শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

থাকেন পতিত জমিতে, সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন রুমা চক্রবর্তী

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৫:৩০ অপরাহ্ন, ১৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সিলেট বিভাগ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রুমা রায় চৌধুরী (রুমা চক্রবর্তী)। 

আলোচনায় না থাকা রুমার নাম গত বুধবার (১৪ই ফেব্রুয়ারি) ঘোষণা হওয়ার পর সিলেটজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

রুমা চক্রবর্তী সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে অপরিচিত মুখ। তবে তিনি একাধিকবার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য থেকে শুরু করে এবার হতে যাচ্ছেন জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য।

রুমা চক্রবর্তী তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন। তিনি ১৯৯৭ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৯ নম্বর মুল্লাপুর ইউনিয়ন থেকে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর পর্যায়ক্রমে পৌরসভার কমিশনার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সংসদ সদস্যের এই মনোনয়ন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার সর্বোচ্চ প্রাপ্তি।

রুমার একটি বড় অপ্রাপ্তি নিজের স্বামীর ভিটাবাড়ি বেদখল হওয়া। ভিটাবাড়ি বেদখল থাকায় মন্দিরের পতিত জমিতে ঘর বানিয়ে অনেকটা আশ্রিত জীবনযাপন করছেন তিনি।

সংসদ সদস্য মনোনীত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (১৫ই ফেব্রুয়ারি) এ কথা বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রুমা।

তিনি বলেন, অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মতো তৃণমূলের একজন কর্মীকে জাতীয় সংসদে স্থান দিয়েছেন, এটাই আমার কাছে জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।

ঘর হারানোর প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় আমাদের সম্পত্তি একজন দখল করে নিয়ে যান। ভুয়া দলিল করে দখলদার ওই ব্যক্তি বলছেন আমার শ্বশুর বিক্রি করেছেন। কিন্তু আমার শ্বশুর বলেছেন বিক্রি করেননি। এটা নিয়ে সমস্যা চলছে। আমরা এখন একটি মন্দিরের পতিত জায়গায় ঘর বানিয়ে থাকছি। আমার নিজস্ব কোনো সম্পত্তি নেই। মুক্তিযুদ্ধের ভাতা পাই ২০ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন: সংরক্ষিত নারী আসনে আ.লীগের মনোনয়ন পেলেন যারা

রুমা তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, এখন আমার পরিকল্পনা হলো স্থানীয় যারা গরিব আছেন, তাদের স্বাবলম্বী করা। পাশাপাশি এখন যেহেতু পুরো বিভাগ নিয়ে কাজ করতে হবে, তাই আমার পরিকল্পনা হচ্ছে অবহেলিত নারী যারা আছেন তাদের নিয়ে কাজ করা। নারীরা যেন শিক্ষিত হয়ে চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়, সে বিষয়ে কাজ করব।

মুক্তিযুদ্ধে চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁর অস্থায়ী বেস হাসপাতালে নার্স হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন রুমা। ১৯৫৬ সালের ৫ই মার্চ সিলেট জেলার বিশ্বনাথ থানার কালিগঞ্জের মৌজপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা রবীন্দ্র রায় চৌধুরী ও মা সরুজু বালা রায় চৌধুরীর পাঁচ কন্যার মধ্যে তিনি চতুর্থ। শিক্ষাজীবনে এসএসসি পাস করেছেন তিনি।

রুমা ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০১০ সালের নভেম্বরে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার থানা মহিলা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৯ সালে মহিলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিয়ানীবাজার মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক কাজেও রুমার সরব বিচরণ রয়েছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক কাজের জন্য রুমা চৌধুরী বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন। উপজেলা পর্যায়ে জয়িতা, নারী উদ্যোগ কেন্দ্র (নউক) কর্তৃক ‘স্থানীয় সরকারে নারী অধিকার ও প্রতিনিধিত্ব শক্তিশালীকরণ প্রকল্প’ পদক পেয়েছেন। এ ছাড়াও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ থেকে সম্মাননাপত্রসহ স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

এসকে/ 

সংরক্ষিত নারী আসন রুমা চক্রবর্তী

খবরটি শেয়ার করুন