রবিবার, ৯ই নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৫শে কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** জীবনের ‘শেষ নির্বাচন’ উল্লেখ করে যে বার্তা মির্জা ফখরুলের *** চলতি সপ্তাহে দাম না কমলে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন *** পদত্যাগ করবেন উপদেষ্টা আসিফ, ঢাকা থেকেই নির্বাচনের ঘোষণা *** পুলিশের উদ্যোগে ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল শিক্ষার্থীদের ‘শান্তিচুক্তি’ *** নতুন বেতনকাঠামোর সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচিত সরকার: অর্থ উপদেষ্টা *** ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ *** ঢাকা-১৭ আসনে লড়বেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের ছেলে *** রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ ১৩ই নভেম্বর থেকে *** স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সাবেক দুই ব্যক্তিগত কর্মকর্তার সম্পদের হিসাব চাইল দুদক *** অনুষ্ঠানের মাঝেই ‘ঘুমিয়ে’ পড়লেন ট্রাম্প, সামাজিক মাধ্যমে ছবি ভাইরাল

প্রধান উপদেষ্টা সম্মানজনক বিদায় নিতে চাচ্ছেন, ধারণা নূরুল কবীরের

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ১০:০০ অপরাহ্ন, ১৮ই আগস্ট ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

ইংরেজি পত্রিকা নিউ এজের সম্পাদক ও দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদের সহসভাপতি নূরুল কবীর বলেছেন, সরকারপ্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে একটা সম্মানজনক বিদায় নেওয়ার জন্য আগ্রহী। জাতীয় নির্বাচন যাতে ফেব্রুয়ারির মধ্যে সংগঠিত না হয়, এর জন্য বহু ধরনের রাজনৈতিক শক্তি সক্রিয় ছিল, হয়তো এখনো আছে।

তিনি বলেন, সরকারের ভেতরেও যারা ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের বিরোধিতা করতেন, তারা ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন যে, তাদের পক্ষে সরকারকে আরো দূরবর্তী পর্যায়ে টেনে নেওয়া সম্ভব হবে না। কেন তিনি এমন ধারণা করছেন, এর পক্ষে কারণগুলোও বিশ্লেষণ করেছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামী কেন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের পক্ষে নয়, এ বিষয়েও বক্তব্য দেন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের আটজন উপদেষ্টার দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য থাকার দাবি করে সাবেক এক সচিবের সম্প্রতি দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গেও নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন নূরুল কবীর।

গতকাল রোববার (১৭ই আগস্ট) বেসরকারি টিভি চ্যানেল আইয়ের দর্শকনন্দিত টকশো তৃতীয় মাত্রা'র আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, গভর্নেন্সের দিক থেকে কোনো গুণগত উত্তরণ সংঘটিত হয়নি বলে যারা অতি উৎসাহী হয়ে সরকারকে আরো প্রলম্বিত করে সরকারের ভেতরে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে চান, তাদের উৎসাহে কিছুটা ভাটা পড়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গভর্নেন্সের প্রশ্নে সরকারের কোনো কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে না। ভয়াবহভাবে অন্যায় এবং অবৈধভাবে চাঁদাবাজি চলছে।

চলতি বছরের মে মাসে দৈনিক প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নূরুল কবীর বলেছিলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যথাযথ নেতৃত্ব না থাকায় রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে। কয়েক উপদেষ্টার সহযোগিতায় কোনো কোনো প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক শক্তির বিকাশের পথ প্রশস্ত হচ্ছে। গত ১৮ই মে প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণে তার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়।

তৃতীয় মাত্রায় দেওয়া নূরুল কবীরের বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ, বা নির্বাচিত অংশ একই নামের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা হয়েছে। আজ সোমবার (১৮ই আগস্ট) রাত নয়টায় সুখবর ডটকমের এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভিডিওটি দেখা হয়েছে সাড়ে ৫০ হাজার বারের বেশি। এতে মন্তব্য এসেছে ২০৩টি। প্রসঙ্গত, বিশিষ্ট সাংবাদিক নূরুল কবীরের লেখা দ্য রেড মাওলানা, বার্থ অব বাংলাদেশ, ডিপোজিং অব আ ডিক্টেটর শিরোনামের বইগুলো পাঠকসমাজে আলোচিত।

তৃতীয় মাত্রায় নূরুল কবীর বলেন, এই সরকার (অন্তর্বর্তী সরকার) প্রতিষ্ঠার পেছনে যেই শক্তিগুলো রাজনৈতিক ন্যায্যতা জুগিয়েছিল, সেগুলো হচ্ছে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), যারা ইন্ডিভিজুয়ালি গণঅভ্যুত্থানের সামনের সারিতে ছিলেন, বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দল। তাদের সমর্থনে গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতেই বর্তমান সরকারের প্রধান নিযুক্ত হন। তিনি পরে অন্যদের তার উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করেন।

তিনি বলেন, এই ঘটনাটা স্মুথলি সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে সেনা নেতৃত্ব ফ্যাসিলিটেট করেছিল। ফলে এই সরকারের রাজনৈতিক ন্যায্যতার পেছনে এই ফ্যাক্টরসগুলো এবং আমরা জনগণেরও কোনো অংশ কোনো গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়কেও এটার বিরোধিতা করতে দেখিনি। এই সরকারের একটা সার্বজনীন রাজনৈতিক ন্যায্যতা তৈরি হয়েছিল। এর ভিত্তিতেই সরকার তাত্ত্বিক অর্থে প্রতিষ্ঠিত আছে।

তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সরকার তিনটি কাজের কথা বলেছিল। একটা হচ্ছে, গণতান্ত্রিক সংস্কার, রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে গভর্নেন্স। আরেকটা হচ্ছে, গণঅভ্যুত্থানের সময় (২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে) বিশেষত রাষ্ট্রের দিক থেকে তৎকালীন আওয়ামী লীগের সরকারের নেতৃত্বে যে খুন-খারাবি হয়েছে, আহত-নিহত হয়েছেন, ওই অপরাধীদের বিচার নিষ্পন্ন করা। তিন নম্বর হচ্ছে, এ দুটি কাজ এগিয়ে গেলে একটা যথার্থ গ্রহণযোগ্য সংসদ  নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে যাওয়া।

তিনি বলেন, (৫ই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর) তখনকার আবেগ এবং ইফোরিয়া এই পর্যায়ে পৌঁছেছিল, যে রাজনৈতিক দলগুলোর সেই দিন এটা মনে করবার জন্য কেউ ছিল না যে, এই সরকারের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) মেয়াদ কতদিন? মেয়াদের ব্যাপারটা তখন উহ্য থেকে যায়। দিন যত যেতে থাকে, রাজনৈতিক দলগুলো যখন তার ক্ষমতায় যাওয়ার কথা মনে পড়ে, তখন তারা নানা পর্যায়ে কখনো উপযুক্ত সময়ের মধ্যে, কখনো দ্রুততর সময়ের মধ্যে, এসব দাবির পর ফেব্রুয়ারিতে (২০২৬ সালের) নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। 

নূরুল কবীর বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে এত তাড়াতাড়ি মানে ফেব্রুয়ারির মধ্যে সংগঠিত না হয়, তার জন্য বহু ধরনের রাজনৈতিক শক্তি সক্রিয় ছিল। হয়তো এখনো আছে। কিন্তু সরকারের কতগুলো গভর্নেন্স ফেইলিউরের জন্যে সরকারের ভেতরেও যারা নির্বাচনের বিরোধিতা করতেন, তারা আমার ধারণা, ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন যে, এটা তাদের পক্ষে আরো দূরবর্তী পর্যায়ে টেনে নেওয়া সম্ভব হবে না। 

এর কারণ ব্যাখ্যা করে নূরুল কবীর বলেন, কতগুলো লক্ষণ আমরা দেখি, তেমন কোনো কিছুই পরিবর্তন হয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বরং গভর্নেন্সের প্রশ্নে বলছি, সরকারের কোনো কার্যকারিতা আমরা দেখি না। ভয়াবহভাবে অন্যায় এবং অবৈধভাবে চাঁদাবাজি চলছে।

তিনি বলেন, এই কয়েক মাসে ১০০ এর বেশি ঘটনা ঘটেছে, যেটা বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। পাবলিকের মধ্যে সরকার, রাষ্ট্র, প্রশাসন এই ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সরকারের আমলের (২০২৪ সালের ৫ই আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত) মতো সেই উত্তেজনা উৎসাহ তাদের কমেছে। সামাজিকভাবে ল এন্ড অর্ডার না থাকার কারণে রাস্তাঘাটে পিটিয়ে মারা, মব সৃষ্টি করে পিটিয়ে মারার ঘটনা অসংখ্য ঘটেছে।

তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সরকার তুলনামূলকভাবে একটা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছিল। এর বাইরে এই সমাজের মধ্যে ঘুষ, দুর্নীতি বেড়েছে। উপদেষ্টাদের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া নিয়ে সাবেক এক সচিবের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি মনে করি যে, সাবেক সচিব যিনি নিজে জাতীয়তাবাদী দলের একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতাবান ব্যক্তি, তার মতো মানুষের প্রমাণ ছাড়া ঢালাওভাবে কতগুলো নাম উচ্চারণ করা ঠিক হয়নি। তার কাছে প্রমাণ থাকলে প্রমাণগুলো সমাজের সামনে উপস্থিত করা তার নৈতিক দায়িত্ব। নতুবা আমরা এটা একটা রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবে দেখব।

নূরুল কবীর বলেন, কিছু কিছু ঘটনায় দুর্নীতির বিষয়ে দুই-তিনজন মন্ত্রী জড়িয়ে পড়েছেন। সে ব্যাপারে তারা (সরকার) কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে এবং স্বীকার-অস্বীকার কিংবা মাঝামাঝি জায়গায় তারা একটা অবস্থান নিয়েছে। দুই তিনজনের ব্যাপারে এখানে পরিষ্কার আরো অভিযোগ আছে।

তিনি বলেন, প্রশ্ন হচ্ছে যে, গভর্নেন্সের দিক থেকে কোনো গুণগত উত্তরণ সংঘটিত হয়নি বলে যারা অতি উৎসাহী ছিলেন, সরকারকে আরো প্রলম্বিত করে সরকারের ভেতরে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে, তাদের উৎসাহে কিছুটা ভাটা পড়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, সরকারপ্রধান ড. ইউনূসের ইন্টেনশন হলো, ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন দিয়ে আসলেই একটা সম্মানজনক বিদায় নেওয়া।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর দিক থেকে জামায়াত এবং এনসিপি আরো সময় পেলে তাদের দুটি উপকার হতো বলে তারা বিশ্বাস করে। একটা হচ্ছে, বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে কিছু উদ্যোগ এবং নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় তারা যে অন্যায়, চাঁদাবাজি, জবর-দখলের মধ্যে গেছে, এটা বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর, রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এই ক্ষতিগুলোতে জামায়াত এবং পরবর্তী নির্বাচনে যারা বিএনপির রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, তারা খুশি।

তার মতে, বিএনপি যত অজনপ্রিয় হবে, তাদের আসন সংখ্যা তত বৃদ্ধি পাবে- এই ধারণা থেকে এবং তারা নিজেদের আরো সংগঠিত করার সময় পাবেন। এই দুটি রাজনৈতিক সংগঠনের এ রকম একটা আকাঙ্ক্ষা বরাবরই ছিল এবং থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। সেই ক্ষেত্রে এই সমস্ত বাধাও আমার মনে হয় শেষ পর্যন্ত ড. ইউনূসের দৃঢ়তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে কার্যকর হবে না।

জে.এস/

গণমাধ্যম সাংবাদিক নূরুল কবীর

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250