ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) দেশের ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে রোববার মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের অবমাননা করা হয়েছে দাবি করে বিক্ষোভ করা হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ হয়েছে। এ সময় শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগানে মুখর করে তোলেন ক্যাম্পাস।
রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের পাঁচ হলের তালা ভেঙে ছাত্রীরা এবং ছেলেদের সব হল থেকে ছাত্ররা মিছিল নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন। রাত ১২টার দিকে সেখানে তারা সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদী সমাবেশ করেন।
এর আগে সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর পর প্রতিটি হলে ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’ স্লোগান ওঠে। দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে এই স্লোগান।
রাত ১১টার দিকে শামসুন্নাহার হলের ছাত্রীরা হল গেটের তালা ভেঙে মিছিল নিয়ে বের হন। এর পর বের হন রোকেয়া হলের ছাত্রীরা। স্লোগানের তালে তালে তারা থালা-বাসন, চামচ নিয়ে শব্দের দ্যোতনা সৃষ্টি করেন এবং মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এর পর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা হল, কুয়েত-মৈত্রী হল, সুফিয়া কামাল হলের মেয়েরাও বেরিয়ে আসেন। ছেলেদের হলগুলো থেকেও বের হয়ে আসেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় খবর পেয়ে হল গেটে তালা দিয়ে শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন হল ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। তবে স্রোতের মতো নেমে আসা শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে পারেননি তারা। জানা যায়, বিজয় একাত্তর হল, মাস্টার দা সূর্যসেন হল, এফ রহমান হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলসহ বিভিন্ন হলে বাধা দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা ‘এক দুই তিন চার, তুমি আমি রাজাকার’, ‘তুমি নও আমি নই, রাজাকার রাজাকার’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা দেশটা কারও বাপের না’– ইত্যাদি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: জরিমানার পৌনে ১৪ লাখ টাকা পরিশোধ করলো ঢাকা ওয়াসা
পরে রাত দেড়টার দিকে মিছিল নিয়ে মেয়েরা নিজ নিজ হলে চলে যান। অন্য শিক্ষার্থীরাও হলে চলে যান। এর পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতি চাই না। শান্তিপূর্ণ অবস্থা চাই। আমরা সুশৃঙ্খলভাবে নিজেদের হলে যাব।’
সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলা হয়েছে। এটা আমাদের আহত করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে যারা রাজাকার তাদের সবাই ঘৃণা করে। আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আন্দোলনকারীদের প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য এসেছে। প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।
রোববার (১৪ই জুলাই) সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে? তা তো আমরা দিতে পারি না।’
এসি/কেবি