শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আরব আমিরাতে পৌঁছেছে এমভি আবদুল্লাহ

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৫:৪২ অপরাহ্ন, ২১শে এপ্রিল ২০২৪

#

ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

মুক্তিপণ দিয়ে সোমালিয় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে। 

রোববার (২১শে এপ্রিল) বিকেল ৪টা নাগাদ ফুজাইরা উপকূল এবং হরমুজ প্রণালি হয়ে আমিরাতের বহির্নোঙরে পৌঁছে। কেএসআরমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম এ তথ্য জানান। 

তিনি বলেন, রোববার বিকালে আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছানোর পরের দিন সোমবার কয়লা খালাসের জন্য জাহাজটিকে জেটিতে ভিড়ানো হবে। জাহাজটি ভেড়ার পর আল হারামিয়া বন্দরে চার থেকে পাঁচদিন অবস্থান করবে। তবে সংশ্লিষ্ট বন্দরের বার্থিং শিডিউল অনুযায়ী জাহাজজট কিংবা অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটলে বার্থিংয়ে ২৪ থেকে ৩২ ঘণ্টা দেরি হতে পারে। 

এদিকে জাহাজ থেকে দুই জন নাবিক বিমানে করে দেশে ফিরবেন। বাকি ২১ জন নাবিক এমভি আবদুল্লাহ জাহাজযোগে দেশে ফিরবেন। সেক্ষেত্রে তাদের সময় লাগবে ২৫ থেকে ২৬ দিন। নাবিকদের নিজ নিজ ইচ্ছায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

নাবিকেরা হলেন—জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুরুদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।

মেহেরুল করিম আরও বলেন, দীর্ঘ ৩১ দিন জিম্মি থাকার পর গত ১৩ই এপ্রিল শনিবার জাহাজটি মুক্তি পায়। এরপর সোমালিয়ার ডেরা থেকে আরব আমিরাতের উদ্দেশে রওনা হয় জাহাজটি। জাহাজটি শনিবার (২০শে এপ্রিল) সন্ধ্যার পর দেশটির জলসীমায় প্রবেশ করে। জাহাজটি ঘণ্টায় ৯ দশমিক ৩ কিলোমিটার গতিতে রোববার বিকেলে দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে।

ভিডিও বার্তায় জাহাজের মাস্টার আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, জাহাজটিতে ৩১ দিন ধরে থেকে অনেকটা নোংরা করে ফেলেছে জলদস্যুরা। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে জাহাজের অবস্থা এমন করেছে যে জাহাজের ভেতরের চেহারাই পাল্টে গেছে। এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা সেই জাহাজ চলন্ত অবস্থায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছেন। 

তিনি জানান, নাবিকদের স্বাস্থ্য ও মানসিক অবস্থা ভালো রয়েছে। জাহাজটিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দরে যাত্রা সম্পন্ন করার জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি তেল, পানি ও খাদ্য মজুদ ছিল। দেশে নিরাপদে পৌঁছার জন্য তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।

গত ১২ই মার্চ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে সোমালিয়ার দস্যুরা ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি জিম্মি করে। দেশটির উপকূল থেকে ৫৭৬ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগর থেকে জাহাজটি ছিনতাই করা হয়। ছিনতাইয়ের ৯ দিনের মাথায় দস্যুরা প্রথম মালিকপক্ষের কাছে মুক্তিপণের দাবি জানায়। এরপর শুরু হয় দর-কষাকষি। 

পরে ৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ৩১ দিন পর, অর্থাৎ ৩২ দিনের জিম্মিদশা থেকে গত ১৩ই এপ্রিল শনিবার দিবাগত রাতে জাহাজটি মুক্ত হয়। মুক্ত হওয়ার পরই ১ হাজার ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে থাকা আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয় জাহাজটি। জাহাজটিতে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা রয়েছে। 

আরও পড়ুন: রোববার বিকেলে দুবাই পৌঁছাবে এমভি আবদুল্লাহ

এসময় জাহাজটিকে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুইটি যুদ্ধজাহাজ ও তিনটি টহল জাহাজ ঝুঁকিপূর্ণ জলসীমা পার করে দেয়। এর আগে ২০১০ সালের ৫ই ডিসেম্বর আরবসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে কেএসআরএম গ্রুপের এস আর শিপিং লিমিটেডের আরেকটি জাহাজ এমভি জাহান মণি। 

ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ই মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ই মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তবে এবার মাত্র ৩২ দিনেই এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটিকে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করা হয়েছে। 

এসকে/ 

দুবাই এমভি আবদুল্লাহ

খবরটি শেয়ার করুন