ছবি- সংগৃহীত
শুভ নববর্ষ। ইংরেজি আরেকটি বছর শুরু হলো। বিগত বছরটি অনেক ঘটন-অঘটন, ভালো-মন্দ দিয়ে শেষ হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেকে স্বপ্ন দেখেছিল, দেশটা অনেক ভালো হবে। ভালো হয়েছে কিনা, সেটা এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। গণ-অভ্যুত্থানে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ স্বতস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল সকল সম্প্রদায়ের মানুষ নিরাপদ থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিগত রাজনৈতিক সরকারগুলোর সময়কার ক্ষমতা পরিবর্তনের মতো এবারও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা নির্যাতনের মতো অনেক ঘটনা ঘটেছে। আগে রাজনৈতিক সরকারগুলো অভিযোগগুলোকে অতিরঞ্জিত বলে প্রচার করতো, এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি। ৫ই আগস্টের পর, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ বৃদ্ধি পায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং উপাসনালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব আক্রমণের পেছনে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উভয় কারণ কাজ করেছে।
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের উপর ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হলেও বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ সব সময় পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় রেখে চলেছে। এখানে ধর্মীয় চেতনার চেয়েও জাতিগত প্রভাব বেশি ছিল। জাতি হিসেবে বাঙালিত্বকে বেশি বড় করে দেখেছে। জনগণ মূলত সহাবস্থানের চেতনাকে ধরে রেখেছিল, সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত পরিচয়কে ধর্মীয় পার্থক্যের ওপর অগ্রাধিকার দিয়েছিল।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম ভাষাগত অধিকার এবং সাংস্কৃতিক স্বীকৃতির আকাঙ্ক্ষা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ধর্মীয় বিভাজনকে অতিক্রম করে সমতা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির ভিত্তিতে লড়াই করা হয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংবিধানে জাতীয় চার নীতির অন্যতম হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতাকে স্থান করে দেয়া হয়। সংবিধান সব নাগরিকের জন্য ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার নিশ্চিতকরণের অঙ্গীকার করা হয়।
বাংলাদেশকে ঐতিহ্যগতভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বলা হয়। বিভিন্ন ধরনের জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সহাবস্থানই এদেশের বৈশিষ্ট্য। সংবিধানেও দেশের প্রতিটি নাগরিকের ধর্মপালন, ব্যবসা, রাজনীতি, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে সমানাধিকারের কথা রয়েছে। তবে দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্যমান সম্প্রীতি-সৌহার্দের সম্পর্ক বিনষ্টের জন্য কিছু স্বার্থবাদী দুষ্কৃতকারী সুযোগের অপেক্ষায় ওঁৎ পেতে থাকে। সুযোগ পেলেই বিভিন্ন উছিলায় সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমন করে স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা চালায়। তবে এবার ব্যতিক্রম হলো, দলগুলো এসব দুর্বৃত্তদের প্রশ্রয় দিচ্ছে না।সবাই-ই শাস্তি দাবি করছে।
বছরের একদম শেষ দিকে নড়াইলের একটি ঘটনা মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছে। সদর উপজেলায় সংরক্ষিত ওয়ার্ডের এক হিন্দু মহিলা ইউপি সদস্যকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ করে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছিল। তিনি যখন চাঁদা দিতে অস্বীকার করেন তখন মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করা হয়।এমন নিষ্ঠুর বর্বরতা সভ্য সমাজে হতে পারে, তা কল্পনা করাও কঠিন। নিহতের ছেলে দোষীদের বিচার চেয়ে বলেন, আমার মায়ের সঙ্গে যারা এসব করছে, আমি সেই দোষীদের কঠিন বিচার চাই, ওদের ফাঁসি চাই। আমার মা যেন সুষ্ঠু বিচার পায়। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। এই বিচার দাবি শুধু তার সন্তানের একার নয়। এদেশের প্রতিটি সভ্য ও বিবেকবান মানুষের দাবি।
দুনিয়ার সব ধর্মই শান্তির কথা বলে। সব ধর্ম অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আদর্শকে অনুকরণীয় বলে ভাবে। বাংলাদেশের মানুষ প্রকৃত ধার্মিক বলেই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহনশীলতা আদর্শ অনুকরণ করে। নতুন বছরে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এক সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।নববর্ষের অঙ্গীকার, দেশটা হোক সবার।
আই.কে.জে/
খবরটি শেয়ার করুন