মঙ্গলবার, ১৫ই এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২রা বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী’, মতিউর রহমান চৌধুরীর বিশ্লেষণ

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১২:১৯ পূর্বাহ্ন, ১৪ই এপ্রিল ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

‘ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা একটি সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের রেজিস্ট্রেশন (নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন) বাতিল হয়ে যেতে পারে। পরিস্থিতি শেখ হাসিনার (আওয়ামী লীগের সভাপতি) জন্য কোনো অবস্থাতেই অনুকূলে নেই। একদিকে মামলা-মোকদ্দমা, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক চাপ তাকে আরও কোণঠাসা করেছে। পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে আরও জটিল করে তুলেছে। 

দল (আওয়ামী লীগ) পুনর্গঠনের প্রক্রিয়াও ঝুলে গেছে। তিনি (শেখ হাসিনা) আসলে কারো কাছে নেতৃত্ব ছাড়তে রাজি নন, এমনকি পরিবারের কাছেও। রাজনৈতিক পণ্ডিতরা বলছেন, শেখ হাসিনার ভাগ্যে যা-ই ঘটুক না কেন, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় চ্যালেঞ্জের মুখে।’

এভাবেই ‘জনতার চোখ’ পত্রিকার প্রতিবেদনে বর্ণিত হয়েছে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও এর সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। প্রতিবেদনটিতে অভিজ্ঞতার নিরিখে বর্তমানের রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে 'ভবিষ্যদ্বাণী' করা হয়েছে। পত্রিকাটি বলছে, ‘বাংলাদেশে তার (শেখ হাসিনা) সাজানো বাগান তছনছ হয়ে গেছে। মাটির সঙ্গে মিশে গেছে ৩২ নম্বর (ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি)। অসংখ্য হত্যা মামলা রুজু হয়েছে, তার (শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া (জুলাই-আগস্টের গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে) শুরু হয়েছে। তার দলের অস্তিত্ব থেকেও নেই।’

পত্রিকাটি আরো লিখেছে, ‘একটি লোকও নেই দলের (আওয়ামী লীগ) পক্ষে কথা বলার। কোথায় যে তারা হারিয়ে গেলেন, এ নিয়ে রীতিমতো গবেষণা চলছে। তিনি (শেখ হাসিনা) আছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মাঝে-মধ্যেই তিনি সরব হন। আত্মগোপনরত অনেক সহকর্মীর সঙ্গে তিনি ফোনে কথা বলেন। তাদের এ বলে আশ্বস্ত করেন, আমি দ্রুত আসছি। ভয় পেয়ো না, সব ঠিক হয়ে যাবে।’  

'সাপ্তাহিক জনতার চোখের' চলতি সংখ্যার ‘শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী’ শিরোনামের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। পত্রিকাটি দৈনিক মানবজমিনের সহযোগী প্রকাশনা। এটি রাজনৈতিক ম্যাগাজিন। গত ৫ই আগস্টের অভ্যুত্থানের পর থেকে নতুন করে প্রকাশিত হচ্ছে পত্রিকাটি। এর প্রধান সম্পাদক প্রখ্যাত সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার মতিউর রহমান চৌধুরী। প্রচ্ছদ প্রতিবেদনটিও প্রাজ্ঞ এ সাংবাদিকের লেখা। 'জনতার চোখ' আগেও প্রকাশিত হয়েছিল, শেখ হাসিনার গত সরকারের আমলে এর প্রকাশনা বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।

যোগাযোগ করলে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও দৈনিক মানবজমিনের যুগ্ম সম্পাদক এবং 'জনতার চোখের' নিয়মিত লেখক শামীমুল হক সুখবর ডটকমকে জানান, 'সাপ্তাহিক এ পত্রিকা প্রতি রোববারে প্রকাশিত হয়। চলতি সংখ্যাটি আজ রোববার (১৩ই এপ্রিল) বাজারে এসেছে।'

পত্রিকাটি বলছে, ‘তাকে (শেখ হাসিনা) ফেরত আনার (গত বছরের ৫ই আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তিনি ভারতে আশ্রিত) ব্যাপারে চাপ আরও বাড়বে। নির্বাচন (ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ) যত কাছাকাছি আসবে, ততোই তাকে ফিরিয়ে আনার সুর হবে চড়া। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থ প্রায় অভিন্ন। তারা চাচ্ছে, আওয়ামী লীগ যাতে অংশ (নির্বাচনে) না নেয়।’

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘আওয়ামী লীগ যেহেতু নিষিদ্ধ হয়নি, তাই হিসাব-নিকাশে গরমিল আছে। অংক মেলানো সম্ভব হচ্ছে না। ভারতসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলও চাচ্ছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন (বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন)। তারা বলতে চাচ্ছে, আওয়ামী লীগসহ সবাইকে নিয়েই নির্বাচন। তা না হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েই থেকে যাবে। তাদের বক্তব্যে এমন ইঙ্গিতই রয়েছে।’

'জনতার চোখের' বিশ্লেষণ মতে, ‘ইউনূস প্রশাসন এখন দোটানায়। যদিও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই  বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে একবার বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা তার সরকারের নেই। এ নিয়ে তার নিয়োগকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। অনেকেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন।’

পত্রিকাটি লেখে, ‘হাসিনার প্রত্যর্পণ ইস্যুটি ইউনূস-মোদি (ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি) বৈঠকে আলোচনায় এসেছিল। মোদি কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি। আলোচনাও বেশিদূর এগোয়নি। পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যেই বৈঠকটির সমাপ্তি ঘটে। ফলাফল ছিল শূন্য। তবে বাংলাদেশ তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। তাকে ফেরত চেয়ে কূটনৈতিক চিঠির প্রসঙ্গ টেনে এনেছে বার কয়েক। এ অবস্থায় শেখ হাসিনা কী করবেন?’

গত বছরের ৫ই ডিসেম্বর 'বিবিসি বাংলা’র প্রচারিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার প্রায় চার মাস পর বিদেশে বিভিন্ন স্থানে জনসম্মুখে বক্তব্য দিচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সপ্তাহে তিনি আমেরিকার নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছেন এবং আগামী ৮ই ডিসেম্বর তিনি লন্ডনে আরও একটি অনুষ্ঠানে টেলিফোনে অংশ নেবেন।

এর আগে ইউরোপের দুইটি দেশে একইভাবে বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি। এসব বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমে শেখ হাসিনা রাজনীতিতে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন বলে মনে করছে বিএনপি।

৫ই আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার কিছু ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। যদিও সেগুলো সত্যিই তার কথোপকথন কী  না, তা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে সেই রেকর্ডগুলোতে তার দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে নানা ধরনের রাজনৈতিক নির্দেশনা দিতে শোনা গেছে তাকে।

কিন্তু সেসব ফাঁস হওয়া কল রেকর্ড বাদ দিলে শেখ হাসিনাকে এবারই জনসম্মুখে বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে। তার এ বক্তব্যের অর্থ কী এমন যে, তিনি আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন?’ 'বিবিসি বাংলা'র ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম- 'শেখ হাসিনার আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত'।

এইচ.এস/

শেখ হাসিনা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন