মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: সংগৃহীত
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজা যুদ্ধ নিয়ে শান্তিচুক্তি এখন অনেকটাই কাছাকাছি চলে এসেছে। তিনি জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এই চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য তিনি চাপ দেবেন। আজ রোববার (৫ই অক্টোবর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বিবিকে বলেছি, এটা তোমার জন্য বিজয়ের সুযোগ। তিনি তাতে রাজি ছিলেন। তার রাজি হতেই হবে। আমার সঙ্গে থাকলে রাজি হতেই হবে।’
ট্রাম্পের প্রকাশ্য বক্তব্য এবং অন্তরালের কূটনৈতিক তৎপরতা ইসরায়েল ও হামাসকে যুদ্ধবিরতি ও শান্তিচুক্তির কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। প্রায় দুই বছর আগে, ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর হামাসের হামলার মধ্য দিয়ে এ যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, সপ্তাহান্তে ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ মিশরে যাচ্ছেন। তারা সেখানে বন্দিমুক্তি চুক্তির কারিগরি বিষয়গুলো চূড়ান্ত করবেন এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনা করবেন।
এর আগে, গতকাল শনিবার সকালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা গাজায় প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে চলে গেছে। বিমান হামলাও বন্ধ রাখা হয়েছে, শুধু আত্মরক্ষার প্রয়োজনে সীমিত হামলা চালানো হচ্ছে। তার আগে, শুক্রবার (৩রা অক্টোবর) ট্রাম্প ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছিলেন, তারা যেন হামলা বন্ধ করে হামাসের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিশ্চিত করেছেন, তিনি সামরিক অভিযান স্থগিত করেছেন। তার দপ্তর জানিয়েছে, ট্রাম্প পরিকল্পনার প্রথম ধাপ অনুযায়ী বন্দীদের তাৎক্ষণিক মুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। তবে মাঠের বাস্তবতা বলছে, গাজায় আক্রমণ এখনো বন্ধ হয়নি।
শনিবার মিশর ঘোষণা করেছে, সোমবার থেকে শারম আল শেখে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এই চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে পরোক্ষ আলোচনা শুরু হবে। ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল অস্থায়ীভাবে বোমাবর্ষণ বন্ধ করেছে, যাতে বন্দিমুক্তি ও শান্তিচুক্তি সম্পন্ন করার সুযোগ তৈরি হয়।
তিনি হামাসকে সতর্ক করে বলেন, তারা যেন দ্রুত বন্দিমুক্তির প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়। না হলে চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি কোনো দেরি সহ্য করব না। অনেকে মনে করে দেরি হবে। কিংবা কোনো ফলাফল যাতে গাজা আবার হুমকি হয়ে ওঠে, তা-ও মেনে নেওয়া হবে না। আসুন দ্রুত এটা শেষ করি। সবাই ন্যায্য আচরণ পাবে।’
শুক্রবার ট্রাম্প প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে হামলা বন্ধের আহ্বান জানানোর আগে নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। ট্রাম্প অ্যাক্সিওসকে বলেন, তার টিম তাকে সতর্ক করেছিল যে, নেতানিয়াহুর আপত্তি থাকতে পারে। কিন্তু আলোচনায় বসার পর নেতানিয়াহু রাজি হয়ে যান।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনায় সবাই সাড়া দিয়েছে। বিশ্বের সব দেশই সমর্থন করেছে। বিবিও সমর্থন করেছেন। হামাসও অনেক দূর এগিয়েছে। তারা করতে চায়। এখন আমাদের কেবল চূড়ান্ত করতে হবে।’ তিনি জানান, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানও হামাসকে বন্দিমুক্তির পথে এগোতে চাপ দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘এরদোয়ান অনেক সাহায্য করেছেন। তিনি কঠিন মানুষ, কিন্তু আমার বন্ধু। দারুণ ভূমিকা রেখেছেন।’
এক মার্কিন কর্মকর্তা অ্যাক্সিওসকে বলেন, শুক্রবার ট্রাম্প এরদোয়ানের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি এরদোয়ানকে বলেন, ‘আমি আপনার জন্য অনেক কিছু করেছি। এখন এটা করার পালা আপনার।’ ট্রাম্প আরও বলেন, গাজা যুদ্ধের কারণে ইসরায়েল আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে গেছে। যুদ্ধ বন্ধের মাধ্যমে তিনি ইসরায়েলের হারানো মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে চান। তিনি বলেন, ‘বিবি বিষয়টা অনেক দূর টেনে নিয়েছেন। ইসরায়েল বিশ্বে অনেক সমর্থন হারিয়েছে। এখন আমি সেই সমর্থন ফিরিয়ে আনব।’
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত যুদ্ধে ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই ছিল সাধারণ মানুষ।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন