মঙ্গলবার, ১৭ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** ইসরায়েল-ইরান সংঘাত নিয়ে প্রথমবারের মতো যা বললেন চীনের প্রেসিডেন্ট *** পাকিস্তানি সেনাপ্রধানকে সামরিক কুচকাওয়াজে আমন্ত্রণ জানায়নি আমেরিকা *** তেহরান থেকে দূতাবাসকর্মী ও প্রবাসীদের সরিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশ *** রংপুর ও দিনাজপুরে করোনা শনাক্তের পরীক্ষা শুরু *** ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ভিসা কার্যক্রম পুনরায় শুরু *** ইরানে আত্মগোপনে থাকা ইসারায়েলি গোয়েন্দাদের ধরতে কঠোর অভিযান *** যুদ্ধবিরতি নয়, সংঘাতের ‘বাস্তব অবসান’ চান ট্রাম্প *** বাংলাদেশি নাগরিকদের ইরানের নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার পরামর্শ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের *** দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে জরুরি ভালো মানের নিরীক্ষা: আইসিএমএবি *** দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই: অর্থ উপদেষ্টা

দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে জরুরি ভালো মানের নিরীক্ষা: আইসিএমএবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৪:৫৭ অপরাহ্ন, ১৭ই জুন ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

নিম্নমানের নিরীক্ষা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ণ করছে। যার ফলে দেশে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে এবং এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করে ‘ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ’ (আইসিএমএবি)।

আজ মঙ্গলবার (১৭ই জুন) রাজধানীর পল্টনে ‘ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের’ (ইআরএফ) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পেশাদার হিসাববিদদের সংগঠন ও শিক্ষণ প্রতিষ্ঠান আইসিএমএবির প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন আহমেদ লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সেলিম, সাবেক প্রেসিডেন্ট দেলোয়ার হোসেন, ভাইস-প্রেসিডেন্ট কাউসার আলম, সেক্রেটারি হাসনাইন তৌফিক আহমেদ, কাউন্সিল সদস্য মো. আখতারুজ্জামান ও কাউন্সিল সদস্য জাহাঙ্গীর আলম।

লিখিত বক্তব্যে মাহতাব উদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, ‘বিগত দেড় দেশকের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির কারণে দেশে নিরীক্ষা ইকো-সিস্টেম সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে জাতীয় অর্থনীতিতে, যা দেশের বেসরকারি-সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক খাত (প্রায় ১৭ বিলিয়ন আমেরিকান ডলারের ব্যাংক সম্পদ পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে) এবং অস্থির শেয়ারবাজারে প্রচলিত দুর্বল শাসন-ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি।’

তিনি বলেন, ‘নিম্নমানের নিরীক্ষা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ণ করছে। যার ফলে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে (যা বাংলাদেশে ১ দশামিক ৬ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার, ভিয়েতনামে তা ৩৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার) এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধার সৃষ্টি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশে খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ২৫ শতাংশ। পর্যাপ্ত তদারকির অভাব, দুর্বল আইন প্রয়োগ ও সীমিত প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এমনকি কখনো কখনো তদারকির ব্যর্থতা নিয়মে পরিণত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক সেরা অনুশীলনের উদাহরণ, দাতা সংস্থাগুলোর (বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক) পরামর্শ এবং অন্যান্য অংশীজনের মতামত বিবেচনায় নিয়ে ২০১৫ সালে ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট প্রণীত হয়। সেই সময়ে এ সংস্কার কার্যকর করার ক্ষেত্রে আইসিএমএবি কার্যকরী অংশীদার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘দেশে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের সংখ্যা মাত্র ২ হাজার ৫ জন, ভারতে রয়েছেন ৩ লাখ ৭৫,০০০ জন, পাকিস্তানে ১০ হাজার ৯৬ জন, শ্রীলঙ্কায় ৭ হাজার জন এবং নেপালে ৯ হাজার ৫২ জন। যা এ অঞ্চলের দেশগুলোর তুলনায় দেশে পেশাদার হিসাববিদদের ঘাটতির প্রমাণ দেয়। আর ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলে নিবন্ধিত ফার্মের সংখ্যা মাত্র ২০৯টি এবং আইসিএবি-এর শুধু ৫০০ জন প্র্যাকটিসিং সদস্য রয়েছেন। তাদের ওপর নিবন্ধিত ৩ লাখের বেশি প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষার দায়িত্ব রয়েছে (সক্রিয় কোম্পানির সংখ্যা কম হতে পারে)। যা বাংলাদেশের নিরীক্ষা পরিবেশ এর বর্তমান বাস্তব চিত্র স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।’

আইসিএমএবি’র প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার মতো দেশে একাধিক পেশাদার সংস্থাকে স্ট্যাটুটরি বা বিধিবদ্ধ নিরীক্ষার অধিকার দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রতিযোগিতা বাড়ে এবং একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ রোধ করা যায়। কানাডায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, সার্টিফায়েড জেনারেল অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং সার্টিফাইড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট- এ তিন পেশাদার সংস্থাকে একত্র করে সিপিএ গঠন করার উদাহরণও রয়েছে। যা সম্মিলিতভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি সফল সমন্বয় ও সহযোগিতার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে।’

তিনি বলেন, ‘এটি প্রমাণ করে যে, নির্দিষ্ট শর্তাবলির আওতায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ছাড়াও একাধিক পেশাদার সংস্থা স্ট্যাটুটরি বা বিধিবদ্ধ নিরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকে। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আইসিএবি-এর এর পাশাপাশি আইসিএমএ ছাড়া আর কোনো হিসাব-নিরীক্ষার প্রতিষ্ঠান নেই।’ 

তিনি বলেন, ‘আজ এটা সুস্পষ্ট, দেশে বছরে প্রায় ৩ লাখ নিবন্ধিত নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং আরো অনেক বেশি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানে নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। মাত্র ৫০০ জন প্র্যাক্টিসিং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং ২০৯টি ফার্ম দিয়ে তা কার্যকরভাবে সম্পন্ন করা একেবারেই অবাস্তব।’

তিনি জানান, ‘ফার্মগুলো শুধু নিরীক্ষা নয়, বরং ট্যাক্স ও ভ্যাট পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবাও দিয়ে থাকে। এত অল্প সংখ্যক ফার্ম এর মাধ্যমে জাতীয় প্রয়োজনে পর্যাপ্ত সেবা দিতে পারা এক প্রকার অসম্ভব। তাছাড়া নিরীক্ষা একটি বিশেষায়িত সেবা, যেখানে পরিমাণের চেয়ে গুণমানকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।’

মাহতাব উদ্দিন বলেন, ‘দেশের আর্থিক খাতের দুর্বলতা, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা দূরীকরণের ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কর্তৃক ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত  বাজেটে এফআরসি কর্তৃক সংজ্ঞায়িত পেশাদার অ্যাকাউন্ট্যান্ট দ্বারা লিমিটেড কোম্পানি ছাড়া সব প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষা করানোর বিধান অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছিল। স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় অর্থবিল থেকে সিএমএ’দেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে। জাতীয় স্বার্থে এবং আর্থিক সুশাসন নিশ্চিতের লক্ষ্যে তাদের সুযোগ দিয়ে বিধানটি পুনরায় বাজেটে অর্ন্তভুক্ত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

আইসিএমএবি

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন