ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমেরিকার নতুন প্রশাসনের সঙ্গে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের অন্তর্বর্তী সরকারের দৃশ্যত কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালো। ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে ঢাকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ধারবাহিকতায় কোনো পরিবর্তন দৃশ্যমান নয়। এমন পরিস্থিতিতে আমেরিকার গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্য নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
তুলসী গ্যাবার্ড ভারতের নয়াদিল্লি সফরে সেখানকার এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের’ অভিযোগ তুলেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার তার বক্তব্যকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে।
আমেরিকার ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের প্রধানের এমন বক্তব্য দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে, নাকি এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি অংশ- এসব প্রশ্নও এখন সামনে আসছে।
সাবেক কূটনীতিকদের কেউ কেউ মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের মতোই আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এখনও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। তুলসী গ্যাবার্ডের এমন বক্তব্যের কারণ হতে পারে, আমেরিকার অন্যতম টার্গেট বাংলাদেশে চীনের প্রভাব ঠেকানো।
চীন যেন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের আমলের মতো প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সেজন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনকে ‘এক ধরনের চাপে’ রাখার লক্ষ্যে তুলসী গ্যাবার্ড ওই মন্তব্য করে থাকতে পারেন। তবে বর্তমান পটভূমিতে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যকে অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত বলে তাদের অভিমত।
আমেরিকায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির মনে করেন, ‘বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে, এমন একটা ধারণা নতুন করে সামনে এসেছে। এর সঙ্গে এখন প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরকে ঘিরে বাংলাদেশকে আমেরিকার আড়চোখে দেখার সুযোগ করে দিতে পারে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যালেন্স (ভারসাম্য) রক্ষা করে এ সফরকে কীভাবে ব্যবহার করে, তার ওপরও বিষয়টা নির্ভর করে।’
সাবেক এ কূটনীতিক বলেন, ‘আসলে আমেরিকার অন্যতম টার্গেট হচ্ছে চীনের প্রভাব ঠেকানো। দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবক্ষেত্রেই চীনের প্রভাব বাড়ছে। সেজন্য চীনের প্রভাব ঠেকাতে ভারতকে সহায়ক শক্তি হিসেবে দেখছে আমেরিকা। ফলে ভারতের অবস্থানকেও আমেরিকা অনেক ক্ষেত্রে সমর্থন করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমেরিকার গোয়েন্দা প্রধানের বক্তব্যকে অন্য কোনোভাবে ব্যাখ্যা না করে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে প্রমাণ করতে হবে। সেই সাবধানবার্তা তুলসী গ্যাবার্ডের ভারতে করা মন্তব্যে এসেছে বলেই আমার ধারণা।’
প্রসঙ্গত, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী সপ্তাহে চীন সফরে যাবেন। সফরে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দেওয়ার আয়োজন করতে যাচ্ছে দেশটি। এটি মূলত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে চীনের কূটনৈতিক স্বীকৃতি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের প্রচেষ্টার অংশ।
এটি এমন এক সময়ে ঘটতে যাচ্ছে, যখন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক নিবন্ধে এসব কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী ২৬শে মার্চ প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
এইচ.এস/