ছবি: সংগৃহীত
বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়েই ধানের ঘ্রাণে বাঙালির নবান্ন উৎসব চলমান। মাঠজুড়ে সোনালি স্বপ্ন। চলতি আমন মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টি ও পরে অতিবর্ষণের ফলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন কৃষকরা। কিন্তু সব শঙ্কা ছাপিয়ে এবার রাজশাহী জেলায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে বাজারে ধানের দামও ভালো। এতে খুশি চাষিরা। ঘরে ঘরে নবান্নের উৎসবেরও তাই ভিন্ন আমেজ।
বরেন্দ্র অঞ্চলের মাঠজুড়ে দলবদ্ধভাবে এখন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। মাঠে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। কেউ ধান কেটে জমি খালি করছেন, আবার কেউ মাড়াই শেষে ধান বস্তায় ভরে বাড়িতে তুলছেন। বাম্পার ফলনের আনন্দে কৃষকরা নতুন স্বপ্ন বুনছেন। কৃষকদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস দেখা যাচ্ছে। কারণ বাজারে এখন নতুন আমন ধানের মণ ১৩০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন তারা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। বাম্পার ফলন হয়েছেও। এখন ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে আমনের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৩ হাজার ৫৬৭ হেক্টর। আর আবাদ হয়েছে ৮৪ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ পাঁচ হাজার ৭৬২ মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত মোট আবাদের ২০ শতাংশের বেশি জমির ধান কর্তন করা হয়েছে।
এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮১ হাজার ৭৫৯ হেক্টর। আবাদ হয়েছিল ৮৩ হাজার ১৭৭ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল দুই লাখ ৯১ হাজার ৬২ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০ হাজার ৫০ হেক্টর। আবাদ হয়েছিল ৮০ হাজার ৮৩২ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছিল দুই লাখ ৮৬ হাজার ১৪৫ মেট্রিক টন।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষক আফজাল হোসেন জানান, তার আড়াই বিঘা জমিতে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিটি বিঘায় ২২ মণের বেশি ধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
পবা উপজেলার কৃষক বারিউল হক বলেন, এবার আমন ধানের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাম্পার ফলন পেয়েছি। আমার তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি, আর প্রত্যেক বিঘায় ২০ মণের বেশি ফলন হয়েছে। ধানের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। আশা করছি, এবার খরচ তোলার পর হাতে ভালো পরিমাণ টাকা থাকবে। এই ফলন আমাদের পরিবারের জন্য অনেক স্বস্তি এনে দিয়েছে।
ষড়ঋতুর বাংলাদেশে, বারো মাসে তেরো পার্বণ। হেমন্তের অগ্রহায়ণে নবান্ন উৎসব তারই একটি। বাঙালি জাতির হাজারো বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির মধ্যে রয়েছে নবান্ন উৎসব। নবান্ন শব্দের অর্থ ‘নতুন অন্ন’ বা ‘নব অন্ন’। নবান্ন উৎসব হলো নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে তৈরি করা চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। সাধারণত বাংলা অগ্রহায়ণ মাসে অর্থাৎ হেমন্তকালে আমন ধান পাকার পর এই নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বাংলার কোথাও কোথাও মাঘ মাসেও নবান্ন উদযাপনের প্রথা রয়েছে।
আরও পড়ুন: মুলা চাষে সফল মাগুরার বাবর আলী
বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিনেই ধান কেটে নবান্ন উৎসব পালন করে থাকেন। সেখানে নতুন ধানের চালের ক্ষীর, পায়েস, পিঠা পুলিরও আয়োজন করা হয়। আয়োজন করা হয় গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী কিছু খাবারের।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুরে জাতীয় পদক প্রাপ্ত কৃষক মনিরুজ্জামান মনিরের আয়োজনে নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠানে আদিবাসী মেয়েরা ধান কেটে বরেন্দ্র অঞ্চলের আদি কৃষির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি পালন করেন।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদের সভাপতিত্বে নবান্ন উৎসবে ধান কেটে উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের রাজশাহী (ভারপ্রাপ্ত) উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা।
এসি/ আই.কে.জে