ছবি: সংগৃহীত
করোনা মহামারির সময় পোশাক কারখানার চাকরি হারান অজোপাড়া গাঁয়ের নারী তহমিনা বেগম (৩০)। ওই সময় ঢাকা থেকে ফিরে আসেন গ্রামের বাড়িতে। এ সময় হতাশ হয়ে পড়েন। ঠিক তখনই স্বপ্ন দেখেন নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্যান্য নারীদের কর্মসংস্থানও। শুরু করেন দর্জির কাজ। প্রতিষ্ঠানের নাম দেন—‘দর্জি ভিলেজ’। এটি তহমিনাসহ ভাগ্য বদল করেছে শতাধিক নারীর।
সম্প্রতি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার আব্দুল্লাহরপাড়ায় দেখা গেছে—উদ্যোক্তা তহমিনার ‘দর্জি ভিলেজ’ এর কর্মকাণ্ড। সেখানে কারিগর ও হেলপার হিসেবে কাজ করছেন আরও বেশ কিছু নারী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, গাইবান্ধা সমন্বিত পল্লী দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্পের সহযোগিতায় কাজ শুরুর মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই তহমিনা প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘দর্জি ভিলেজ’ নামে একটি পোশাক তৈরির কারখানা। সাঘাটার বোনারপাড়া সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে জুমারবাড়ি ইউনিয়নে অবস্থিত আব্দুল্লাহরপাড়ায় বর্তমানে যেটি দর্জি ভিলেজ নামেই সমধিক পরিচিত। তহমিনা বেগমের এই কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১৫০ জন নারীর। সববয়সী মানুষের জন্য পাঞ্জাবী তৈরিতে বেশ সুনাম রয়েছে এই ভিলেজের।
জানা যায়, তহমিনা বেগম ঢাকা থেকে গ্রামে এসে হতাশ হয়ে পড়েন। তখনই আশার আলো দেখায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, সাঘাটা। সেখানে মাসব্যাপি নেন সেলাই প্রশিক্ষণ। এ কর্মসূচির আওতায় নিজের ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্টে পান ১৯ হাজার ৫০০ টাকা। আর এই টাকা থেকে কিনেন সাধারণ পোশাক সেলাই ও ওভারলকের মেশিন। এরপর তহমিনা বিআরবিডি’র গাইবান্ধা সমন্বিত পল্লী দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্পের থিম ‘এক পল্লী এক পণ্য’ মডেল কারখানা গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানটি থেকেই নেন ২ লাখ টাকা উদ্যোক্তা ঋণ। এরপর যেনো সেলাইয়ের মেশিনের মতোই ঘুরতে থাকে তাদের ভাগ্যের চাকা।
প্রথমে আব্দুল্লারপাড়া মহিলা পল্লী উন্নয়ন সমিতির ৩০ জন নিয়ে শুরু করেন এ কারখানা। পরে দক্ষিণ আব্দুল্লারপাড়া মহিলা পল্লী উন্নয়ন সমিতি ও পশ্চিম আমদিরপাড়া মহিলা পল্লী উন্নয়ন সমিতিসহ তিনটি সমিতির মোট দেড়’শ জন নারীদের নিয়ে ধুমছে চালাচ্ছেন এই পোশাক তৈরির ব্যবসা।
সরেজমিনে দেখা যায়, এই কারখানায় কাজ করছে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী মিম আক্তার। সে বলে, এখানে দৈনিক ৬০০ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক পেয়ে থাকি। ফলে পড়ালেখার খরচসহ নিজের আনুষঙ্গিক খরচের জন্য আর পরিবারের কাছে বলতে হয় না।
গৃহিনী লুবনা, সোনালী, নাসরিন বলেন, সকালে সংসারের কাজ করি। ছেলে-মেয়েকে স্কুলে পাঠাই। তারপর সবাইকে খাবার খাইয়ে এখানে সেলাইয়ের কাজ করতে আসি। এ থেকে মাসে ৮ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পাই।
উদ্যোক্তা তহমিনা বেগম বলেন, ঢাকা থেকে যখন বাড়ি ফিরলাম তখন হাতে যেমন টাকা ছিল না, তেমনি মাথার উপরও ছিলো না কোনো ছাদ। তারপরও আশা ছাড়িনি। প্রশিক্ষণ শেষে এলাকার বোন-ভাবী, চাচীদের নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করি। প্রথম প্রথম তেমন অর্ডার আসতো না। আমরা সকলে খুব পরিশ্রম করতাম। আমার স্বামী, শাশুড়ি, দুই ছেলেও আমাকে খুব মোটিভেশন দিয়েছেন। তবে, আমার স্বামীর অবদান অনেক। তিনিই আমদের এই কারখানার প্রচার-প্রসারে দৌড়-ঝাঁপ করেছেন। রংপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, ঢাকা, বগুড়াসহ এলাকার অনেক অর্ডারের কাজ আমরা সফলতার সাথে শেষ করেছি। আমাদের কাজ সবাই খুব পছন্দ করেন।
আরও পড়ুন: বাঁশ দিয়ে তৈরি পণ্য বিক্রি করে চলছে কয়েক হাজার পরিবার
তহমিনা বেগম আরও বলেন, শুরুতে তেমন আয় না হলেও এখন আমি কারখানার অন্য সদস্যদের পারিশ্রমিক দিয়েও মাসে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারছি। তবে, এখন আমি আরও বড় পরিসরে কারখানা দিতে চাই। হাজার হাজার নারীকে স্বাবলম্বী করতে চাই। এজন্য বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, গাইবান্ধা’র সহযোগিতা চান এই নারী উদ্যোক্তা।
এসি/ আই.কে.জে/
 
                      
                                                
                                             
                                         
                                                         
                                         
                                                         
                                                         
                                                         
                                                         
                                             
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                            