজে এবং আমি বহুবার গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছি এবং প্রতিটি হতাহতের ঘটনার জন্য নিন্দা জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী ১৬ জুলাই জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ঘোষণা দিয়েছিলেন একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করবেন এবং এটি গঠিত হয়েছে। স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে প্রতিটি হতাহতের ঘটনা তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে আমরা বিদেশি কোনো এক্সপার্টেরও সহায়তা নেবো। এখানে আমরা পুরোপুরি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতায় থাকতে চাই।
তিনি আরও বলেন, হতাহতের ঘটনায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যারা পরিবারের সদস্য হারিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তাদের অনেকের সাথে গণভবনে দেখা করেছেন, কথা বলেছেন। সে সময় আমিও উপস্থিত ছিলাম। সেখানে আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যরাও ছিল। তাদের সাথে আমারও আলাদাভাবে কথা হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আমরা কোনো কিছু চাই না, আমরা বিচার চাই।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং অন্যান্য যারা আছেন, কাউকেই গুলি করার কোনো অনুমতি ছিল না। সংবিধান এবং আইনের অধীনে তাদের কাজ করতে হয়েছে। তাই বলে আমি এটাও অস্বীকার করছি না, ক্ষেত্রবিশেষে কেউ কেউ, মাঠে আইন ভাঙেন নি। আমরা এটা তদন্ত করে তাদেরও বিচারের আওতায় আনবো। পুরো পৃথিবীতে এ ধরণের ঘটনা ঘটে। সরকারের দায়িত্ব হলো যারা আইন ভেঙেছে, যারা অন্যায় করেছে, সে যেই হোক তাদেরকে আমরা তদন্ত করে বিচারের মুখোমুখি করবো।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার আন্দোলনের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিয়েছে এবং তাদের আলাদা রেখেছে। সরকার কখনোই তাদের দোষারোপ করেনি। আমাদের সকল বক্তব্যে যেগুলোকে আমরা দোষ দিয়েছি, তার একটিও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নয়, প্রতিটিই সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যে। আমাদের সকল আইনের প্রয়োগ একটিও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নয়। প্রতিটি সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যে।
আলী আরাফাত বলেন, যারা সহিংসতা মারা গেছে তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। সব মৃত্যুর বিচার এ দেশ করবে, এ দেশের সরকার করবে এবং স্বাধীন বিচার বিভাগীয় কমিশনের মাধ্যমে করবে। প্রয়োজনে স্বচ্ছতার স্বার্থে বিদেশি অভিজ্ঞ ও পেশাদারদের সম্পৃক্ত করা হবে।
ওআ/কেবি
খবরটি শেয়ার করুন