কুরআনিক শিক্ষা, ইসলামি তত্ত্ব ও আরবি ভাষা শিক্ষা দিত আইইএসএইচ। ছবি: এএফপি
ফ্রান্সের কেন্দ্রীয় বুর্গান্ডি অঞ্চলে অবস্থিত ইউরোপীয় সামাজিক বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট (আইইএসএইচ) বন্ধ হয়ে গেছে। মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এবং সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থায়নের আশঙ্কায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খবর দ্য ন্যাশনালের।
আমিরাত-ভিত্তিক দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর নেতৃত্বাধীন সরকার মুসলিম ব্রাদারহুড-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটেই আইইএসএইচ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠান কুরআনিক শিক্ষা, ইসলামি তত্ত্ব ও আরবি ভাষা শিক্ষা দিত। এখানে প্রতি বছর প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ১৭ই জুন প্রতিষ্ঠানটি ভেঙে ফেলার নোটিশ পাঠায় এবং তাদের সম্পদ জব্দ করে। এরপরই আইইএসএইচ-এর পরিচালনা পর্ষদ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রতিষ্ঠানটির একটি অভ্যন্তরীণ সূত্র বলেছেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের প্রচার, নারীদের অবমাননা এবং শরিয়া আইন প্রয়োগের মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। মূলত কিছু বই দেখে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অথচ আমরা সেসব বই বিশ্লেষণ করে ব্যাখ্যা করি, কোনটি সমাজে গ্রহণযোগ্য আর কোনটি তা নয়।’
আইইএসএইচ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ব্রাসেলসভিত্তিক কাউন্সিল অব ইউরোপিয়ান মুসলিমস-এর কেনা জমিতে। ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এটিকে ইউরোপে মুসলিম ব্রাদারহুডের অন্যতম প্রভাবশালী কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়। রিপোর্টে আইইএসএইচকে ইউরোপজুড়ে অনুরূপ প্রতিষ্ঠান গঠনের ‘পাইলট মডেল’ বলা হয়েছে।
প্যারিসের উপশহর সাঁ-দেনিতে অবস্থিত আরেকটি আইইএসএইচ শাখা জানিয়েছে, তাদের কার্যক্রম এ প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় আইইএসএইচ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফ্রান্সে মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কোনো প্রতিষ্ঠান আর অবশিষ্ট রইল না বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কাতার থেকে অর্থায়নের সন্দেহে পুলিশের অভিযান চালানো হয় আইইএসএইচ-এ। সেই সময়ই তাদের সব কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভ জব্দ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সব সরঞ্জাম নিয়ে গেছে। এখন বন্ধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছি। সেপ্টেম্বর থেকে আর পাঠদান হবে না।’
এ ঘটনা এমন এক সময় ঘটল, যখন মাখোঁ সরকার ফ্রান্সে মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রভাব প্রতিরোধে নতুন পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে দাতব্য তহবিল বন্ধ, সম্পদ জব্দ করার নীতি এবং বিদেশে অর্থ পাঠানোতে বিধিনিষেধ। এসব পদক্ষেপ কীভাবে প্রয়োগ হবে, তা এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।
ন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ২০২০ সালে দেশীয় ইমাম প্রশিক্ষণের কথা বললেও কার্যত তার বাস্তবায়ন হয়নি। আইইএসএইচ-এর তথ্য অনুযায়ী, তাদের শিক্ষার্থীদের ৮০ শতাংশ ফ্রান্সের, বাকি অংশ বেলজিয়াম, জার্মানি ও স্পেন থেকে আসে।
অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার একটি নোটে আইইএসএইচ-এর বিরুদ্ধে মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে শক্তিশালী সংযোগ এবং ২০২১ সালে একজন সৌদি দাতার কাছ থেকে ৪০ হাজার ইউরো গ্রহণের অভিযোগ তোলা হয়েছে। তাদের কিছু বইয়ের মধ্যে জিহাদের আহ্বান, নারী নির্যাতনের বৈধতা এবং ইহুদি বিদ্বেষ প্রচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও দাবি করা হয়।
খবরটি শেয়ার করুন