শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমেরিকা বাংলাদেশের জনগণের পাশে রয়েছে : পিটার হাস

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন, ১৬ই মার্চ ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, আমার দেশের ষোড়শ প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন একবার বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতের সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো, এটা একদিন একদিন করে আসে।’ বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত হিসেবে তৃতীয় বছর শুরুর সময়ে এ কথাগুলোকে আমার সত্যি বলে মনে হয়। প্রতিদিন এ দেশের সম্ভাবনা, জনগণের শক্তি ও সহনশীলতা এবং এর প্রাণবন্ত সুশীল সমাজ আমাকে মুগ্ধ করে। যেমনটা আমি গত বছর বলেছিলাম, বাংলাদেশ তার জন্মলগ্ন থেকে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। ভবিষ্যতের দিকে তাকালে– এমন এক ভবিষ্যৎ, যা এক দিন এক দিন করে এগিয়ে আসে। আমি এই দেশের সামনে সম্ভাবনা দেখতে পাই। তবে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জও চোখে পড়ে। ২০২৪ সালের ৭ই জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের আগে আমেরিকা প্রকাশ্যে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে কথা বলেছিল, যা বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করবে। কিন্তু তা ঘটেনি। আমেরিকা এখনও বাংলাদেশ ও সর্বত্র গণতন্ত্রের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে। সহজ করে বলতে গেলে, আমরা বিশ্বাস করি, দেশের মানুষের কল্যাণে গণতন্ত্র হলো স্থায়ী অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের সর্বোত্তম উপায়।

আমরা সাহসী সুশীল সমাজ ও মানবাধিকার কর্মীদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখব। যেসব গণমাধ্যমকর্মী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিয়মতান্ত্রিক দমন ও হয়রানির শিকার হন, তা অবসানের আহ্বান আমরা অব্যাহত রাখব। আমরা চাপ অব্যাহত রাখব, যাতে বাক্‌ ও সমাবেশের স্বাধীনতা বজায় থাকে এবং আমরা আরও উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সমাজের পথ সুগম করতে অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক সংলাপের আহ্বান জানানো অব্যাহত রাখব।

একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও আমেরিকার অভিন্ন লক্ষ্য রয়েছে এমন ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করব। এ বিষয়গুলোতে বাংলাদেশ যে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে, আমেরিকা ঠিক একই গতিতে এগিয়ে যেতে চায়। আমি এর মধ্যে নতুন সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছি, যেখানে আমরা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ সামাজিক ও পরিবেশগত আন্তঃসংযুক্ত বিষয়গুলোর কথা বলা যায়, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার টিম এবং আমি জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশেষ করে পরিচ্ছন্ন শক্তিতে রূপান্তর বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করা অব্যাহত রাখতে চাই। জলবায়ু পরিবর্তন সবাইকে প্রভাবিত করে– আমেরিকান ও বাংলাদেশি সবাইকে এবং আমি আশা করি, আমাদের যে চমৎকার সহযোগিতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের জনগণ ১০ কোটিরও বেশি কোভিড টিকা পেয়েছে, তা আরও বৃদ্ধি পাবে। আমাদের দুই দেশ এবং এ অঞ্চলের মধ্যে নিরাপত্তার সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের সামরিক বাহিনী (বা সশস্ত্র বাহিনী) ও আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধ্বংসাত্মক প্রভাব কমাতে একসঙ্গে কাজ করার সক্ষমতা বাড়ানোর আরও উপায় খুঁজে বের করছেন। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রেও আমরা ভূমিকা রাখতে পারব বলে আশা করছি।

আরো পড়ুন: অগ্নি দুর্ঘটনাসহ সব সমস্যা সমাধানে দরকার জনসংখ্যা হ্রাস

শ্রমের ক্ষেত্রে আমেরিকার বিশ্বাস, বাংলাদেশের আইন, নীতি এবং অনুশীলনকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন একটি বৈশ্বিক শ্রম কৌশল নির্ধারণ করেছেন, যা বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকারকে অগ্রাধিকার দেয়। বাংলাদেশকে এমন আইন ও নীতি গ্রহণে উৎসাহ দিতে এই কৌশল আমাদের পরিচালিত করবে, যার ফলে শ্রমিকরা নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক সংগঠন তৈরি ও যোগদান করতে পারবেন। সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন সহায়তা প্রদানসহ শ্রম অধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে সমর্থনে আমেরিকা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আমেরিকা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগকারী, পাশাপাশি বাংলাদেশের পণ্য ও পরিষেবা রপ্তানির জন্য একক বৃহত্তম বাজার। পারস্পরিক সুবিধার জন্য আমরা আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে কার্যকর করতে পারি এবং করা উচিত।

পরিশেষে, গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে টেকসই মানবিক সহায়তা প্রদান এবং মিয়ানমারের নিরাপদ পরিস্থিতি সাপেক্ষে সবার জন্য নিরাপদ, স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবর্তনে আমরা সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাব।

ভবিষ্যৎ একদিন একদিন করে আসে এবং প্রতিটি দিনই নতুন সুযোগ নিয়ে আসে। আপনি যখন সেই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, তখন আমেরিকা বাংলাদেশের জনগণের পাশে রয়েছে এবং আমরা আপনার এই যাত্রায় সবসময় আপনাদের সমর্থন করব।

এসি/ আই. কে. জে/ 

আমেরিকা পিটার হাস

খবরটি শেয়ার করুন