সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৯ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহররম মাসের করণীয় ও বর্জনীয়

ধর্ম ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০২:১৩ অপরাহ্ন, ৮ই জুলাই ২০২৪

#

ছবি : সংগৃহীত

কিছু মাস, দিন ও মুহূর্ত আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন। মহররম তার মধ্যে একটি। সম্মানিত মাস হওয়ার পাশাপাশি এই মাসের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর মাধ্যমেই শুরু হয় হিজরি নববর্ষ। এই মাস অত্যন্ত ফজিলত ও গুরুত্বপূর্ণ। নবীজি সা. এ মাসকে আল্লাহর মাস হিসেবে অভিহিত করেছেন।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আসমান ও জমিন সৃষ্টির সময় থেকেই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা ১২। এর মধ্যে চারটি হলো সম্মানিত মাস। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। (সূরা তাওবা, আয়াত : ৩৬)

এই মাসটির সম্মান নির্ধারণ করে এক হাদিসে রাসূল সা. বলেছেন, তিনটি মাস হলো ধারাবাহিক—জিলকদ, জিলহজ ও মহররম, অন্যটি হলো রজব। (বুখারি, হাদিস : ৩১৯৭, মুসলিম, হাদিস : ১৬৭৯)

এ মাসের ফজিলতপূর্ণ একটি দিন হলো আশুরা বা মুহাররমের ১০ তারিখ। এ দিনটি ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালা এ মাসে বিশেষ কিছু ঘটনা ঘটিয়েছেন। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে এ মাসকে ঘিরে কিছু বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আছে সমাজে। এসব পরিহার করে এ মাসের জন্য হাদিসে বর্ণিত নফল আমলগুলো করা একজন মুমিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানে এ মাসের কিছু করণীয় ও বর্জনীয় তুলে ধরা হলো—

আরো পড়ুন : আজ পবিত্র হিজরি নববর্ষ, কী এর ইতিহাস ও তাৎপর্য

আশুরার রোজা রাখা

এ মাসের বিশেষ ফজিলতপূর্ণ দিন হচ্ছে দশম দিন, তথা আশুরা। আশুরার রোজা রাখা মুস্তাহাব আমল। আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘আশুরার এক দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে এই আশা করি যে তিনি এ রোজার অসিলায় বান্দার আগের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন। (মুসলিম, হাদিস : ১১৬২)

৯ বা ১১ মহররমে রোজা রাখা

শরিয়তে আশুরার রোজা দুটি। মহররমের ৯ ও ১০ তারিখ কিংবা ১০ ও ১১ তারিখ। তবে কোনো কোনো আলেম এ বিষয়ে বর্ণিত সব হাদিসের ওপর আমলের সুবিধার্থে ৯, ১০ ও ১১—এ তিন দিন রোজা রাখার কথা বলেন। 

ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, ‘তোমরা আশুরার দিন (মহররমের দশম দিবস) রোজা রাখো এবং তাতে ইহুদিদের বিরুদ্ধাচরণ করো। আশুরার আগে এক দিন বা পরে এক দিন রোজা রাখো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২১৫৪)

নফল রোজা রাখা

নফল রোজা রাখা এ মাসের অন্যতম আমল। নবীজি এই মাসের নফল রোজাকে সর্বোত্তম ঘোষণা করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, রমজানের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। (মুসলিম, হাদিস : ২৬৪৫)

তাওবা-ইস্তিগফার করা

নফল রোজার পাশাপাশি মহররমের বিশেষ আমল হলো তওবা ইস্তিগফার করা। কেননা রাসুল সা. ইরশাদ করেন, মহররম আল্লাহর মাস। এই মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহ তায়ালা একটি সম্প্রদায়ের তাওবা কবুল করেছেন। (আশা করা যায়) সেদিন অন্যান্য সম্প্রদায়ের তাওবাও কবুল করা হবে।(তিরমিজি, হাদিস : ৭৪১)

মুহাররম মাসের বর্জনীয় আমল

গুনাহ বর্জন করা

মহররম সম্মানিত চার মাসগুলোর একটি। এই মাসগুলোতে নিজেদের ওপর জুলুম করতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহর নাফরমানি ও অবাধ্যতার চেয়ে বড় জুলুম আর কী হতে পারে? আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এই চার মাসের মধ্যে তোমরা (গুনাহ করে) নিজেদের প্রতি জুলুম কোরো না।’ (সূরা তাওবা, আয়াত : ৩৬)

বিধর্মীদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করা

মহররমের দশম দিবসে ইহুদিরা রোজা রাখত। এ দিনটিকে তারা ঈদের মতো উদযাপন করত। তাই নবীজি ওই দিনের সঙ্গে আরেকটি রোজা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। 

হাদিস শরিফে এসেছে— ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, কিয়ামতের দিন সে ওই জাতির দলভুক্ত হবে। অর্থাৎ ওই দল জান্নাতবাসী হলে সে-ও জান্নাতবাসী হবে। আর ওই দল জাহান্নামবাসী হলে সে-ও জাহান্নামবাসী হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৩১)

মাতম মর্সিয়া পরিহার করা

হুসাইন রা.-এর শাহাদাতকে কেন্দ্র করে আশুরা নিয়ে বেশ বাড়াবাড়ি রয়েছে। আছে অনেক কুসংস্কার। অন্যতম একটি হলো—মাতম মর্সিয়া গাওয়া। মর্সিয়া মানে নবী দৌহিত্রের শোক প্রকাশে নিজের শরীরে আঘাত করা ও জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা। ইসলামে এটা নিষিদ্ধ। নবী করিম (সা.) এ ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি (শোকে-দুঃখে) চেহারায় চপেটাঘাত করে, জামার বুক ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহিলি যুগের মতো হা-হুতাশ করে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ১২৯৭)

আশুরাকে ‘কারবালা দিবস’ মনে না করা

আশুরা মানেই কারবালা নয়। আশুরার মর্যাদা ও ঐতিহ্য ইসলামপূর্ব যুগ থেকেই স্বীকৃত। ১০ মহররম কারবালার প্রান্তরে নবীজি (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হুসাইন (রা.) ও তাঁর পরিবারের মর্মান্তিক শাহাদাতের ঘটনাটি তাৎপর্যপূর্ণ আশুরার সঙ্গে মিলে যাওয়া কাকতালীয়। হৃদয়বিদারক এ ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে একশ্রেণির লোকের শোক প্রকাশের অযৌক্তিক নানা আয়োজনের কারণে আশুরা ও কারবালাকে একাকার মনে করে থাকে অনেকে। অথচ জাহেলি যুগেও আশুরার রোজার প্রচলন ছিল। 

ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসুল সা. হিজরত করে মদিনায় এলেন এবং তিনি মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিন রোজা রাখতে দেখলেন। তাদের এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলল, এটা সেই দিন, যেদিন আল্লাহ মুসা আ. ও বনি ইসরাঈলকে মুক্তি দিয়েছেন এবং ফেরাউন ও তার জাতিকে ডুবিয়ে মেরেছেন। তাঁর সম্মানার্থে আমরা রোজা রাখি। তখন রাসূল সা. বলেন, ‘আমরা তোমাদের চেয়েও মুসা আ.-এর বেশি নিকটবর্তী। এরপর তিনি এ দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৪৮) 

এস/ আই.কে.জে/


আমল ইবাদত আশুরা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন